।। জানুয়ারি সংখ্যা।।
।। দীর্ঘ কবিতা (উন্মুক্ত) -১।।
প্রতীক্ষা
অজিত বাইরী
দুর্দিন এসেছে বলে, ভেবো না, সুদিন আসবে না।
আকাশে যতই ঘন হয়ে জমুক মেঘ,
মেঘ কেটে একসময় মুখ দেখাবে আকাশ।
অন্ধকারের যবনিকা সরে গিয়ে ঝলমলিয়ে উঠবে দিগন্ত।
অনেক ভোগ করেছি যন্ত্রণা, অনেক কাটিয়েছি
নিদ্রাহীন রাত; যাকিছু গড়ার ছিল স্বপ্নে, কল্পনায়;
তার কিছুইপ্রায় গড়তে পারিনি।
বরং দিনের পর দিন ক্ষয়ে গিয়েছে
যতটুকু গড়েছিলাম, যেটুকু বাকি আছে
সেটুকুও আর যাতে না যায়,
এসো, নতুন কোন ভোরের স্বপ্ন দেখি।
নতুন করে ভাবি, ভাঙা খাঁচাটা যতদূর সম্ভব
মেরামত করার; পুবের বারান্দায় একটা
খাঁচা রাখতে চেয়েছিলে, রংবেরঙের বদরিকা
পোষার শখ ছিল তোমার।
আমার ছিল বাগান গড়ার নেশা, একফালি জমি
এখনো হয়নি বেহস্ত, মাটি কুপিয়ে অনায়াসেই
পোঁতা যায় দু' চারটে গোলাপের চারা,
এসব তো সাধ্যের বাইরে নয়।
শুধু মনটাকে তেঁতুলে মাজা কাঁসার বাসনের মতো
ঝকঝকে রাখা দরকার, শুধু দুর্ভোগের কথা
না ভেবে অন্যকিছু ভাবি, ভাবি না কেন
আমাদের থেকে আরও কত মানুষ আরও কত কষ্টে আছে।
স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি ক্রমশ
তাদের কাউকে কাউকে আমন্ত্রণ জানিয়ে
গল্পের ঝাঁপি খুলে বসি, হেসে উঠি
অনাবিল প্রাণখোলা হাসি, যেন একঝাঁক পায়রা
পাখার ঝাপটা মেরে উড়ে যাবে দিগন্তে।
অথবা কোনদিন ছাদে গিয়ে দাঁড়াবো,
ছাদের উপর ছড়িয়ে দিয়ে শস্যদানা, দেখবো
নিসর্গের পাখিরা নেমে এসেছে ঝাঁক বেঁধে
তাদের চঞ্চুতে তুলে নিচ্ছে একটি একটি দানা,
এমন কতো সুখের উপকরণ ছড়িয়ে আছে চারপাশে।
এসো, সেগুলোর দিকে মনোযোগ দিই
দেখবে, দুঃখগুলো ক্রমাগত সরে যাচ্ছে দূরে
আর একটু একটু করে স্থান করে নিচ্ছে আনন্দ।
জীবনকে তখন এতোটা ভার মনে হবে না;
বরং মনে হবে একটা পলকা নৌকো
পাল তুলে নদীপথে ভেসে চলেছে সাগরের দিকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন