লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-২১)।।...এবং ইরাবতির প্রেম।। গৌতম আচার্য।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।







ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব- ২১)


...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য




সত্যেনের চোখে ঘুম আসেনা।। ট্রেনের স্লিপারে শুয়ে শুয়ে একবার এদিক একবার ওদিক করতে করতে ভাবতে থাকে ইরাবতির কে।। ইরাবতির টোল খাওয়া সুন্দর মুখ, তার হৃদয় জুড়ানো হাসি, কখনো দুষ্টুমি আর কখনো ভালোবাসা সোহাগ মাখানো উষ্ন স্পর্শ হরিহর এর অনুভূতি গুলিকে জাগিয়ে রেখেছে।। সে ভাবছে, কি এমন ঘটনা ঘটেছে যা ইরাবতি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে বলতে পারে না, ফোনে কথা বলে তার উচ্ছাস মাপতে চায়?

সত্যেন ঘুমিয়ে পড়বার চেষ্টা করে।। কিন্তু ইরাবতির মুখটি তার ঘুম বারবার কেড়ে নিচ্ছে।। সত্যেন যেন ইরাবতিকে পেয়ে "সব পেয়েছি" র মনোভাবে পৌঁছে গেছে।। বারবার ইরাবতির জন্য আকুল হয়ে ওঠে সত্যেনের মন।। গতকাল রাতে ঠিক এই সময়ে ইরাবতির সঙ্গে তার ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ সত্যেন কে হতাশ করে তোলে।। সত্যেন ভাবতে থাকে, যদি ইরাবতিকে এভাবে ছেড়ে না চলে আসতে হতো, তবে কি সুখ, আনন্দ যে তার হতো।। মনে মনে ইরাবতিকে সত্যেন বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে ভালোবাসতে থাকে।। আবেশে সত্যেনের শরীর এবং মনে শিহরণ খেলে যায়।।

চোখ খুলে সত্যেন দেখতে পায়, পাশের স্লিপারে যে ভদ্রলোক শুয়ে ছিলেন তিনি দাঁত ব্রাশ করছেন।। বাইরের জানলার দিকে তাকিয়ে সত্যেনের নজরে আসে আকাশ আলোয় আলোকিত এসে গেছে, ট্রেন কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে শিয়ালদহ স্টেশন।। ভালো করে জানলা খুলে সত্যেন দেখতে পায় দূরে দেখা যাচ্ছে দক্ষিনেশ্বর মা ভবতারিণীর মন্দিরের চূড়া।। সত্যেন জানে, ট্রেন দমদম ষ্টেশনের আউটিং এ সিগন্যাল না পেয়ে দাঁড়িয়ে যাবেই।। আর সত্যেন ও সেখানেই নেমে পড়বে।। ওখান থেকেই তার বাড়ি ফিরতে সুবিধা হয়।।

ট্রেন থেকে নেমে সত্যেন ভাবে, এখন এই মুহূর্তে তার এবং ইরাবতির মাঝখানে পড়ে আছে এক বিশাল দূরত্ব।। প্রায় ছয়শো কিলোমিটার।। কোথায় সত্যেন আর কোথায় ইরাবতি... কিন্তু ইরাবতির থেকে এ্যতো দূরে চলে এসেও সত্যেন একমূহুর্তের জন্যেও ভুলতে পারছে না ইরাবতি কে।। এক দূর্বার আকর্ষণ সত্যেন কে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ইরাবতির পাশে।। বুকটি কি একটি অদ্ভুত ব্যাথাতে আকুল হয়ে উঠছে।। ইচ্ছা করছে আবার ফিরে যায় ইরাবতির কাছে।। মনে মনে সত্যেন ভাবে, ইরাবতি যাদু জানে?

মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে কিম্বা ডুও-র ভিডিও কলে যতোই সারা রাত গল্প, ঠাট্টা, ইয়ার্কি করুক না কেন, জীবনে এই প্রথম সে দেখলো ইরাবতি কে।। ইরাবতির সান্নিধ্য লাভ করলো।। ইরাবতিকে একদম নিজের করে পেলো, অথচ, ইরাবতির আজকের এই অনুপস্থিতি তাকে অস্হির করে তুলছে প্রতি মূহুর্তে।। মাত্র দুটি দিন, কেমন ইরাবতি তাকে বশীকরণ করে ফেলেছে, ইরাবতির জন্য তার মনের ভিতরে কি একটি অভাব বোধ তাকে কুড়ে খাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সত্যেন দেখলো, এখন সবে সকাল ছয়টা বাজে।। একবার ভাবলো, ফোন করে ইরাবতি র ঘুম ভাঙিয়ে দেবে।। শুনতে হবে ইরাবতির সেই কথা।। তারপর নিজেই বলে উঠলো, "না বেচারা বড্ডো পরিশ্রম করেছে দুটি দিন।। থাক ঘুমিয়ে নিয়ে শরীর ফ্রেস করে নিক"।। সত্যেন ভাবলো ততোক্ষণে নিজে বাড়িতে ফিরে একটু স্নান করে কাচা ধুতি পরে সে অপেক্ষা করবে ইরাবতির জন্য।। একটি চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সত্যেন চা খেলো।। তারপর আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রওনা হলো।।

পাড়ার মোড়ে পৌঁছোতে ই সত্যেনের পকেটে রাখা মোবাইল ফোন বেজে উঠলো।। "এ্যতো সকাল বেলা আবার কে ফোন করলো"? পকেট থেকে মোবাইল বার করেই সত্যেনের মনে শিহরণ খেলে গেলো।। স্ক্রিন জুড়ে ইরাবতি।। তাড়াতাড়ি ফোন ধরেই সত্যেন বলে উঠলো, "সুপ্রভাত মহারানী"।।
-- তুমি ট্রেন থেকে নেমেছো? প্রশ্ন করে ইরাবতি।।
-- ইয়েস্।। অনেকক্ষণ আগেই নেমেছি।। এখন প্রায় বাড়ির কাছাকাছি।।
-- তাই- ই? প্রশ্ন করে ইরাবতি।।
-- হ্যা ম্যাডাম।। পাড়ার মোড়ে পৌঁছে গেছি।।
-- তাহলে আর ডিস্টার্ব করছি না এখন।। তুমি বাড়ি পৌঁছে ফ্রেস্ হয়ে বরং আমাকে কলব্যাক কোরো।।
-- "না"।। আর্তনাদ করে ওঠে সত্যেন।।
-- আরে বাড়ি যাবে তো, ফ্রেস হয়ে চা খাবে তো...
-- কখন চা খাওয়া হয়ে গেছে।। আমি এখন একদম টগবগে তেজোদীপ্ত।। তুমি কখন ঘুম থেকে উঠলে?
-- আর বলোনা, সারা রাত বারবার ঘুম ভেঙে গেছে।। চারটে থেকে একদম জাগা।।
-- এ মা, আমাকে ফোন করলে না কেন? আমি তো গোটা রাত জেগে।। তুমি আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিলে না তো।।
হেসে ওঠে ইরাবতি।। তারপর বলে, "আমি তোমাকে কি করলাম? বা রে, তুমি ট্রেনে আর আমি বাড়িতে।। আমি দোষী হয়ে গেলাম"?
-- প্রিয়তমা, তুমিই দোষী।। যে কি করলে আমি গোটা রাত সেটি ভেবে ভেবে কোন উত্তর পেলামই না।।
-- শয়তান, নিজে ঘুমায় নি বলে, আমার ঘুম-ও নষ্ট করে দিলো।।
-- মহারানী, কাল থেকে টেনশন নিয়ে বসে আছি।। কি বলবে বলে কাল বললে না, আমি নাকি পাগল হয়ে যাবো।। বলো না সেই কথাটি।।
-- বিনা পুরস্কারে বলবো? আবার তো বলছি, তুমি কথাটি শুনলে দিওয়ানা হয়ে যাবে।।
-- বলো, বলো, প্লিজ বলো।। তুমি যা পুরস্কার বলবে তাই দেবো।।
-- প্রমিস্?
-- প্রমিস্।।
-- আমি একদম ভয়ে ভয়ে কিন্তু ইচ্ছা করেই বাড়িতে তোমার কথা বলেছি।। ভয় পাচ্ছিলাম ওরা বোধহয় রি-অ্যাক্ট করবে, কিন্তু কেউ রি-অ্যাক্ট তো করেই নি, বরং ওরা এখন তোমায় দেখবার জন্য
উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।।
-- রিয়্যালি?
-- হ্যা।। একদম তাই।। তোমার ছবিও ওরা দেখেছে।। ওরা তোমার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।। আমাকে শুধু বলছে, কাকুকে বাড়িতে আসতে বলো না একবার, আলাপ করবো আমরাও।।
-- ও: হোয়াট এ সারপ্রাইজ।। তুমি সব বলে দিয়েছো তো।। তুমি আমার সঙ্গে ছিলে.. আমরা এক হোটেলে একসাথে ছিলাম...
ইরাবতি সত্যেনের কথা শুনে বলে ওঠে, "ও: তুমি না একটি আস্ত হাঁদারাম।। আমি ওদের বলবো যে, তুমি আর আমি এক হোটেলে ছিলাম...... এক সঙ্গে রাত জেগেছি..... মাথা মোটা কোথাকার"।।
-- ইউ আর রিয়্যালি গ্রেট মহারানী হাঁদি।।

সত্যেন ইরাবতিকে জানায় আগামী রবিবার সে ট্রেন ধরবে সোমবার সকালেই ইরাবতির বাড়িতে আসবে বলে।।


চলবে...









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন