স্বাধীনতার ৭৫
মুক্ত গদ্য — ২
জনগণ অধিকার চায়,স্বাধীনতার অধিকার
তৈমুর খান
করোনাকালে গৃহবন্দি জীবন স্বাধীনতাহীন এক অসহনীয় জীবনেরই পরিচয় বহন করছে। মানুষ কখনোই বদ্ধ জীবনে অভ্যস্ত নয়। হঠাৎ করে তার জীবনে যখন এই বদ্ধতার ঘেরাটোপ তৈরি হয় তখনই শুরু হয় আত্মপীড়নের অশনি সংকেত। কেমন সেই আত্মপীড়ন?
১) জীবনযাপনে ঘোর অন্তরায়ের জীবন
২) সম্পর্কহীন, কথাবার্তাহীন নির্বাসিত জীবন
৩) রুজি-রোজগারহীন অনাহারক্লিষ্ট জীবন
৪) সৃজন-চেতনা ধ্বংসকারী বীতস্পৃহ জীবন
৫) সৌজন্য-সহানুভূতি বিপন্নকারী জীবন হতাশা ও বিষণ্নতাগ্রস্ত জীবন
৬) অমানবিক, বিকৃত এবং বিকারগ্রস্ত জীবন
এই অভিশাপগুলিই মানবজীবনে নেমে এসেছে। কোভিদ ছড়ানোর নামে মানব জীবনকে বিচ্ছিন্ন করারই এক চক্রান্ত বলেই মনে হয়। এটাই কি এই রোগ ছড়ানো বন্ধ করার উপায়?তা কিন্তু নয়। যে রোগটির আগমন বিদেশ থেকে, সেই রোগটির দায় কেন আমরা বহন করব? কেনই-বা বিদেশ থেকে আগমন বন্ধ হল না? রোগ প্রতিরোধের সদিচ্ছা কি রাষ্ট্রের ছিল না?
এই প্রশ্নগুলির সঠিক উত্তর আমরা পাইনি। অথচ আমাদের স্বাধীনতা হরণ করে রাষ্ট্র আমাদের বাঁচানোর নামে পরোক্ষে কি হত্যার ষড়যন্ত্র করেনি? বহু সংশয়ের সদুত্তর কারোরই জানা নেই। গৃহবন্দি জীবনের অসূয় ভোগ করে দীর্ঘ যাতনায় আমাদের দগ্ধ হতে হয়েছে। যে পরাধীনতার গ্লানি আমরা ব্রিটিশ আমলে সহ্য করে অসহ্য হয়ে উঠেছিলাম এবং শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছিলাম; এই লকডাউন সময়টি সেই অসহ্যকেই পুনরায় উসকে দিয়েছে। যে দিন-আনি দিন-খাই মানুষ ঘরে বন্দি থাকলে একদিনও খাবার মজুদ থাকে না তাদের কী যে অবস্থা হতে পারে তা সকলেরই জানা। অর্থাৎ পুরোপুরি উপোস ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। সুতরাং সমাজ আরও বিশৃঙ্খলায় পতিত হয়। নীতি-নৈতিকতার বিচ্যুতি ঘটে। হাহাকার পড়ে যায় সেইসব প্রান্তিক জীবনে।
বনের পাখিকে খাঁচায় বন্দি রেখে তাকে নিরাপত্তার গল্প শোনানো কি খুব সন্তোষজনক পদক্ষেপ? তা কখনোই হতে পারে না। মুক্ত জীবন হাসিমুখে মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে পারে। তার যুদ্ধের পরিসীমাও পরিব্যাপ্ত হয়। কিন্তু বন্দি জীবনে আত্মিক মৃত্যুর শিকার হতে হয় তাকে এবং তা আরও ভয়ংকর। মানুষকে কর্মহীন করে, স্বাভাবিক জীবনাচারকে বাঁধনে বেঁধে, সম্পর্কের ভেতর দূরত্ব সৃষ্টি করে সর্বোপরি ব্যক্তিজীবনে হস্তক্ষেপ করে কখনোই শান্তি ফেরানো যায় না। জীবনের ছন্দপতন ঘটিয়ে মহাজীবনের স্বপ্ন সফল করা যায় না। রাষ্ট্র স্বাধীনতা হরণকারী, প্রজা শোষণকারী, চক্রান্তকারী একটা শক্তির ধারক হয়ে উঠেছে। বলেই মানুষের মৃত্যু মিছিলকে মানুষেরই কর্মফল হিসেবে দেখাতে চেয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের বিচক্ষণতার অভাব এবং সঠিক পরিকল্পনার অভাব তা সকলের কাছেই পরিষ্কার। গণতান্ত্রিক একটা দেশের পক্ষে রাষ্ট্রের এটা স্বৈরাচার পদক্ষেপ মাত্র। আমরা সাধারণ প্রজাগণ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতাহারা হয়ে গৃহবন্দি জীবন অতিবাহিত করে চলেছি। হয়তো পরিণতি অপেক্ষা করছে কবি নজরুলের কাণ্ডারীর মতোই:
"ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।"
জনগণ অধিকার চায়, স্বাধীনতার অধিকার। তাদের প্রতি বঞ্চনা পীড়ন অত্যাচারেরই শামিল।
।। লেখা আহ্বান।।
আপনিও এই বিভাগে আপনার মৌলিক ও অপ্রকাশিত মুক্ত গদ্য একটি পাঠিয়ে দিন অঙ্কুরীশা-র প্রতিদিন বিভাগের পাতায়।
ankurishapatrika@gmail.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন