।। প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —৭
এই তো সেদিন
সোমা চক্রবর্তী
হাঁটু পর্যন্ত জল ঠেলে বাবলা, বাঁধের রাস্তায় উঠলো পল্টু,সুজয়, আর অংশুর সাথে। কদিন ধরেই প্রচন্ড বৃষ্টি, সাথে ঝোড়ো হাওয়া। চার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু বড়ো দের সাথে তাল মিলিয়ে বালির বাঁধ তৈরী আর মেরামতে লেগেছে। ওরা সব কাজে আছে এই চার জন। গ্রামের আপদে বিপদে, ছুটে যায় এই চার মূর্তি।
মাইকিং চলছে পরশু থেকে, গ্রাম ফাঁকা করে সেই কলেজ বাড়ি তে সবাই আশ্রয় নিয়েছে।
ভাঙবে ভাঙবে এই বাঁধ, প্রতিবছর ই এই অবস্থা হয়, এ যেনো নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
নদী আসে রাক্ষসী হয়ে তার খিদে নিয়ে, গিলে খায়, পেট ভরে খেয়ে চলে যায়, তখন আবার ভিটে য় ফেরা। গরীবের যা কিছু সম্বল সেই নিয়ে ছোটে রিলিফ ক্যাম্পে।
আজ রাতেই আসবে রাক্ষসী টা, মাইকে বলে যাচ্ছে সমানে। ঘূর্ণি ঝড় নিয়ে নাচতে নাচতে আসবে সে। পল্টু বলে বাবলা, একবার ঘর পানে চ ক্যানে। কেনো? দেখি কেউ আছে কিনা? গতবারের হাবুর পিসি টার কথা তো কারো মনে ছেলনে।
চার বন্ধু ঝমঝম করে পড়া বৃষ্টির সাথে ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশি নেই। ঘর বলতে ওই ত্রিপলের ছাউনি, দরমার বেড়া। খেটে খাওয়া গরীবের রাজপ্রাসাদ।
সুজয় বলে পাগলী টাকে কিন্তু দেখিনি, চল যাই দেখি তো আছে কিনা।
হ্যাঁ!সে পাগলী বসে আছে ওই শিব মন্দিরেই। ভাঙা জীর্ণ মন্দির থেকে তাকে বের করে নিয়ে আসা কি সমস্যা। আয়লার ঝড়ে তার সব চলে যায়, ভরা সংসার, স্বামী, সন্তান হারিয়ে তার মাথা টাই খারাপ।
এদিকে বাতাসের দাপট, শো শো আওয়াজ, নদীর জল এগিয়ে আসছে, কি তার গর্জন!বীভৎস তার রূপ। চার বন্ধু তে টেনে হিচড়ে নিয়ে চলে আধ বুড়ি পাগলিটাকে।
পাগলী শুধু হাসে আর বলে আসছে ওই আসছে, এবারে গিলে খাবে। বৃষ্টি আরো আরো জোরে পড়া শুরু করে। পাঁজা কোলা করে তাকে তুলে, পল্টু, সুজয়, বাবলা,অংশু জল ঠেলে পা চালায় রিলিফ ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে।
যেমন করেই হোক পৌঁছতে হবে, সামনে বিপদ ওত পেতে আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন