লেবেল

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-১২) ।। ...এবং ইরাবতির প্রেম।। গৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 





ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-১২)

...এবং ইরাবতির প্রেম

গৌতম আচার্য



দেখতে দেখতে এসে গেলো ৮ই ফেব্রুয়ারী।। আজ-ই সত্যেন ট্রেনে চাপবে।। আগামী কাল জীবনে প্রথম বার দেখা হবে ইরাবতির সঙ্গে।। সত্যেন এর গোটা মন জুড়ে অদ্ভুৎ একটি শিহরন অনুভুত হচ্ছে।। উদগ্রীব প্রহর গুনছে সে।। ট্রেন সেই রাত দশটায়।। অন্যান্য দিন গুলিতে সময় যেন তাড়া করে সত্যেন কে।। কি অদ্ভুৎ আজ আর সময় কাটছেই না।। ঘড়ির কাঁটা যেন নড়েই না।। আজ কোন কাজ রাখেনি সত্যেন।। তাই আর-ও বোকা বোকা লাগছে তার।।

সাড়ে ন'টা বাজতেই সত্যেন শিয়ালদহ ষ্টেশনে পৌঁছে গেছে।। এখনও আধ ঘন্টা সময় আছে হাতে।। দুবার তাগাদা দিয়েছে ইরাবতি।। বারবার প্রশ্ন করে নিশ্চিত হতে চেয়েছে সত্যেন ঠিক আসছে কিনা? সত্যেন আবার হেসে বলেছে, "জল হোক, ঝড় হোক, পাথর পড়ুক, বৃষ্টি পড়ুক, ট্রেণ বন্ধ হয়ে যাক।। তবুও নয় তারিখ সকাল ঠিক এগারোটা- আসামী হাজির হবে জজ্ সাহেবার এজলাসে"।।

ঠিক পৌনে দশটায় ইরাবতি আবার ফোন করলো সত্যেনকে।। জানতে চাইলো, "কোথায় ষ্টেশনে? ট্রেন দিয়েছে"?
-- না ষ্টেশনে এখনও পৌঁছাই নি।। আরে রাস্তায় খুব জ্যামে আটকে আছি।।
-- সেকি? ট্রেনের টাইম তো প্রায় হয়ে গেছে?
-- কি করবো? রাস্তার জ্যাম্ আছে তো।।
-- কতোদূর এসেছো? ষ্টেশনের কাছাকাছি, না দূরে?
-- না, হাঁটতে হাটতে ষ্টেশনে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই।। খুব না হলেও বেশ দূরে আছি।। হেঁটে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব নয়।।
-- তাহলে? একটু আগে বেড়ুবে তো।। নাহয়, ষ্টেশনেই অপেক্ষা করতে কিছুক্ষন......
হতাশা ছড়িয়ে পড়ে ইরাবতির গলা জুড়ে।। আর ঠিক সেই সময় ষ্টেশনের মাইক বেজে ওঠে, "ওয়ান দু থ্রি ফোর থ্রি আপ্ দার্জিলিং মেল, নয়ের এ প্ল্যাটফর্ম থেকে রাত দশটা বেজে পাঁচ মিনিটে ছাড়বে"।। সব বুঝে যায় ইরাবতি।। বুঝে যায়, সত্যেন প্ল্যাটফর্মেই আছে।। ছলনা ভরা নাটুকে গলায় বলে, "তুমি যখন ট্রেন ধরতেই পারলে না, তখন আর কি করা যাবে? আমি কাল আর দাঁড়াচ্ছি না তোমার জন্য।। আমি বরং সক্কাল সক্কাল অন্য কাজে বেড়িয়ে যাবো।। পরে আবার কোনদিন সম্ভব হলে দেখা হবে।।

আর্তনাদ করে ওঠে সত্যেন, "আরে না না ম্যাম্ আমি বলেছি না, ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো জজ্ সাহেবার এজলাসে"।। হেসে ওঠে ইরাবতি।। বলে, এবার ভেবে দেখতে হচ্ছে, ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে যে বলে জ্যামে ফেঁসে আছি, তার সঙ্গে মেলামেশা করা কতোটা নিরাপদ।। সত্যেন হেসে ওঠে।। বলে এ্যতোদিন জানতাম বন্ধুর সঙ্গে ইয়ার্কি করতে হয়, এখন থেকে কোনও বুড়ো বা বুড়িকে খুঁজতে হবে ইয়ার্কি করবার জন্য।।
-- সাহেব কি ট্রেনে চেপেছেন, নাকি নীচে দাঁড়িয়ে?
-- ট্রেনেই বসে আছি।।
-- তাহলে তো স্বাগত জানাতে-ই হয়।।
-- হুমম্।।

একটু থেমে সত্যেন বলে, আজ আর রাতে ঘুম হবে না।। গোটা রাত জ্বালাবো।। গল্প করবো।। ভিডিও কল করবো।।
-- মানে? আমার এখনই ঘুম পেয়ে যাচ্ছে তো।।
-- সে তো বটেই।। অন্যান্য দিন কি যে কাজ করো তা তুমিই জানো।। রাত একটায় আসা হয়, আর আজ এমন একটি দিনে দশটায় ঘুম তো পাওয়ার-ই কথা।।
-- কেমন একটি দিন?
-- কাল জীবনে প্রথম দেখা হবে আমাদের।। শুধু এই রাতটুকু পার হওয়া।। তারপর.....
"......চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের ’পর
হাল ভেঙে যে-নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন"।
-- ওরে বাব্বা, এতো দেখি চরম কাব্যিকতা....... বলে ওঠে ইরাবতি।। তার কথা শুনে সত্যেন আবার শুরু করে,
"সব পাখি ঘরে আসে-- সব নদী-- ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন"।

চুপ করে থাকে ইরাবতি।। সত্যেন বলে ওঠে, সকাল টি হোক্, দেখা হোক্... তারপর পুরোপুরি "আপ কি লেড়কি মেরা কব্জে মে হ্যায়"।।
-- আপকি লেড়কি, নাকি আপকা লেড়কা.... সেটি দেখা যাবে।। বলে ওঠে ইরাবতি।।



চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন