ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস
(পর্ব- ১৩)
(পর্ব- ১৩)
...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
এন জি পি ষ্টেশনে ট্রেণ পৌঁছালো সকাল নয়টা দশে।। বহুদিন পরে সত্যেন নেমেছে এই ষ্টেশনে।। এক সময় কাজের সুবাদে থেকে গেছে হাকিমপাড়া তে।। হাকিমপাড়া, পাকুড় তলা, বিধান মার্কেট, ভেনাস মোড়, এয়ারভিউ অঞ্চল গুলিতে সেই সময় নিয়মিত ঘোরাঘুরি করেছে সে।। এই ষ্টেশনে ছিলো তাদের আড্ডা।। এখান থেকেই প্রায় রোজ-ই দল বেঁধে ট্রেন ধরতো তারা।। ষ্টেশনটি অনেক বদলে গেছে।। অনেক উন্নতি হয়েছে, আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে ষ্টেশনের গায়ে।।
এস্কেলেটর চেপে প্ল্যাটফরম থেকে বেড়িয়ে এলো সত্যেন।। ফ্লাইওভারের শেষ মাথায় তার নাম লেখা পিচবোর্ড দিয়ে তৈরি একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাড়িয়ে রয়েছে একটি ছেলে।। সত্যেনের বুঝতে অসুবিধা হলো না, রিসর্ট থেকে যে গাড়ি আসবার কথা ছিলো তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, ছেলেটি তারই ড্রাইভার।। একটু এগোতেই কি আশ্চর্য ছেলেটি "গুড মর্নিং স্যার" বলে এগিয়ে এসে তার হাত থেকে লাগেজ ব্যাগটি চেয়ে নিলো।। সত্যেন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, এ্যতো লোকের ভিড়ে তুমি আমায় চিনলে কি করে? তুমি তো আমায় আগে কখনও দ্যাখনি।। ছেলেটি হেসে বললো, স্যার ম্যায় বিট্টু।। পহেচান মে মেরি গলতি নেহি হোতি।। আপ নাগরাকাটা রিসর্ট যায়েঙ্গে তো?
হ্যাঁ যায় গী তো নাগরাকাটা, লেকিন জলপাইগুড়ি পৌঁছনে মে কিতনা দেরী হোগা? বিট্টুকে প্রশ্ন করলো সত্যেন।। ঠিক সেই সময়েই ফোন এলো ইরাবতির।।
-- তুমি কি এন জি পি থেকে গাড়িতে উঠেছো?
-- হ্যাঁ, উঠে পড়েছি।।
-- কতোটা এসেছো? কতো দেরি হবে তোমার জলে (জলপাইগুড়ি) পৌঁছোতে?
সত্যেন বিট্টুকে আবার প্রশ্ন করে, "বিট্টু কিতনি বাজে হাম জলপাইগুড়ি পৌঁছে গী"?
তাড়া দেয় ইরাবতি, "জলদি বোলো, জলদি বোলো, জলদি বোলো"।। বিট্টু উত্তর দেয়, আভি তো রাস্তা কিলিয়ার মিলেগি, আভি পৌনে দশ বাজ গিয়া, হাম গারা (এগারোটা) বাজে পৌছ্ যায়গা।। সত্যেন এবার ইরাবতিকে জানিয়ে দিলো, এগারোটাতেই পৌঁছে যাবো।।
-- পাক্কা?
-- তাইতো বললো বিট্টু।।
-- ওকে।। আমি এগারোটা বাজতে কুড়িতে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবো।। পাহাড়পুর মোড়ে পৌঁছে যাবো ঠিক এগারোটাতে।। তুমি একদম দেরি করবে না কিন্তু।। আমাদের অনেক চেনা লোকজন আছে পাহাড়পুরে।।
-- নারে বাবা।। দেরি কেনো করবো? তার ওপর বিট্টু তো বলছে এখন রাস্তাঘাট ফাঁকা আছে।।
-- আমি কিন্তু ওখানে একা একা দাড়িয়ে থাকতে পারবো না।।
-- আরে দেরি কেনো করবো? বিট্টু তো বলছে এগারোটায় পৌঁছে যাবো।। বিট্টু তাকায় সত্যেনের দিকে।। ঈশারায় হ্যাঁ বলে ঘাড় নাড়ে।। গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে বলে ওঠে, গারা কা দো মিনিট পহেলে পৌছা যায়েগি স্যার।। সত্যেন ইরাবতিকে বলে, "নো টেনশন্ প্লিজ্ ম্যাম্।। আমি ঠিক এগারোটার সময় পৌঁছে যাবো।। তোমার বাড়িতে কোন সমস্যা নেই তো? সব ঠিক হ্যায় তো"?
-- ইয়েস স্যার।। আমি সব ম্যানেজ করে রেখেছি।। এ নিয়ে তোমায় টেনশান করতে হবে না।। তুমি কেবল দয়া করে টাইমে এসো।।
গাড়ি হু হু করে ছুটছে।। একদম ফাঁকা রাস্তা।। মনে হচ্ছে এ্যাডভান্স পৌঁছে যাবে সত্যেন।। অবশ্য মনে মনে সত্যেন ঠিক সেটাই চায়।। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সত্যেন দেখলো দশটা পঁয়ত্রিশ বাজে।। একবার বিট্টুকে জিজ্ঞেস করলো, কিৎনা বাকি হায় বিট্টু? বিট্টু সপ্রভিত উত্তর করলো, হামলোগ গোসালা ছোড় আয়ে।। ঔর বিশ্ মিনিট।। ঠিক সেই মূহুর্তে সত্যেন দেখলো, সামনে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।। দূর থেকে ভিড় কাটিয়ে ঠিক কি অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে না।। শুধু উত্তেজিত মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে।।
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে কয়েকজন উত্তেজিত লোক ছুটে এসে বললো, "গাড়ি ঘোরাও, গাড়ি যাবে না এখন।। অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, স্পট্ ডেথ্।। রাস্তা বন্ধ"।। বিট্টুর কিছু করবার নেই।। সে সঠিক সময়েই আসছিলো।। সেই উত্তেজিত মানুষ গুলি গাড়ির ইঞ্জিনে চাপড় মেরে মেরে বলতে লাগলো, "ভাগো, গাড়ি ঘুমাও, নেহি যায়গা গাড়ি"।। বিট্টু গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।। সত্যেন উদভ্রান্ত হয়ে বিট্টুকে প্রশ্ন করলো, "এখন কি হবে"? বিট্টু উত্তর দিলো, "ক্যা করেগা স্যার ঔর সাত আট মিনিট হ্যায় পাহাড়পুর পৌছনে মে।। দুসরি রাস্তাসে ট্রাই করতি হ্যায়, থোরা লেট হোগি।। শহর কা আন্দার সে জানে পড়েগি।। লেট তো হোগা থোড়া"।। গাড়ি ঢুকলো একটি মাঝারী রাস্তায়।। ঘড়ি দেখলো সত্যেন।। এগারোটা বাজতে দুই মিনিট বাকি আর।। হঠাৎ সত্যেনের মোবাইল বেজে উঠলো।। ওপাড় থেকে ইরাবতি প্রশ্ন করলো, "এখন কোথায় তুমি? আমি পৌঁছে গেছি"।।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন