শারদ অর্ঘ্য
মা আসছে —৩৩
খোলা চিঠি পূজায় দিদির বাড়ি
অসিত কুমার রায় (রক্তিম)
স্নেহলতা দিদি-
অনেকদিন পর দিদি তোর বাড়ি যাব। বেশ কিছুদিন থাকব। জাম্বুকে কিন্তু বলে রাখিস সে যেন মনে কিছু না করে। ভাগ্নাভাগ্নি থাকবে আমার দখলে। এবারের পূজা তোর ওখানে কাটাব ঠিক করেছি। জানিসতো বাবা মা চলে যাবার পর ভীষণ একা হয়ে গেছি। কিচ্ছু ভালো লাগেনা সিঙ্গাপুরের পাঠ সব চুকিয়ে ফেলেছি। আর দরকার নেই ওইসব ঐশ্বর্য। মনের ভিতর খুব দোলাচল একটু শান্তি আর স্বস্তি খুঁজছি। ভাবছি হয়তো তোর ওখানে গেলে পাব। গতবার বলেছিলি তোদের আটচালা পদ্মার গ্রাসে চলে গেছে, মায়ের থান নাকি ভেসে গেছে জলের স্রোতে। গ্রামের সবাই অপ্রস্তুত ছিল তাই শুধু ঘটপূজা হয়েছিল। জাম্বুর এখন বেশ নাম ডাক হয়েছে শুনছি। তাই তোরা নাকি সব গ্রাম ছেড়ে শহরবাসী হয়েছিস। কুছ বাতি নেহি যাব যখন বলেছি যাবই যাব।
পুরানো অনেক কথা মনে পড়ে যায়। তোর মনে আছে তুই বলতিস - বিয়ের পর আমি যেন তোর সাথে থাকি। তবেই নাকি তুই বিয়ে করবি। বিয়ের পর সব উল্টে পাল্টে গেল। তুই খুব কাঁদতিস - ''ভাই তোকে ছাড়া একটু ও ভালো লাগেনা রে। এরা মোটেই গল্পবলা পছন্দ করেনা, আকাশ দেখেনা। গাছের সাথে কথা বলেনা। নিজে বসানো গাছে যখন প্রথম ফুল ফোটে তার আনন্দই যে আলাদা। এই অনুভব ওদের নেই। তোর জাম্বু ওদের ভিতর একটু অন্যরকম।'' এখন ভাবলে খুব হাসি আসে। ইদানীং মনে হয় তুই এতদিনে ধীরে ধীরে সব মানিয়ে নিয়েছিস।
তোর হাতের নারকেল নাড়ু অনেকদিন খাইনি। ভাইফোঁটায় আব্দার থাকবে, ছোটবেলার মতন সাজিয়ে ফোঁটা দিবি। দই, চন্দন, ঘিপ শিশিরের ফোঁটা সব যেন থাকে। ঠিক আছে। তোর নতুন বাড়ির বহুতলের ঠিকানায় চিঠি পাঠিয়ে দিলাম। ভালো থাকিস।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন