লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২

প্রকাশিত হল।। অঙ্কুরীশা-র পাতায় — নববর্ষ ১৪২৯ কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।







কলমে—
তরুণ মুখোপাধ্যায় 
অজিত বাইরী 
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
তৈমুর খান
বাবলু গিরি 
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় 
দুরন্ত বিজলী
অমিত কাশ‍্যপ
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 
বিকাশ চন্দ
সুকুমার রুজ
সুজিত রেজ
সমাজ বসু
দীপক বেরা
বিকাশ বর
শুভঙ্কর দাস 
রাজীব ঘাঁটী
অলক্তিকা চক্রবর্তী
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
সুশীল মণ্ডল
ফটিক চৌধুরী
তপন  তরফদার
দীপঙ্কর সরকার
দেবাশিস দত্ত
স্বাগতা ভট্টাচার্য 
অভিজিৎ দত্ত 
সদানন্দ  রাউল
নিমাই জানা
তীর্থঙ্কর সুমিত
সৌম্য ঘোষ
রঞ্জন ভট্টাচার্য
জগদীশ মন্ডল
 অষ্ট দেয়াশী
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
অশোক রায় 
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
মায়া দে 
আল আশরাফ বিন্ধু 
 ইউসুফ রেজা 
নীলেন্দু গোস্বামী
মহম্মদ সফিকুল ইসলাম 
অশোককুমার লাটুয়া 
বিমল মণ্ডল 









মুহূর্ত 
তরুণ মুখোপাধ্যায় 

১.
কখনো তোমার হাত ধরেছি কি?
 করতাল তবু কেন উষ্ণ হয়ে আছে?
 চৈত্রের মন্থর রাতে  কী  জ্যোৎস্না চরাচর জুড়—
 তুমি শুয়ে আছো বাঘের থাবার নিচে 
বুনো গন্ধ মেখে তার;
 আমাকে মনেও পড়ে না জানি।
 তবু তোমাকেই ভেবে জবাসঙ্কশ
 আমার মুহূর্তগুলি 
খুঁজে নেয় সর্বস্ব  ও সর্বনাশ,!

২.
 তোমাকে চেয়েছি আমি বৈশাখী জ্যোৎস্নায়, আকাঙ্ক্ষার আগুনে পুড়েছি কত রাত;
 শুধু ভালবেসে এত দুঃখ কেউ পায়? 
মনে আছে, একদিন ধরেছিলে হাত।




ঝরে যায়    
অজিত বাইরী


যতবার জোড়া দিই,  ছিঁড়ে যায় জাল;
স্বপ্নের রুপোলি মাছ ওঠে না জালে।

নঙ্গর ছিঁড়ে নিরুদ্দেশে ভেসে যায় নৌকো;
ভিড়ে না কোন নির্দিষ্ট ঘাটে ।

জীবনের প্রান্ত-সীমায় পৌঁছে দেখি,
অনর্গল ঝরে যায় গাছের পাতা;
বাতাস নেই; তবু ঝরতেই থাকে।



নতুন টিপ নতুন গান
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

মেয়েটা এখন তাকিয়ে আছে নদীর দিকে 
আকাশের ঐ মেঘ ছেঁড়া দিন রোদের পিঠে।
 নতুন জামার গন্ধে তখন উড়তে থাকে
ব‍্যাগ ভরতি সাদা কার্ডে ছবির তাকে।
বন্ধুরা সব মন ভরেছে অলস ডানায় 
দুহাত বাড়ায় শেষ চৈত্রের ভালবাসায়।
           
সকালটা আজ অন‍্যরকম মনকেমনের ছায়ায় ঘেরা 
মুহূর্তটা বদলে দিল তুলসীতলা জলের ঝারা।
 মাটির জালা বাঁধা আছে দুব্বো ঘাসে
 মায়ের কথা নতুন খাতা সিঁদুর ভাষে।
লাল রঙ আর লাল টিপেরই  নিবিড় টানে 
সকালটুকু ভরছে হলুদ হলুদ গানে।
     
কাঠগোলাপ আর কবিগুরু সরলরেখায়
ছবির সাথে চড়ক বাজে ফুলের মালায়।
শোনিতের রঙ মাখা আছে ঐ ত্রিশূলে 
সন্ধে নামে রাত্রি নামে আকাশ তলে।
আলোর মালা হালখাতা আর মলাট জুড়ে
ক‍্যালেন্ডারের রঙীণ কথা রাখছে মুড়ে।




মৃত্যু
তৈমুর খান

 মৃত্যুর অপেক্ষা করিতেছি 
 শত্রুপক্ষ কখন আসিবে জানি না
 কেমন করিয়া হত্যা করিবে তাহাও বলিতে পারিব না

 দরজার পাল্লাগুলি শিথিল হইয়া গিয়াছে
 শুকনো খড় জমা হইয়া রহিয়াছে
 শস্য মাড়াই করা তুষ গোয়াল ঘরে রাখিয়াছি
 গাভী তাহার বাছুরকে চাটিয়া চাটিয়া আদর করিতেছে

 একে একে সব দেখিয়া লইতেছি
 ঘরের কোণে উবুড় করা আছে ভাত খাইবার থালা
 জল পান করিবার গ্লাস
 পানের বাটায় পান রাখা আছে

 ঘরদোর উঠানে আলোর সঙ্গে অন্ধকার লুকোচুরি খেলিতেছে
 দূরের কোনো নিশাচরের ডাক শুনিতেছি
 এবার হয়তো মৃত্যু আসিবে
 মৃত্যুর পর আমাদের রক্ত গড়াইয়া যাইবে 
                                                        রাষ্ট্রের মানচিত্রের দিকে

 শুধু দীর্ঘশ্বাস গুনিতেছি 
 দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসে ঝড় বহিতেছে.... 




ঋতু রমণ 
বাবলু গিরি 

শব্দ শরীরে ধ্যান মগ্ন। 
কণকপ্রভা ধানক্ষেত,
রমণীরা শস্যবীজ বয়ে আনে। 
মেঘ আঁচল দিয়ে সূর্য ঢাকে, 
শ্রাবণ আসতে দাও,এখনতো 
গোবর জল,নতুন চালের চালচিত্র। 
লালপেড়ে নতুন শাড়ি,কাঠের জ্বালের পায়েস। 
শ্রাবণে গর্জে উঠুক, আহা তখন গালিচা পেতে
 দেবো,প্রতিটি বীজ গর্ভবতী হবে, 
রমণীরা চপচপে শরীরে রোপণ করে, 
মণ্ডুকের কামনার ডাক, মৌরলার ঝাঁক,
গেঁড়ি গুগলিরা সন্তর্পণে প্রসবকরে। 
ধোঁয়া উঠছে নবান্নের পিঠের ধোঁয়া। 
প্রতিটি পক্ষী প্রতিটি বৃক্ষ,এমনকি পাঠশালার
 শিশুদেরও সেই ধোঁয়া জড়িয়ে ফেলছে। 
আহা একি শব্দ একি গন্ধ আমি ধ্যান মগ্ন। 
আমি ক্রমশঃ ঋতু হয়ে উঠি, 
শব্দের ভিতরে, সবুজ রমণীর ভিতরে। 
হে সূর্য মুখ লুকাও,
আমি এখন রমণে,কণকপ্রভা অন্নের ভিতরে।





নববর্ষ
সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

এখন দু চোখে না - বলা গোপন কাব্য
এখনো গভীর রাত্রির সঙ্গে সন্ধি
যোদ্ধারা সব ঘুমিয়ে নিভৃত শিবিরে
মশালের আলো নিভিয়েছে আকাশ দীপ


তবুও আঁধার শেষ কথা বলে না
শঙ্খ চিল নিয়ে গেল ৩৬৫ পাতার কাহন
কাল থেকে শুরু হোক নতুন পথ খোঁজা
যে পৃথিবী জেগে থাকে অভুক্ত শিশুর চোখে






দুরন্ত বিজলী'র দুটি কবিতা 

১.
নতুন বছর


এত জল এত ঢেউ
বুকে হাতুড়ির ঘা মারছে
ভালোবাসার গান গাইতে পারছি না
চোখ বন্ধ করতে ভয়
তাই
নতুন বছরের প্রথম সূর্যের
আলোর দিকে তাকিয়ে আছি

২.
নববর্ষ

হে নববর্ষ
অন্ধকারের কালো দূরে যাক
হারানো দিনগুলির চোখের জল
ভুলে যেতে চাই

নতুন আলোয় এই জীবন
বিশ্বভুবন
শিশুর মুখের হাসি
মায়ের বুকে অমলিন
ভরে থাক

শ্রম ও ঘামের বেদনাসুন্দর পরিবার
পরিপূর্ণ ফিরে আসুক
আমরা পৃথিবীর কোল আলো করি




নববর্ষ 
অমিত কাশ‍্যপ

এক একটা ভোর কেমন অন্যরকম লাগে 
নির্মলদা আর বউদি আজ সেজেগুজে কোথাও যাচ্ছেন 
চিনলেন না, কেন, কোনো কারণ নেই 
কারণ কি সবকিছুর থাকতে হবে 

রাস্তা আজ অন্যরকম, সুগন্ধি যেন উড়ছে 
সকাল মনোরম অনেকদিনই লাগে, আজ যেন 
অদ্ভুত, রোদের মধ্যেও বাতাসে শীতল প্রলেপ 
এমন ভোরে কোলাহল তো হয়ই, আজও

প্রাতঃভ্রমণের সঙ্গী ফুরফুরে মেজাজে সামনে আসেন 
কোথায় চললেন, বলে, হাত বাড়ান, শুভ নববর্ষ 
চকিতে সমস্ত বাঁধন ছিন্ন হয়, নতুন বছর এলে
একটা বছর বাড়ে, আমি বলি আশ্চর্য কমে

সেই নতুন জামা প‍্যান্টের ঘ্রাণ আর মা'র হাতের রান্না 
অতীত ফিরিয়ে দিয়ে বলে, এই তো বেশ






চশমা
গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

আমার দৃষ্টি বেজায় গড়বড় করছে ইদানিং... 

আগে চোখদুটো দিয়ে কেমন মায়াবী 
সব দৃশ্য দেখতে পেতুম...
আজকাল সেইসব চেনা ছবিগুলো বেবাক বদলে যাচ্ছে।


প্যাশনে রক্তিম যে যুগল চোখে পড়ে,
খচ্ করে নজরে আসে তাদের  নখরের ধারালো ফলা।
সজীবতার সবুজ পোশাক যাদের গায়ে
দেখি তাদের মনজুড়ে ও প্রাচীনত্বের ঝুরি- বাকল;
আগুন লাল গা ঢাকা যে মানুষ, 
তার চোখে বিনায়াশের লোভ, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ।
 বৈরাগীর পোশাকে গা-ঢাকা ভেখধারীর
চোখে কুষ্ঠের নীচতা — অসহনীয় দম্ভ! 

শুধু ধূসর ও বল্কল ফুটিফাটা  যারা, 
চোখ দুটো চিনে ফেলে তাদের ঠিকঠাক দীর্ণ যাপন...

 আমার পুরনো চশমাটা এবার বদলাতেই হবে



বছরের জন্ম বদলে যায়
বিকাশ চন্দ

পোষা কলমের শব্দেরা অক্ষর গুঁড়ো খোঁজে 
খোঁজে ভষ্মাধারের হাল হকিকত 
চিতা নেভানো সজল ধারা ভেজায় নিজের মতো
সুন্দর কথাগুলো সেজে ওঠে নিজস্ব অলঙ্কারে
এখন কলম থিতু হয়েছে ঘর পেয়েছে
প্রচলিত অভ্যাসে ছুঁয়ে যায় সাজানো নিষ্ঠুরতা
ক্ষমাহীন কথাগুলো একদিন ঘিরে নেবে শোকের বিদ্বেষ। 

অন্তরাত্মার দায় নেই যতটা জীবাত্মা বোঝে 
অন্তত মুখশ্রী জানে পাকে চক্রের কথা কেরামতি 
বনাঞ্চলের মৃত্যু প্রহর জানেনা শহরের বাসমতী সুখ
গা গুলিয়ে উঠলে শব্দ জীবী থাকেন অক্ষর পরিপাকে
অনেক রাতের অভ্যাস জানে দোমড়ানো বিছানা চাদর
সকল ঘর সংসার বোঝে বেদরদি আগুন খোরাক
এখন সকল কিছুই সালতামামি বিদ্বেষ বেচা। 

অশরীরী আত্মা বোঝেনা আসলে অক্ষরের দিশা
পলকা শরীরে বছরভর ঘিরে নিঃঝুম আকাল
দিন যায় রাত যায় ঘর বদলের লগ্নে হাসে ইমারত
বছর শেষ হবেই এমনিই ব্যাথার কুশলী সহবত 
পাকদণ্ডী ছেঁড়ে হাড় মাংস মজ্জা বেচার গোপন সখ্যতা 
আশ্চর্য একটা নির্বন্ধ সময়ে বছরের জন্ম বদলে যায়। 


 
সুকুমার রুজ-এর তিনটি কবিতা 

১.
অ্যাসিড বৃষ্টি 

তিন জি বি  স্বপ্নপূরণ 
মাত্র দু'বার যৌনতার পিরামিড 
বেয়ে নেমে এলে... 
কী  সস্তা!  
 
এভাবেই রুপোলী মেধা 
মৃত্যু-বিষয়ক আলোচনা চক্রে 
অ্যাসিড বৃষ্টি নামায়... 
 
২.
আয়নামুখী
 
সহনশীলতার আর এক নাম মায়াবী হরিণ 
যা আজ জীবনের খো খো খেলায় 
জ্যা-মুক্ত শুক্রাণুর অমৃত সন্ধান ...
 
তবুও এই ট্রেডমিল সভ্যতা 
মানুষকে বড় বেশি আয়নামুখী করে
 
৩. 
জন্মরোধক
 
মেধাবী গ্রহ কখনও 
নীল-সাদা আলোয় স্নান করে না 
শুধু কৃত্রিম প্রজননে পুংলিঙ্গ খোঁজে... 
পদ্মবনে হাতির দাপাদাপি 
বায়বীয় জনগণকে বিজয় মুদ্রা দেখায়
 
তখন সময় তার সাধনদণ্ডে পরে নেয়  
সবুজ জন্মরোধক



কাতরনামা
সুজিত রেজ

(এক)

এখন পায়ের ছড়াছড়ি ।
শ্যাওলার মতো অসংখ্য পা
                       আমার কানের দু'পাশে ,
যেন পিপড়ের ভূতুড়ে লাইন
                      সরলরেখা—বক্ররেখা ।

এত পা দেখি ,
ওই পা দুটোই মনে পড়ে।


(দুই)

বারেবারে ভরকেন্দ্র  বদলে-বদলে যায়
নির্মাণ -বিনির্মাণের খেলাঘর অন্ধকূপ
জীবন ও জল আহত বন্ধনে কাতরায়
স্যাঁতলানো মেঘ থেকে বৃষ্টি পড়ে অপরূপ 

এত ভার বইবার ক্ষমতা ছিল না আমার
মাঝপথে দড়ি বেয়ে জোকার-পুকার-ধুন
কৃষ্ণগহ্বর ব্রহ্মাণ্ড থেকে অলিভ শূন্যতার
তলদেশে জাতকের ছাইচাপা আগুন 


(তিন)
যে-গাছের ছায়া নেই
যে-গাছের মায়া নেই
সেই গাছজন্ম আমার 

যে-গাছের হাওয়া নেই
ঘুণ ধরে সহজেই
সেই গাছজন্ম আমার

 যে-গাছে পাখি ডাকে না
 জল পড়ে পাতা নড়ে না
 সেই গাছজন্ম আমার



(চার)
শরীর যখন খুলে-খুলে পড়ে
                          শব্দ হয় না
ফুলের পরাগ
সন্ধ্যাসূর্য
নিশিস্বপ্নের ঘোর
                         শব্দ হয় না
শব্দহীন ছেদ রচিত হয় পলে পলে



স্টিমরোলার
সমাজ বসু

আমাদের একটা বসতবাড়ি ছিল---
ইজিচেয়ার,কুয়োর বালতি আর হারিকেন ছিল।
ছাই মোছা হারিকেনের শান্ত অমল আলোয়
কিছু নরম মাটির স্বপ্ন—
তারপর কি এক জরুরী পরিবর্তে স্টিমরোলার
গুড়িয়ে দিল সেইসব দিনযাপনের ছবি---
ধুলোয় মিশে গেল বিশ্বাস সততা আর ভালবাসা।

আজও প্রতিদিন স্টিমরোলার চলছে—
মানুষের অস্তিত্বে আর রাশিফলে।





নববর্ষ ভোর 
দীপক বেরা

চৈত্রশেষের দিনাবসান, গাজনের বাজনা বাজে 
যাপিত জীবনে মোষের জাবরকাটা সন্ধ্যা নামে
গাছগাছালি, প্রান্তরে আসন্ন রাত্রির নিঃশব্দ ছায়া।
সারাদিনের খাটাখাটুনির কালিঝুলি মাখা শরীর, 
ঘেমো গন্ধের গা থেকে ক্লান্তি গড়িয়ে নামে। 
তারই মাঝে কিছুক্ষণ জেগে থাকা দু'টি প্রাণী
সংসার সীমান্তের নীরব দু'টি গোলপোস্টের মত, 
যেন খেলাহীন, প্রতিপক্ষহীন.. 
গোলপোস্ট থেকে গোলপোস্টে তখন 
নেমে আসা অবসন্নতা, দীর্ঘ নিদ্রা যাপন! 

ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতশেষে গৃহস্থের মোরগ ডাকে
গুমোট, দমবন্ধ করা ঘরের জানালা খুলে যায় 
মৃদুমন্দ হাওয়া খেলে যায় সারা ঘরময়, 
পূর্ব দিগন্তে লাল সূর্যটা নিয়ে আসে নববর্ষ-ভোর
বার্তা আনে নতুনের, --নতুন থেকে নতুনতর.. 
পুরনোর মধ্যে খুঁজে নিই,.. অনন্ত বিস্তৃত এক নতুন;
সবুজ জানালা খুলে শুরু হয় আমাদের আশ্চর্য ভবিষ্যৎ! 




মুখোশ
বিকাশ বর

শুধু বছরটা নতুন, আর সব
যা যা আছে সব একই রকম
সেই পাঁজর ভাঙার শব্দ, নীরব অশ্রুপাত
ভুখা পেটের বাড়ানো হাত, ক্ষমতার দম্ভ
আঙুল থেকে খসে পড়া অনন্ত বাসনা--
বিপুল আয়োজনে নতুনের আহ্বান
আর সবাকার মতো আমিও মঞ্চে দাঁড়িয়ে
বুকের মধ্যে পুরোনো ক্ষত, নিঃশ্বাসে বিষ
যতবার নতুনের সুরে গান বাঁধার চেষ্টা করছি
পুরাতন ক্ষত নিংড়ে বেরিয়ে আসছে হাহাকার
কারা যেন মঞ্চ থেকে নামিয়ে দিল আমাকে
তারপর শুরু হল নতুনের আহ্বান—
সেই একই সুর, একই ছন্দ, ঠিক যেমনটা
শুনেছিলাম এক বছর আগেও
নতুনের মোড়কে নিজেকে বদলাতে পারলাম কই!
এবারও নিজের মুখ থেকে
মুখোশটা খুলে ফেলতে পারলাম না!




ধানসূর্যের দেশে
শুভঙ্কর দাস 


ক্রন্দনসংগীতে গোটা ব্রহ্মাণ্ড শিশুর
 মতো বসে থাকে ধুলোয়, মায়ের মূর্তি ছাড়া 
কিছুতেই গ্রহ-নক্ষত্রের বাঁধন ছাড়বে না!

দশহাতের পূর্ণিমা স্নেহময়ী 
শক্তিতে স্থির,পদ্মাসনায় লক্ষ্মী এক পৃথিবীর সবুজে
অপেক্ষারত,সাংলকারা সাজে অলৌকিক 
আলোর আঁচলে চিরন্তন অপত্যে আহুতা...

তবু শিশু অনড়, অবোধ এবং অপরিসীম
 জেদে ধুলোয় গড়াগড়ি... 

কুঁড়েঘর থেকে ছিন্ন-বস্ত্রে বেরিয়ে 
এলো বৈশাখ,দু'হাতে এক মুঠো ভাত, অপর হাতে
 নকশা কাটা হাতপাখা, শুধু ধান্যক্ষেতের
 হাওয়ার মতো ডাক,আয় বাছা, আয় 

শিশু হেসে ওঠে,এগিয়ে যায় নবজন্মের 
মায়ায়,পৃথিবীর ঘরে নিত্য-নতুন পৃথিবী হয়ে...




নতুনের আলোপথ
রাজীব ঘাঁটী


নতুন আসুক, নতুন আসেও
নতুন কিছু মানেই পুরানো হয় অতীতের পাতা
নতুন জলোচ্ছ্বাসে ভেসে আসে আনন্দ ‌বারতা
ভেসে আসা গানে জীবন ছন্দোময় ।

অতীতের সব পদধ্বনি থেমে‌ যায় না তখনো
তবুও আনন্দরা বার বার ‌জেগে ওঠে
সবুজের বার্তায় বদলে যায় আনন্দ আকাশ
সূর্য ওঠা সকালটা তখন লালাভ হয় ক্রমশঃ।

এলোমেলো ভাবনাগুলো একত্রিত হয়ে যায়
বাতাসের সব আলপনা সেজে ওঠে
সব কল্পনারা আশ্রয় নেয় নব ক্যানভাসে
বারতা থাকে পথঘাট জুড়ে নতুনের।

রঙচটা দেওয়ালে তখন কৃষ্ণচূড়া লাল
আমরা ভাসি ভালোবাসার বৈশাখ বরণে।





এসো বৈশাখ, এসো
অলক্তিকা চক্রবর্তী

স্বান্তনা-সাগরে দুমুঠো আলোচাল ফুটিয়ে 
কেঁপে ওঠা রোমন্থনী

এসো সকাল...ও গন্ধ বাতাস

নিয়ত তারতম্য হীন এ জীবন 
কেবল জপের মালায় রুদ্রাক্ষ বীজ স্মরণে কেটে যাওয়া সময়
ধরা পড়ে যাওয়া যতকিছু মারপ্যাঁচ
বিহান বেলায় নৈঋত যাপন
নিরন্তর যুদ্ধ বিধ্বস্ত এ মনটাকে শান্তি দিতে এসো...
শম-দম-তিতিক্ষায় পাষাণ গলানো পথে...

এসো আমূল নাড়িয়ে দাও আমার সংস্কার ভালোমন্দ শুভংকর আয়ুষ্কালটুকু
বর্ণবিশ্লেষণে কুলুকুলু সোহাগের নদী হয়ে
এলায়িত ফাগুন মেঘ
এসো...

আমায় গ্রহণ করো




তুলনামূলক  

 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়


পলাশের বনে জেগে হারানো দুপুর
বিলাসবৈভব নেই আমি এক চাষির ছেলে
স্কুলবেলা ছেড়ে দাঁড়িয়েছি পলাশের বনে
বাইরে প্রকৃতির অপরূপ সাজ দেখে
ভেতরের কবি জাগে
দু-জনে আবেগ-মহুয়া ঢেলে
লড়িয়ে মোরগ করে আসরে নামায়
রূপটুপ কতটুকু বুঝি?গুণও তেমন নয়
অবাকশালিখ হয়ে
চেয়ে থাকি লালে দু-ঠোঁটে টেনে নেবো মধু আর রং
বিভার উজ্জ্বল যার অনন্য গৌরব তার চেয়ে
বেশি দ্যাখো সুগন্ধ দারুণ!
আমি এক নগণ্য চাষির ছেলে এইটুকু বুঝি
রূপ শুধু বাহিরবিলাস নয়,অন্তরের উদ্ভাস




সম্পর্ক
সুশীল মণ্ডল

রাস্তার পাশে গাছটি সবান্ধবে দাঁড়িয়ে আছে
চারপাশে সবুজ ছড়িয়ে গন্ধ ছড়িয়ে
মানুষের প্রতিটি গালমন্দ গাছ
গায়ে মাখে না, পছন্দ করে না ।

বিকেলের সূর্য নানা ঘাটে জল খেয়ে জলের দিকে
স্কুলছুট বাচ্চারা রাস্তার ধুলো মাখছে
বাড়ি ফিরতে চায় না, খেলা চায় ধুলোয় ডুবে
দুর্বল পায়ে বৃদ্ধরা স্টেশনের বেঞ্চিতে ।

পাখিরা একে অপরকে টপকে 
চেনা বাসা চিনে নেয় আপন করে
রাত গভীর হলে আমাদের প্রতিবেশী
মাতাল হয়ে ঠিক বাড়ি ফেরে ।



একাই পেরোতে হবে সাঁকো
ফটিক চৌধুরী

যেন একাই পেরোতে হবে সাঁকো
                    চলে যেতে হবে ওপারে একা একা
যেন কেউ নেই কোন বন্ধু নেই তোমার পাশে
অথচ একদিন মনে হয়েছিল সবাই রয়েছে পাশে
কখনো তো এমন মনে হয়ে থাকে, সবার।

নির্জন আলপথ বেয়ে হেঁটে গেছ কোনদিন
             পাশে সবুজ ধানখেত আর তার দোলা !
এসব তো পাশেই থাকে, দেখে নেয়, আর
                                    ‌‌মনেও দিয়ে যায় দোলা
এরপর একদিন ধান কাটা শেষ হলে
পেরিয়ে যেতে হয় শূন্য আলপথ, একা একা।

এরও পর পেরিয়ে যেতে হবে সাঁকো
যেতে হবে ওপারে। একা।



গভীরে  যাও
তপন  তরফদার

আরও সুন্দর আরোও মনের মত কবিতা চাই
ওরা তো বোঝেনা কোন ফরমায়েশি কবিতা  হয় না
কবিতা হৃদয়ে করাঘাত করে সর্বজনীন হতে চায়
আমার বেঁচে থাকার প্রাণবায়ু যে কবিতারা


কালির আঁচড়ে কখনো এঁকেছি পল্লীর বধুকে
গাঢ়ো কালি ছোঁয়ায় ফুটিয়েছি কলসি কাঁখে রমণীকে
কলম সব বাধা সরিয়ে সঙ্গী হয় কৃষক শ্রমিক ক্ষেতমজুরদের
কলম ক্রোধে  ফুঁসে ওঠে তরবারি হয়ে রক্ষা করে ধর্ষিতাকে

কবি জীবিত বা মৃত যাই হোক ইতিহাস বলে কবিতা মরে না
কবিতা  কয়লার খাদান পেরিয়ে হিরের টুকরো হয়ে জয়ী করে হৃদয়
সমাজ-সভ্যতার ব্যারোমিটার ওই কবির আলোক দিশারী কবিতা
কবির  কবিতা বাঁজা হলে ক্রমশ  সমাজ ও  হবে মৃত
কবিতা বজ্র-বিদ্যুতের মত গজ'ন করোনা
কবিতা  পাহাড়ি ঝড়োর মত বাঁধা ছকে শব্দ করোনা

কবিতা তুমি ছুঁয়ে থাকো বাতাসে, সবুজ বনানী, দুব'দলে
কবিতাকে যে বোঝে প্রণায়মের নিঃশ্বাস টেনে  গভীরে  আরো গভীরে যাবে। 



অলিখিত বর্ণমালা    
দীপঙ্কর সরকার

আমাদের প্রেমগাথা , হৃদয় হরণ কিছু বা চকিত 
                                                                 চাহনি
ভেসে ফেরে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের মতন । কতদিন দেখা
নেই , তবু আছো কাছাকাছি পাশাপাশি আজও হাঁটো
অম্লান বদন -- ঠোঁটে সেই মৃদু হাসি , অলক কুন্তল
                                                                তোমার
ইতস্তত দোল খায় হাওয়ায় হাওয়ায় , তথাপি নিরুদ্বিগ্ন
কেমন উদাস উদাস ! ধরি মাছ না ছুঁই পানি এমনই
মনোভাব বুক ফাটে কিন্তু মুখ ফোটে না তোমার সে
                                                                        বিরহ
যাপন --সব সবটুকু লালিত আমার একান্ত গোপন ,
বলি বলি করেও বলা হয় না বছরে বছর কাটে 
                                                                অলিখিত
সেই চিঠি থাকে অসমাপন , অস্ফুট মনোবেদন নিয়ে
কেমন কেটে যায় কাটিয়ে দিই দুজনে একান্ত আপন ।



যে হাসি বকুল ছোঁয়
দেবাশিস দত্ত

যে হাসি তোমার জন্য ,সেখানে পলির কথা আছে
প্রতিটি কথার ঘরে অপূর্ণ আলোড়ন বাঁচে ।
বিষাদ যুবক আমি একমাত্র তোমার কাছে বিদ্যুৎ রাখি
বিপদসীমার বুকে শঙ্খের চতুর্বেদ মাখি।

যে হাসি নারীর চোখে ঢালে না নদীর রতি
সেখানে থাকে না বৃষ্টি রূপকথা মায়া
শ্রাবণ রহস্য ছাড়া প্রেম তো আগুন নয়, রাত্রির ছায়া।

আমি কবি একটা আস্ত গ্রাম সাজাবো
হাসির সুরে
সমস্ত জ্বর কথা দূরে চলে যাবে
যে নারী পায় নি প্রেম আজানু জীবনে
আমি তাকে নিয়ে যাবো হাসির শহরে

তুমিও তৃপ্ত নও একথা আকাশ বলেছে
এসো প্রিয় অরণ্যের মত ব্যথিত যুবতী
তোমার ময়ূর বুকে নৌকোর ব্যাকরণ দিয়ে লিখে দেবো মাদকীয় বিলাসের রীতি।



মানুষ যখন
স্বাগতা ভট্টাচার্য 

আচ্ছা  মানুষ তোমার মনে আছে?
মাত্র একটা বছর আগেই, মৃত্যু ভয়ে কেমন
স্বজন ছেড়েছিলে! 
একটা অদৃশ্য ভাইরাস  কেমন তাড়া করেছিল তোমাদের। 
বড়ো বড়ো শপিং মল,হোটেল,রেস্তোরাঁ থেকে,
টেনেহিঁচড়ে কেমন ঘরকুনো করেছিলে নিজেদের।
এই তো সেদিন- একমাত্র পুত্র হয়েও চিতায় শায়িত পিতার মুখে আগুন টুকু দিতে চাওনি 
মৃত্যু ভয়ে।
আজ নেমে পড়েছ যুদ্ধ ক্ষেত্রে? 
কি নির্লজ্জ জীব তুমি! 
 সত্যিই আজ লজ্জিত, আমিও তোমাদেরই প্রজাতি! 
তোমরা নাকি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব।
তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব কেবলই ধ্বংসে!
পথ ছাড়েনি তার কোলে বেড়ে ওঠা শিশুটিকে।
নামী ইনস্টিটিউট ছেড়ে ছিলো তোমাদের সন্তানকে। 
ঠোঁটে রঙ মেখে ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গনিকাও আজ লজ্জা পায় নিজেকে মানুষ ভাবতে।


সফল
অভিজিৎ দত্ত 

সফল মানে কী
টাকা ,পয়সার নিক্তিতে 
সবকিছুকে মাপা বা দেখা
নাকি ভালো কাজের মাধ্যমেই
তার বিচার করা?

সফল মানে টাকা,পয়সা রোজগারই 
যদি মুখ্য হয় 
বিপদ তাহলে বুঝতে হবে
উপস্থিত ঘরের দোরগড়ায়।

আজ মানুষ হচ্ছে 
ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক 
পরের জন্য নেই মমত্ববোধ। 
মানবতা,দয়া,মায়া,সহানুভূতি ইত্যাদি
ভালো গুণগুলি হচ্ছে বিলীন 
মানুষ ক্রমশ পরিণত হচ্ছে 
টাকা রোজগারের মেশিন। 
এই যদি হয় সমাজের অবস্থা 
মানব সমাজের অবক্ষয় 
শুধু সময়ের অপেক্ষা ।



এক মাটি ভিন্ন ফসল
সদানন্দ  রাউল

এক মাটিতে কত রঙের ফসল ফলে;
সব পরিচর্যার ফল ।
তোমার মাটি পড়ে আছে অনেক দিন ধরে।
জল, কোদাল, ফসল চাইছে;
তুমি দিতে পারছ না ।
কেন ?
তুমি ওকে নিয়ে ভাবছ না ।
তাই তোমার মাটি কাঠফাটা
রোদ্দুর হয়ে পড়ে আছে ।
তুমি চেষ্টা করো !
মাটির ভেতর অনেক ফসল লুকিয়ে আছে ।
পরিচর্যায় তোমার মুখে হাসি ফুটবে ।
এক মাটি ভিন্ন ফসল ।




চিরহরিৎ ও  ক্রোমোজোম বর্ণের বৈশাখ
নিমাই জানা


বুদ্ধপূর্ণিমা পরবর্তী সেলুলোজ আত্মহত্যা রং নিয়ে আমি আরো একবার বিভূতি কান্নার কাছে বসে পড়বো বীতশোক চাদর গায়ে

সবুজ বৃক্ষের পাতা থেকে সব ধারালো ঔষধি ক্রোমোজোমগুলো বের করে দেখবো প্রভাস রঙের জীবাশ্ম ও শৈশব পোড়ানো ল্যাকটোজেন দানা
মৃতদেহের কি কখনো ফিরে আসার পরান বিন্দু থাকতে পারে না  সফেদা বৃক্ষের মতো , এক তরুক্ষীর চন্দ্রবিন্দু অগ্নাশয় বের করে দেখালো সব আঠালো সম্পর্কগুলো চিরহরিৎ বৃক্ষ হয়ে যায় না অমিতাভ পুত্রের মত , ভূমিতে এক ঈশ্বর শুয়ে আছেন

আমি কোনদিন চন্দন বৃক্ষের কাছে যাইনি , ভয় ও শানিত লজ্জায়
এক স্তনের নারীরাই একদিন জড়িয়ে ধরে কসাইয়ের ডান পা , বর্ণান্ধতা জাতিকাদের লোমশ মুক্ত করে দেবে অসুস্থ সময়ের নব পরাগ
আমি ও একসাথে খেতে চেয়েছি কঙ্কালময় বিছানার অনুদৈর্ঘ্য ছত্রাকদের উধোম গন্ধরাজ ও স্ফুলিঙ্গ নাভি ,
বৈশাখ এলেই আমার মিথোজীবিতা ক্রমশ বেড়ে যায় স্থলপদ্মের নগ্ন বিভাজিকায় বেলপুকুর  , বারবার প্রলয় মন্বন্তর দেখে আঁতকে উঠি বিপ্রতীপ পুরুষদের জন্য
উদোম ফুল গর্ভপাত নিম্নচাপ আশায় সিন্ধু স্নানে গেলেন আমরা বৈকুন্ঠের সহজাত সর্প মন্ত্র নিয়ে হাজারো অমৃত শব্দের উচ্চারণ করি , পাতায় সবুজ ধাতুটি ক্রমশ তরল হয়ে গেল আমরা লবণাক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের মতো নীহারিকা অক্ষরের কাছে আজীবন বেঁচে থাকতে চাই আকন্দ পরাগের পাখি শরীর নিয়ে

আমি কিছু আধসেদ্ধ ভাতের মত মৃতদেহকে লোহিত কণিকার সাথে ভক্ষণ করে যাব বীরেশ্বর হয়ে  




শব্দহীন গাছে
তীর্থঙ্কর সুমিত


শব্দহীন গাছে যখন সন্ধ্যে নামে
আকাশের ঠিকানা হয় এলোকেশী
তারারা খেলা করে মেঘেদের  সরল রেখায়
অচিন্তপুরে অবিশ্রান্ত বিষন্নতা
হাওয়ার ঝলকে রাজনীগন্ধায়  রাত্রি শান্ত হয়
তাই আজ পৃথিবী হাসে
দীর্ঘশ্বাসে আকাশ মুগ্দ্ধতা পায়

মহাশূন্যের পথে যত আলো আজ অন্ধকারে বিলীন।




ইতি

সৌম্য ঘোষ

 

নীরবতা ভেঙে শুধু একবার বলো -
ভালোবেসে রেখেছিলে বাড়িটার নাম,
পলেস্তারা খসে গেছে ভাঙাচোরা ছাদ
ঠিকানাটা বেঁচে আছে আসে নাকো খাম ।
বর্ষারাতে এক বেশে আলুথালু চুলে -
অন্ধকারে মিশে গেলে লিখে রেখে চিঠি,
আর কোনো খোঁজ নেই তবু ভাসে মুখ
ধুম জ্বরে ডেকে উঠি, এক্কেবারে খাঁটি ।
হেরে গেছি সবখানে, আয়নাতে দেখি -
তুমি নেই , তবু আছ - একবুক স্মৃতি,
মনে পড়ে বারবার একখানা কথা -
আনমনে বলেছিলে - ' আজ তবে ইতি ।'




চৈত্রের অবসান
রঞ্জন ভট্টাচার্য


ঘুম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলেও
চৈত্রের অবসানে জেগে ওঠে মন ।
আসে বৈশাখ কালের নিয়মে আহ্বান করি 
নতুনের সমাগম ।
দিকে দিকে ডেকে ওঠে পাখি 
পুরাতন মুছে যায় আসে নতুন 
সুজলা সুফলায় জেগে ওঠে পৃথিবীর বুকে 
হাসি ফোটে মনে গাছে গাছে পাতায় পাতায় ।
কল কল স্বরে বয়ে যায় নদী 
আসা-যাওয়ার খেলায় চলমান জীবনে যেন 
নতুনের সঞ্চালন 
নতুনের সমাগম ।



ভাগ করে খায়

জগদীশ মন্ডল

পুরাতনকে বিদায় দিয়ে
এলো যে বৈশাখ,
শুভ দিনে নতুন আশায়
আয় না মাখি ফাগ।
ভোরের আলো হাতছানি দেয়
গোলাপি আলনায়,
টইটুম্বুর রসের মিঠাই
চাখবি যদি আয়।
নতুন বছর নতুন পোশাক
পরে খোকা গায়,
বিকাল হলে বাবার সাথে
হালখাতাতে যায়।
কতো লোকের সাথে দেখা
সাজানো দোকান,
আসুন আসুন ঠান্ডা ধরুণ
চা দিয়ে সন্মান।
খুব আদরে মিষ্টি মোড়া
প‍্যাকেট ক'টি পায়,
বাড়ি এসে সবাই মিলে
ভাগ করে সে খায়।




মেরুদণ্ড
অষ্ট দেয়াশী

ও দাদা ও দিদি খুঁজছো পথে কী
মেরুদণ্ড হারিয়ে গেছে আমার
তাই খুঁজতে চলেছি। 
অবাক হয়ে যায় আমি মেরুদণ্ড আবার কি
আমি তো জানি মেরুদণ্ড শরীরে আছে
তাকে খুঁজতে হয় নাকি। 
খুঁজতে হয় বয়কি দেখছো না কি চলছে এ সমাজ
চারিদিকে শুধু অশান্তি। 
বলছো কি দাদা মেরুদণ্ড সোজা হয়েই তো আছে
রোজ হাঁটছি সোজা পথে এই আর কি। 
মেরুদণ্ড হারিয়ে গেছে এ সমাজের ভাই
টাকার খেলায় এ সমাজের সব ধামাচাপা পরে যায়। 
বলেন কি দাদা মেরুদণ্ড খুঁজতে গেলে কি করা যায় বলতে পারেন এবার। 
বলবো কি ভাই মেরুদণ্ড হীন মানুষ হয়েছে আজ গাধা
তাই সমাজের বিপদ এতো দেখছো না। 
দেখতে পাচ্ছি সব দাদা অন্ধকার থেকে আসবে একদিন আলো
মেরুদণ্ড সোজা করতে গেলে
মানুষ কে সোজা হতে বলো। 
কি বলবো ভাই মানুষ যদি বোকা থাকে নিজের ভালো না চায়
কোন দিন এ সমাজের সুখ আসবে না। 
ঠিক বলোছো দাদা মানুষ লোভের শিকার 
একশো টাকা অসৎ লোক পকেটে দিলে বলে মানুষ তুমি কতো ভালো দাদা। 
তুমি ঠিক বলেছো ভাই 
মানুষ না সজাগ হলে মেরুদণ্ড সোজা কখনো হবে না। 
দাদা গো বৃথাই খোঁজা মেরুদণ্ড 
মানুষ বড়ো বোকা 
নিজের ভালো ছাড়া এ সমাজের মানুষ কাউকে চেনেনা।



মানুষের কী হবে 
সুধাংশুরঞ্জন সাহা

এই পৃথিবী মানুষের নয় একার।
এ-পৃথিবী নদী, সমুদ্রের।
এই পৃথিবী বন-জঙ্গল-অরণ্যের।
এ-পৃথিবী পশু পাখিদের।
এই পৃথিবী মাছেদেরও।

চলো, পায়ে পায়ে চলা যাক।
পথে পথে হাঁটা যাক।
নদীতে সাঁতার কাটা যাক।
হাতে হাত রাখা যাক।

কোনোদিন যদি শুকিয়ে যায় নদী!
ফুরিয়ে যায় অরণ্য যদি!
মানুষের কী হবে সেদিন?
কী হবে শিমুলের, পলাশের?
কী হবে বসন্তের?


বর্ষ কবিতা
অশোক রায় 

চৈত্রের রাত শেষ তারাদের মিটিমিটি হাসি
প্রাচীন বটবৃক্ষে কচি পাতার উদ্গম রাশি রাশি 
সব গ্লানি ক্লেশ ভুলে পূবালী বাতাস
আনে পত্রালি গুঞ্জনে নতুনের সুবাস
প্রথম বৈশাখী ফুল ফোটে মুগ্ধ কাননে 
আলস্য ঝেড়ে কবির গান শোনো নতুন বাতায়নে

নতুন দিন নতুন বছর মনে নতুন আলপনা
শুরু হল আগামীর পথচলা অনিশ্চয় যাপনা 
নতুন পথের  দিশা দিগন্তের অতুল ভালে
এও জানা আছে আগের মতোই খেলা হবে
মাছ-মাংস-পোলাও দই মিষ্টি বনেদিয়ানা
পত্রলেখার সরব চোখে নীরব হৃদি পান্না

খুশির ঝর্ণাধারায় বাজে শুধুই সৃষ্টির সুর 
মৌমাছি মধুবনে সাজে রক্তিম আলাপের পুর
এ তো গেল কতিপয় মধ্যবিত্তের নবহর্ষ যাপন
নতুন বছর কারে কয় কোথায় কাটে দিন আপন
খবর নেয় না কেউ শুধু  চিন্তার বোঝা বাড়ে
জিনিষের দাম বাড়তেই শখের প্রাণ গড়ের মাঠে।


গন্ধ
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়


মানুষের খুব কাছে গেলে অতি সন্তর্পনে বেরিয়ে আসে তার তীক্ষ্ণ নখ এবং দাঁত
যা দেখে রাক্ষস ও ভয় পায়
মুহুর্তে ডুবে যায় খানদান,চালচিত্র কৃতজ্ঞতার রেকর্ড ,
তবু তুমি মানুষের কাছে যেও
দাঁতে দাঁত চেপে সহ‍্য কোরো তার ডানাপালকের গন্ধ, 
তুমি তো জানো তোমার কাছে আছে সেই মন্ত্রপুত: জল যা একবার ছিটিয়ে দিলে সে
অনায়াসে হয়ে যাবে কেচো
তখন মানুষের গল্প শুনতে তোমার আর অসুবিধে হবে না
মানুষের কাছে গেলে তুমি তখন বুঝবে
তার চোখেও টলমল করছে কান্নার রোল ...



গান
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 

আলোটা কেমন যেন নিভু নিভু ! পথ অস্পষ্ট তাই। উঁচু নিচু পথে মাড়িয়ে এগোতে গেলেই দূরে অন্ধকারের হাতছানি।
আলো নীরবে আমার সাথে থাকে।কপট বন্ধুতার ছল নেই তার চোখের উজ্জ্বলতায়।তার হাসিমুখ আমার প্রাণসুখ।তার আলোভেজা পথের দিশায় লিখে রাখে যেন আমার মুক্তির ঠিকানা।
আবার চলার শুরু। নতুনের মোড়কে। আসলে নতুন বলে তো কিছু নেই ! না -পাওয়াটা আমাকে স্বাগত জানালেই যেন তা নতুন আমার কাছে।
আলোর পথে পড়ে থাকে অন্ধকার পরাজিতের মতো অবনত। এগিয়ে চললেই দেখি দূরে সবুজ পথের রেখায় খেলা করছে আমার নতুন পাওয়ারা ।আলোর শরীর তাদের। সেই উজ্জ্বল আলোর মাঝে আস্তে আস্তে পায়ে পায়ে মিশে যাই ভালোবাসার গান গাইতে গাইতে।



আগুন জ্বালো
মায়া দে

চৈত্র। তোমার চিতা এখনো জ্বলছে 
পুড়ছে বোধ ,পুড়ছে অনুভূতি।
মেয়েটা ও পুড়ে ছাই
দোষ কি তার?
বিদায় দেব না চৈত্র 
তোমায়----
বাতাসে নতুন বছরের ঘ্রাণ।
ঘরে ঘরে নিকোনো উঠোন।
জল ভরা  ঘট।

পিশাচগুলো  ঘুরছে
ডাঁয়ে বাঁয়ে এখনো ।
চৈত্র তুমি চিতাটা  জ্বালিয়ে রেখো-
কিছু পোড়া বাকি।

হাজার হাসখালির মেয়েরা
শালোয়ার পরে ,বেণী দুলিয়ে
স্বগর্বে এসে দাঁড়াক।
হাতের  ত্রিশূল ঝকমকিয়ে উঠুক।
জ্বলবে হাজার আলো।

চৈত্র তুমি থামো।
আগুন জ্বালো।
বৈশাখে ও জ্বলুক চিতা।




পিতার ক্ষমা
আল আশরাফ বিন্ধু 


সন্তান চুম্বনে স্বাদ ভুলেনি 
মৃদু  হাসিতে মায়া,
মনে আগুন জ্বালায় মানুষ
আলোক পূন্য ছায়া।

সাত পুরুষের ভিটা ছাড়েনি 
কবরস্থ ভিতর কাঁয়া;
আজও পিতার ক্ষমা ভুলেনি 
ভূবণ বিজয়ী দয়া।

পূবাল হাওয়ায় ঘুরতে যেতো
উত্তরে  বন- জঙ্গল, 
পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডুবে 
দক্ষিণ সাগরে মঙ্গল।

নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব পালন 
অজুহাত খোঁজা নয়;
মানুষের কল্যাণে সেবা ব্রতী 
করেনি ফিরে ভয়।

পরিবারে সুখের ধর্ম সত্য 
অনুভূতি ঝরে অনুভব ;
সুখে থেকো ভালো রেখো 
সংসার বাগানই সব।



নববর্ষে 
ইউসুফ রেজা 

প্রতিবছর নববর্ষে 
পহেলা বৈশাখে
রবিবাবু এসে আমায়
নিয়ে যায় ঐ শাখে।
পাতায় পাতায় শাখায় শাখায়
কালবোশেখের দিনে
ঘূর্ণিবেগে নজরুল এসে
আমাকে নেয় চিনে
এ দুই কবি বোশেখ এলে
প্রতি ঘরেই রয়
হালখাতাতে বয়স কেটে
সবাই যুবক হয়।



নূতনের ঘ্রাণ
নীলেন্দু গোস্বামী

দুনিয়ার মাঝে এক অদ্ভূত নিয়ম আছে বাঁধা, 
নেই তাতে কোনো জোচচুরি বা অন্য কোন ধাঁধা,
নতুন আসিবে, জায়গা ছাড়িয়া ডেকে নিতে হবে তারে.
পুরাতন তখন পিছন দ্বার বাহি চলি যাবে গৃহের বাহিরে, 
জীর্ণ শরীর ত্যাগ দিয়া যেমন আত্মা চলিয়া যায়, 
তেমন করিয়া পুরনো বছরও ধরা থেকে নেয় বিদায়, 
খর দাবদাহে, চৈতের শেষে বসন্তের সমাপন, 
গ্রীষ্ম আসিয়া হাজির সাথে, গায়ে মেখে নবঘ্রাণ, 
এসো এসো হে নতুন বছর, এসো হে পয়লা বৈশাখ, 
তোমাকে আমার স্বাগত জানাই বাজিয়ে উলু আর শাঁখ, 
এসো এসো ত্বরা  এ ধরিত্রী মাঝে, এসো হে নতুন বছর, 
তোমাকে মোরা আহ্বান করি, তোমাকে জানাই আদর, 
এসো তুমি হেথা সুখ-শান্তি-উন্নতির নিয়ে ডালি, 
নতুন বছরে আমরা সকলে আশার প্রদীপ জ্বালি! 



পায়রা ও শকুন
মহম্মদ সফিকুল ইসলাম 

সুখ-অসুখের পথ বেয়ে বুক পেতে রাখা নীল  সামিয়ানা তলে
একঝাঁক  তুলো তুলো পায়রা ভেসে আসে
তীক্ষ্ণ নখরের শকুনের দল  আগে পিছে 
সূঁচাল চঞ্চুতে বয়ে চলে রাক্ষসী ক্ষুধা,

ধবল শান্তি হাসে আর কাঁদে
যার চোখ খোঁজে প্রত‍্যন্ত প্রদেশে ভাগাড়
আর ভক্ষণের লোভে অপরের মৃত্যু চায় অহরহ;
অভিশপ্ত শুকনো বিলে আহারের তাড়না।

ঝড় নয় ধীর লয়ে
সাদা ডানার কবুতর প্রশান্ত চিত্তে
সন্ধ্যায় রক্তিম আলো মেখে
মেঘমালার হাত ধরে  নিশ্চুপে ভাসে;
শকুনীরাত পার হলে ঝাঁক ঝাঁক কবুতর
নতুন ভোরে সুখ-শান্তির বার্তা নিয়ে ঘোরে 
দেশ দেশান্তরে। 



পুরনো জাঙ্গিয়ার মতন শুভেচ্ছা 
 অশোককুমার লাটুয়া ( সেলুকাস ) 

বৈশাখী পাখিটির পালক ছুঁয়ে 
শেষ চৈতী রাতের জোছনার দিকে ফিরে দেখেছি -- বসন্ত চলে গেছে । 

পুরনো থেকে পুরনোর কাছে 
কিংবা নতুন থেকে নতুনের কাছে 
বিবাহবার্ষিকী অথবা মধুচন্দ্রিমার কাছে ফিরে ফিরে আসা। 
সেই কবে কোভিড এসে আমাদের স্বপ্নের নাট বোল্ট  সব ঢিলে করে দিয়ে গেছে। 
মেরামতি অন্তহীন লাইফের। 
এই তো যুদ্ধ এসে পৃথিবীকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে প্যারাসোনিক মিসাইলে। 
কোনো সেলাই রেঞ্জ আর কাজ করছেনা ; করবেনাও হয়তো আর। 

সব শালা ধোয়া তুলসীপাতা! রাজনীতির নোংরা জলে 
সাঁতার কাটার ভুল নিয়ে বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মতো  পরস্পর ডুগডুগি বাজাচ্ছে পরস্পরের বিরুদ্ধে। 

হাথরাস, হাঁসখালি একদিন বাতিল গল্পের স্তূপ হয়ে যাবে। 
সবজান্তা মাদা মারার মতো 
তবু আমরা হালখাতায় সবাই সবাইকে নতুন ক্যালেন্ডারে পুরনো শুভেচ্ছা জানাবো। 

প্রাগৈতিহাসিক থেকে ইতিহাস 
ইতিহাস থেকে আধুনিক ইত্যাদি কী যাচ্ছেতাই এখনও বাতেলা মেরে যাচ্ছি পুরনো তাপ্পিতেই। 

এরপর হয়তো কোনোদিন আমরাই পালন করব শুভ ঘৃণা দিবস 
সমস্ত ভালোবাসাকে নিন্দুকের মতো ঘাড় মটকে দিয়ে। 

আহা! এমন জন্মান্তরের সাথে  
ভাব না জমালে জন্ম বোধ হয় ব্যর্থ হয়ে যাবে। 

আটপৌরে শুভেচ্ছায় তবু যতদিন যায় চালিয়ে নিতে হবে একটু কষ্ট করে ছিঁড়ে যাওয়া পুরনো জাঙ্গিয়ার মতন। 




শেষ চৈত্রের ভালোবাসা
বিমল মণ্ডল 


কবিতা এখন তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে
প্রচন্ড বৃষ্টি ছেঁড়া দিন মেঘের বুকে
নতুন শব্দগন্ধগুলো ভাসতে থাকে শিলাবৃষ্টি বুকে


জোয়ারের জল পৌঁছে দিয়েছে নতুন দিনের  প্রার্থনা 
অলস সময় ডুবে যাচ্ছে পশ্চিমাকাশে 
নতুন কার্ডের গন্ধ বিলয় কবিতার  নতুন শব্দ ডানায়।


সকাল থেকে মন হারিয়েছে মেঘ-রোদ ছায়ায়
দুব্বো ঘাস আর লাল সিঁদুরে 
ভরে উঠেছে তুলসীতলায় শেষ চৈত্রের ভালোবাসা। 







1 টি মন্তব্য:

  1. উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা হয়েছে। অনেকগুলি লেখা পড়লাম।
    সবাইকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন!

    উত্তরমুছুন