স্বাধীনতার ৭৫
মুক্ত গদ্য -১৬
পুণ্যতীর্থ হোক দেশ
বিকাশ বর
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্টে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে অনেক ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশ।
স্বাধীনতা এসেছে আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন, সুদীর্ঘ আন্দোলনের রক্তাক্ত পথ ধরে। এ কথা আজ নতুন করে শোনানোর প্রয়োজন নেই। আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে ভারত।
স্বাধীনতার প্লাটিনাম জয়ন্তীতে এসে পিছনের দিনগুলো ফিরে দেখতে ইচ্ছে করে। যা পেয়েছি তা অনেক কিন্তু যা পাইনি তার তালিকাও দীর্ঘতর, অসীম। সেজন্যই হয়তো আজও আমরা উন্নয়নশীল উন্নত হতে পারিনি।
ফিরে দেখার অবকাশে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির তুল্যমূল্যে কিছু অবধারিত প্রশ্ন উঠে আসে। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার স্বাদ ও আস্বাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার বিতর্কে বহুমুখী বিস্তার লক্ষিত হয়।
সাফল্য অনেক। ভারত এখন পারমাণবিক দেশ। মহাকাশে আমরা উপগ্ৰহ পাঠিয়েছি। অনেক দিক থেকে অনেকের থেকে আমরা এগিয়ে। তবু এই স্বাধীনতাকে বামপন্থী আদর্শের মানুষ 'ঝুটা স্বাধীনতা' বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেশ ভাগের পর স্বদেশ হারানোর ফলে অনেকেই এখনোও পরাধীনতার 'ছিন্নমূল' জীবন যাপন করছে। স্বাধীনতার পঁচাত্তরে গৌরবময় অধ্যায়ের পাশাপাশি অন্ধকারাচ্ছন্ন হতাশাজনক চিত্রও স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়। 'মেরা ভারত মহান' কথাটি কতটা যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন তুলে দেয় মনের গহীনে। জাত-পাত, সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু, সংরক্ষণ, ধনী-দরিদ্র, ধর্মবৈষম্যবোধের অস্তিত্বসংকট তীব্রভাবে পীড়িত করে পঁচাত্তরে পা দিয়েও।
গভীরভাবে অবলোকন করলে দেখা যায়, এই বৈষম্য আমরা খানিকটা নিজেদের স্বার্থের জন্য টিকিয়ে রেখেছি। প্রশ্ন তুলে দেয় আমাদের মৌলিক চাহিদা-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান পূর্ণতা পেয়েছে কী! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষার ছায়াতলে আমরা কী পেয়েছি শীতল ছায়া?
লালকেল্লায় ভাষণ আর স্বাধীনতা পতাকা উত্তলনের মধ্যে স্বাধীনতা যথার্থরূপে পালিত হয় কিনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
সাধারণ মানুষের কিসে মঙ্গল, মৌলিক চাহিদার কীভাবে সুরাহা হবে, বেকার সমস্যার কীভাবে সমাধান হতে পারে, এরকম হাজারো প্রশ্ন প্রতিনিয়ত আলোড়িত করে।
আসলে সমস্যা সমাধানের চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলি ও নির্বাচিত সরকার কতটা ক্ষমতার আস্ফালন দেখানো যায় তা নিয়ে অধিক তৎপর। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। আমরা এখনও উন্নয়নশীল।
প্রকৃতপক্ষে ভোটের রাজনীতিতে ডুবে গেছে উন্নয়নের হাতিয়ার। কীভাবে ক্ষমতায় আসা যায় এটাই মূলমন্ত্র।
আজ পঁচাত্তরে পা দিয়ে কায়মনোবাক্যে একটাই প্রার্থনা করি, জাত-পাত, ধনী-দরিদ্র, ধর্মবিদ্বেষের বীজ নিপাত যাক। সবার হাতে কাজ, সবার পাতে ভাত উঠুক। আর্থসামাজিক সুরক্ষাবলয়ে আপামর জনসাধারণ সুনিশ্চিতভাবে বেষ্টিত হোক। নির্বাচিত হোক সেই সরকার যে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন করবে। যার হাত ধরে হবে 'ডেভেলপ্ট কান্ট্রি'।বিশ্বকবির পুণ্যতীর্থে পরিণত হবে দেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন