আগমনী বন্দনা -৩৬
বিকাশ দাস
দুর্গা দুর্গতিনাশিনী
শরতের মেঘমালা নীল সাদা আকাশ
আগমনীর মুগ্ধ সুরে আত্মহারা বাতাস।
শিউলির গন্ধে শিশিরমুখর হরিৎ দূর্বাঘাস।
নতুন বর্ণ ছন্দে ঐক্যতার পুনর্মিলন উচ্ছ্বাস
দৃষ্টির জমিনে কাশফুলের মনোময় দোলা
চোখে মুখে আনন্দ-সম্প্রীতির হৃদয় খোলা।
ভিন্ন ভিন্ন রূপ নাম সংকীর্তনে প্রকৃতির মননে শান্তিছায়া।
শুক্লপক্ষের আশ্বিনে শারদীয়া। চৈত্রে বাসন্তী মহামায়া।
ভগবান বিষ্ণুর অনন্ত মায়া। ভাগবতে কৃষ্ণের যোগমায়া।
সংস্কৃতির চিরন্তন সরণি। মুক্তকেশী জগৎ সৌরকায়া।
কখনও চণ্ডী, কালী, জলোদরী, শ্যামা, বৈষ্ণবী, গৌরী
কখনও অন্নদা, আনন্দময়ী,শাকম্ভরী, কৌশিকী, ভ্রামরী।
কখনও মহাশ্বেতা, শিবপত্নী শিবানী, তপস্বিনী ভিখারিনী।
শক্তির দেবী দুর্গতিনাশিনী। সর্ববিধ দুঃখকষ্ট
হরণকারিণী।
রুদ্রাণী মনমোহিনী তরঙ্গিনী। সর্বজনগৃহীত গার্হস্থ্য
জননী।
প্রহরণ প্রহারিণী।শত্রুমর্দ্দিনী। শৈবধর্মে শিবের অর্ধাঙ্গিনী।
অন্নপূর্ণা জীবজগৎ পালনকারিণী।অন্নদাত্রী
বিশল্যমোহিনী।
পরমেশ্বরীর দক্ষিণে বরদাত্রী ধনদাত্রী লক্ষ্মীশ্রী
সৌভাগ্যরূপিণী।
নবপত্রিকা শক্তির প্রতীক।মৃত্তিকাশস্য বৃক্ষরূপ বিনায়ক
জননী।
নয়টি ভিন্ন উদ্ভিদের চেতনায় নয়টি অধিষ্ঠাত্রী দেবীর রূপ
মোহিনী।
বামে বিদ্যা বিজ্ঞানময়ী পদ্মলোচনা বীণা পুস্তকধারিণী
সরস্বতী
সৌর্য্যপ্রতীক ধুনকধারী কার্ত্তিক।কার্যসিদ্ধিদাতা গজানন
গণপতি।
নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন মহাদেবা। সখী জয়া বিজয়ার
সমারোহ
শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পিতৃগৃহে পরিণীত,আনন্দ
উৎসব অহরহ।
"ওঁ সর্ব্বমঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণি নমোহস্তুতে।।"
জীবনকালস্রোতের অন্তর্জালে দেখি সর্বদা সুবর্ণময়ী
মাতৃরূপা প্রতিমা
সিংহবাহিনী,দশভুজা অস্ত্রধারিণী।বিষাদ বিনাশকারিনী
চন্দ্রদ্যুতিমা।
মহিষাসুর দমন মহিষমর্দিনী।অকাল বোধন
প্রকৃতিস্বরূপিনী উমা।
সুখদায়িনী মোক্ষপ্রদায়িনী চৈতন্যময়ী দেবী মঙ্গলা
করুণাময়ী ক্ষমা
পুরাণে দক্ষরাজ কন্যা সতী। গিরিরাজ কন্যা বিমলা
ভগবতী
ব্রহ্মবাদিনী ভবানী দেবীশক্তি 'দশপ্রহরণধারিণী' উমা
পার্বতী।
জয়ন্তির ইঙ্গিতে দোলে ভুবনদোলা।প্রকৃতির আরাধ্য
আলো ধরে
স্মরণের শরণ্য আশীষ দুয়ারে সর্বমঙ্গলা বিপত্তারিণী
বিরাজ করে।
শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি ঢাক ঢোল কাঁসর মন্দিরার একতান
আলিঙ্গনে
বিভিন্ন বর্ণে যেন একান্নবর্তী সংসার, মাতৃবন্দনায় অভিন্ন
গৃহপ্রাঙ্গণে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন