শারদ অর্ঘ্য
মা আসছে -৩৬
জ্যোতির্বৃক্ষ
প্রদীপ্ত সামন্ত
বিশ্ব বা বেলের নানান গুণ ,উপকারিতা আমাদের সমাজে বহুদিন আগে থেকেই চলে আসছে। এই নিয়ে বহু পৌরাণিক কাহিনী বর্ণিত আছে। অশ্বমেধযজ্ঞ তুল্য মহাপূজা দুর্গাপূজায় বিল্বের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য সে বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই----
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত ভারতবর্ষেও বৃক্ষপূজার প্রচলন ছিল। বড় বড় বৃক্ষ বা মহীরুহের মাথা আকাশচুম্বী হওয়ায় মহীরুহের মাথাকে সূর্যের আসন রূপে কল্পনা করা হত। তন্মধ্যে বিল্ববৃক্ষকে আলাদা মর্যাদা দিয়ে 'জ্যোতির্বৃক্ষ' এর সম্মান দেওয়া হয়। দুর্গাপূজায় বিল্ববৃক্ষের গুরুত্ব সর্বাধিক। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় বিল্ববৃক্ষের পুজো করে দেবীর বোধন হয় এবং ঐদিন দেবী বিল্ববৃক্ষেই অবস্থান করেন। অনেকে বিল্ববৃক্ষটিকেই দেবী দুর্গা বলে মনে করে থাকেন। ষোড়শ উপচারে পুজোর সময় "ওঁ বৃল্ব বৃক্ষায় নমঃ" মন্ত্রপাঠ করতে দেখা যায়। বোধনে সঙ্কল্প মন্ত্রে "ওঁ কর্তব্যে হস্মিন বিল্ববৃক্ষে বার্ষিক শরৎ কালীন শ্রীভগবদদুর্গামহাপূজা কর্মাদিভূত শ্রীভগবদ দুর্গায়া:"--বলে দুর্গাপূজার শুরু হয়। ষষ্ঠী তিথিতে দেবী দুর্গা রূপে বিল্ববৃক্ষেরই পুজো হয়। পরদিন মহাসপ্তমীতে প্রাতঃকালে বৃক্ষের ফল সহ শাখাচ্ছেদন করে নয়টি গাছ বা পত্রিকার সঙ্গে অপরাজিতা লতার ডোর দিয়ে বাঁধা হয় ও নবপত্রিকা বা কলাবৌয়ের স্নান করিয়ে মণ্ডপে আনা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য নবপত্রিকারও মাঝের একটি পত্রিকা হল বিল্ব। "রম্ভা কচ্চি হরিদ্রা চ জয়ন্তী
বিল্ব দাড়িম্বি অশোক মানকচু ধান্য নবপত্রিকা"। ন'টি গাছে ন'টি কুলযোগিনীর মধ্যে বিল্ববৃক্ষে দেবীর শিবা রূপ অবস্থান করে। বিল্বফল--" বিল্বং জ্যোতিরিতি আচক্ষতে"--এখানে সূর্যের প্রতীক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন