স্বাধীনতার ৭৫
মুক্ত গদ্য —১২
স্বাধীনতা আর তিন পেগের কলম্বাস
নিমাই জানা( ক ) লাল দরজা , কিছু স্বাধীনতার গুঁড়ো, (খ) কাঁচা
লতা পাতার বিদঘুটে কালচে সবুজ রং আর (গ) বালতি ব্যাগের নিচে জমে থাকা অসংখ্য আলতা দাগ শুকিয়ে যাওয়ার পর যে ধৃতরাষ্ট্র তৈরি করেছিলাম ছোটবেলায় ঠিক সেগুলো দিয়েই আমি একটা (ঘ) রঙের আগ্নেয়াস্ত্র বানালাম । বেশ চকচকে সময় সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় নিজেই বিস্ফারিত হয়ে যেতে পারি অথচ আমাদের কোন ট্রেড লাইসেন্স ছিল না । আগ্নেয়াস্ত্রটি দীর্ঘদিন রোগে ভোগার পর হঠাৎ করেই জেগে উঠলো কয়েকদিনের ঙ চিহ্নের পর । মাথায় উপর ফিনকি দেওয়া কিছু রক্তের গোলাপ ফুল । হঠাৎ করেই আগস্ট মাস এলো আর বেনো জলের মতো কেন্নোরাও চাপ চাপ বংশগতিতে তাদের অস্তিত্বের জনুক্রম ছেড়ে যাচ্ছে কিলবিল রোদের দিকে , আমার শরীরের চারপাশে , আমার বাড়ির দরজায় , আমার উঠোনে , আমার রান্নাঘরে , আমার সাপের বিছানায় , আমার রাধিকা গোয়ালার ঘরে , আমার লিভো সালবিউটামল বাথরুমের পাশে , আমার পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের নিচে কেমন স্বাধীনতা স্বাধীনতা ভাব অথচ রক্তের কোন দলা পাকানোর আর কোন অধিকার নেই । সব ভেঙে ফেলছি , সব ভেঙে ফেলছি একে একে জমাট আর্তনাদ , তাদেরকে ছত্র ভঙ্গ করছি বার বিকিউব কাঁদানে গ্যাস দিয়ে , জল কামান আর কিছু রক্তের গুঁড়ো ছিটিয়ে। তবেই তো চোখে মুখে লাগার ভয় আছে। কেউ আমার উপরে আর ক্ষিপ্ত হতে পারছে না , আমি সব স্বাধীনতাকে একসাথে সাদা কাগজের মতো চুড়ে মুড়ে মুখের ভেতরে ঢুকিয়েছি কারো কোনো সাহস নেই । সকল লাল জবার পরিবর্তে এখন সাদা বেলফুলের গন্ধ শুঁকছে। আঃ পচা শামুকের মতো, সকলকেই সন্ন্যাস নিতে বাধ্য করেছি। আমি এখন খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না , তবুও মাঝে মাঝে রাতের দিকে ভয় পাচ্ছি , অবশ্য ভয় পেলেই একটু ওভারডোজের স্লিপিং পিলের গুঁড়ো খেয়েনি। কোন ডাক্তার হঠাৎ গর্ভপাত ঘটিয়ে ফেলল লো ভোল্টেজ আলো জ্বেলে , অথবা আমি কিছু রক্তের নমুনাকে রাতের অন্ধকারের বরফের ভেতর দিয়ে পাচার করে দিলাম কারণ আমার স্বাধীনতা আছে। আবার হঠাৎ করেই আমি অনেক কিছুই দেখলাম , আমি হত্যা দেখলাম , আমি বিষ প্রয়োগ দেখলাম , আমি গলাকাটার দৃশ্য দেখলাম, জবাই দেখলাম অথচ কিছু বলতে পারলাম না , ঠিক আদালতের একটা কাঠের চৌখুপীর ভেতর ঢুকে একটা ডরমেন্ট শ্রীমৎ ভাগবত গীতার উপরে হাত রেখে বলতে হলো আমি কিছুই দেখিনি ধর্মাবতার। আমার চোখ গতকাল গ্লুকোমায় ঢেকে গেছিল , এইতো ছানি অপারেশন করিয়ে আসলাম চক্রবর্তী অপটিক্যালস থেকে , জানেন সেখানে যে আয়ারা আমাকে প্রতিদিন মুড়ি খাওয়াতো মুড়ির সাথে একটা বড় ছানার মিষ্টি দিতো আর আমাকে বাথরুমে যেতে দিত না আমি বেডের উপর বসে বসেই ইউরিন করতাম , যাতে না আমি পটি করি তাই আমাকে এক চামচের বেশি ভাত দেওয়া হতো না । সেবিকারা ঘুমোবে বলে স্যালাইনের গতিটা একদম কমিয়ে দেয় , আমি সকলকেই খুন করেছি অথচ ঠিক স্বাধীনতার দিন এলেই আমি সেই নিহত মানুষদের জন্য রজনীগন্ধা ধুপ আর থ্রি পেগ বিয়ার আর কিলো দেড়েক কচি পাঁঠার মাংসের ব্যবস্থা করি একদম নিজের পয়সায় । আমার দেবালয়ের সামনেটাই কিছু বিপ্লবীদের গলায় শুকনো গাঁদা ফুলের মালা রাখি হঠাৎ দেখি আমার হাতে আমার পায়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে , কোন কোগিউলেশন নেই , তারপর আমি বাড়িতে এসেও ঠিক এক চামচ মেপে মেপেই ভাত খাই । বাড়ির সবাই বলেছে সুগার ঠিক সীমান্ত রেখার পাশে ঘোরাফেরা করছে। অথচ দেখো সৈন্যদের কোন ফুল পারমিশন নেই যেকোনো সময় কাউকেই এনকাউন্টার করার , আমি তখন স্বাধীন নয় আবার আমিই হঠাৎ স্বাধীন । আমি অবৈধ রক্ত জবা ফুল তুলে নিতে পারি আবার হঠাৎ করেই রঙ্গনের ফুল টবে কিছু শ্বেত চন্দনের চারা গাছ লাগিয়ে দিতে পারি । আমি সবকিছুই নিঃস্ব করে সকলকে চুষে চুষে ও খেতে পারি কারণ আমি তখন স্বাধীন অথচ প্রতিটি অক্ষরের মতোই আমরা তখন রক্তের ঘনত্ব জানা হয়ে গেছে । রক্তের ভেতর থেকে পাওয়া অসংখ্য উপজাত পদার্থ গুলো নিজেদের শরীরের ভেতর ঘটে চলা এক একটা রাসায়নিক সমীকরন । যা মিশিয়ে দৈনন্দিন রোদে শুকিয়ে তাদেরকে আবার ঘরে তুলে আনি আমার নারীর ভেজা কাপড়ের মতো । ঘরে বাইরে আমি প্রতিটি পরিচ্ছদকে পরাধীনতার লাল রঙে ডুবিয়ে রাখি , কাউকে মুক্ত অথবা স্বাধীনতার আশ্বাস দিতে পারি না । মন ও শরীর পরাধীন হতে পারে আবার কখনো একে অপরকে বাদ দিয়েই দুটো দুদিকে সরলরেখায় চলে যেতেও পারে । কেউ দ্রাঘিমাহীন পালক ফেলে আকাশের দিকে উড়ছে দৈনন্দিন বিচিত্র রকমের অনুভব ও পারিপার্শ্বিক সমীকরণ পাল্টে ফেলার পর , আমাদের গলায় বদরক্তের দাগ , কিছু বলতে পারছিনা , আসলে গলার কাছে কেউ যেন নিম্নগামী কোন এক হিমানী সম্প্রপাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে , আমরা কোনভাবেই আর উর্ধ্বমুখে যেতে পারছি না । তবে আমাদের বিবেক , বুদ্ধি , চেতন , অচেতন , আমাদের ব্রহ্ম চেতনাকেও আটকে দিয়েছে । আমি কিছু প্রি প্রোগ্রামিং সিলেক্টেড প্যারামিটার নিয়ে শহীদ বেদীর চারপাশে মৃত্যুঞ্জয়ীদের কার্যপ্রণালী পড়ে যাচ্ছি , আমরা সকলেই ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠায় কালো গোখরা সাপ পুষে রেখেছি অথচ আমি নিজেই তার দ্বারা চালিত । ধন্যবাদ স্বাধীনতা , তোমার ডেরিভেটিভ শূন্য । নাক ডাকো নৃসিংহ জেগে উঠুক , মহাকাশ জেগে উঠুক ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন