।।প্রতিদিন বিভাগ।।
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা
১.
পিনকোডহীন কবিতা
আমার কবিতায় যে কোনো চমক নেই সেকথা তুমি নিশ্চয় জেনে গেছো এতদিনে
যেমন জীবনযাপনে নেই কোনো নাটকীয়তা, গুরুত্বপূর্ণ বলতে যা বোঝায় ,গভীর অভিনিবেশ ...
আবার পোস্টমডার্ন উল্লম্ফন অথবা ম্যাজিক রিয়েলিজম. ..চিত্রকল্পে নেই কোনো লিবিডোর
ছায়াপাত ,প্রবল পরাক্রম আদম ইভের দোলাচল,আধখাওয়া আপেলের তৎপরতা
এখন কথা বলতে বলতে আমরা চলে যাচ্ছি ক্রমশ
গভীর খাদের কিনারায়. ..ইদানীং মানুষ কে মানুষ বলতে আমার লজ্জা লাগে,আসলে মানুষ বলেইতো কিছু হয় না পৃথিবী বলেই কি কিছু হয় জানি না
সমাজ বলে কিছুই নেই আত্মজীবনীর অংশ
শব্দ ছন্দ বিষয় নির্বাচনে এমনকি চলনে বলনে ভাষা ভঙ্গিমা বলা হয়তো অন্যরকম. ..
আমার কবিতা পড়তে পড়তে পাঠক তুমি নিশ্চয় জেনে গেছো এতদিনে, চমক বলে কিছু নেই. ..
জার্ক বা নাটকীয়তা লিবিডোর ছায়া
সম্পাদক বলেছেন আজ আধুনিক হতে হলে যা যা লাগে. ..নিজেকে প্রশ্ন করেও দেখেছি..
সত্যিইতো মানুষের কথা কি লিখেছি কখনো?
সমাজকে নিয়ে ? তাহলে? তাহলে বড়ু চন্ডীদাস
থেকে মনসামঙ্গল. ...না...তাও তো না ..
তবে? এসব কবিতাকে কি কবিতা বলা যায়. ...শুধু ঐ ক্যাচলাইন ছাড়া ...এসো আজ আমরা এইসব কবিতার নাম দি , পিনকোডহীন কবিতা. ....
.
২.
কাছের মানুষ, দূরের মানুষ
কাছের মানুষ দূরে যায় ,দূরের মানুষ আসে কাছে
বাতাস ভারি অভিমানি
আকাশ তখন লাবণ্যময়. ..
যেমন করে বিভূতিভূষন চিনিয়েছিলেন কিলিমাঞ্জারো, আছে কিন্তু থেকেও নেই কাদম্বরী কি চারুলতা ,তালধ্বজের মতো একাকীত্ব অপু দুর্গার মতো বাৎসল্য আছে কিন্তু থেকেও নেই এই যেমন বিমলাদের স্বাধীনতা হতোদ্যম দীর্ঘশ্বাস বিরস দিন বিরল কাজ ,বাতাস আসে বাতাস যায় ....
বকুল ফুলের মঞ্জরিত শাখায় মৃন্ময়ী বসন্ত নক্ষত্রের নিচে অগ্নিকুন্ডের মতো রঙিন স্মৃতি
যে নারী সবচেয়ে সুন্দর তাকে আমরা আজো দেখিনি, যক্ষপুরীর অসহায় মানুষের কান্নার শব্দ
অথবা মিনির জন্য পিতা রহমতের নিরুদ্দেশ যাত্রা
পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল দেখা আজো হয়নি আমাদের, পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শিশু
চিরকালীন বহুমূল্য হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক
দিনকেদিন শুধু কাছের মানুষ দূরের হয়
দূরের মানুষ কাছে আসে মুক্তি র খোঁজে ...
এখনো বাতাস বড়ো অভিমানি
আকাশ যেন লাবণ্যময় ....
৩.
লাল নীল ফানুস
এত বড়ো পৃথিবীতে ছোট ছোট ঘটনা গুলোয় আমাকে চঞ্চল করে তোলে ব্যাথা দেয়
গ্রীষ্মের দামালপনা উপেক্ষা করে আমি যেতে চাই
শীতের করাল গ্রাস আমাকে ভয়াবহতার উৎস দেখাতে পারে না,বর্ষার মুহূর্মূহু বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে লাল নীল ফানুস উড়িয়ে দিয়ে চলে যায়. ..
বন্ধুরা ইয়ার্কি করে বলে ,ব্যর্থ মানুষ, একলা ঘরের কোণে থাকে ।
উৎসবের শব্দ আমার কানে আসে না ,হৈ হুল্লোড়ের
ব্যান্ডপার্টি বিয়েবাড়ির সানাই আর গুলির শব্দ শুনতে পেলে দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলি
দেওয়ালে ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক সহ্য হয়না আমার।
এখন আমি ঠিক মানুষের মতো না
ভাবতেই শিউরে উঠি ,মনে হয় চারিদিকে অন্ধকার
কোথাও কোনও আলো নেই
কোথাও কোনও সুশৃংখল ইশারা নেই
সব আসলে সভ্যতার মারীচ সংবাদ ...
মানুষের পায়ের শব্দ শুনলে মনে হয় হায়নার হাততালি ,রাস্তায় ঘাটে ইস্কুল বাজারে
নারী ও শিশুদের সঙ্গে যদি দেখা হয়ে যায় সটান মাথা নিচু করে ক্ষমা চাই ,যেদিকে গন্তব্যস্হল তার পিছন দিক দিয়ে দৌড় দি।
এভাবে কি মানুষ বাঁচে ,অশ্রুনিনাদে
মাথা নিচু করে বসে মৃত্যুর অপেক্ষায়
কোথায় গেল তোমার শোষণমুক্ত সমাজ
কোথায় গেল তোমার ভালবাসার পৃথিবী
কোথায় মুখ লুকালো সৃষ্টিশীল মানবতা
তুমি কি তাহলে শুধুই কথার কথা, ক্ষমার অযোগ্য?
বন্ধুরা ইয়ার্কি করে বলে ব্যর্থ মানুষ, একলা ঘরের কোণে থাকে ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন