ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৪)
ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য
অনন্যা দাশ
পরদিন সকাল হতে না হতেই রক এসে হাজির। ওর চোখ মুখের অবস্থা খুব একটা ভালো মনে হল না।
ভজা, “কী ব্যাপার?” জিগ্যেস করতেই রক বলল, “আমার স্থির বিশ্বাস গ্রান্ট পা পিছলে পরে যায়নি ওকে ঠেলে ফেলে হত্যা করা হয়েছে!”
ভজার কপালে ভাঁজ পড়ল। অঙ্কন ফস করে বলল, “তা হলফ করে কী করে বলা যায়? ওর গাড়ি তো পার্কিং লটে পাওয়া গেছে। তাছাড়া দুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, ট্রেলের অবস্থা যে ভালো নয় তা তো আমরাই দেখেছি। সে ক্ষেত্রে পা হড়কে পড়ে যাওয়াটা কী খুব অস্বাভাবিক?”
“গ্রান্টের মতন পাকা ট্রেকারের কাছে অস্বাভাবিকই বটে! ও খুবই অভিজ্ঞ হাইকার ছিল। তবে সেটা ছাড়াও আরেকটা ব্যাপার আছে।”
“কী?”
“কেউ একজন গ্রান্টের পিছু নিয়েছিল সেদিন!”
“সেকি! কে সে?”
“তা জানি না। কিন্তু পরশু যখন গ্রান্ট গাড়ি পার্ক করে তখন আরেকটা গাড়িও সেখানে এসে দাঁড়ায় এবং সেটা থেকে একটা লোক নেমে ওর পিছন পিছন পাহাড়ে ওঠে। লোকটার মাথার টুপিটা নীচু করে নামানো ছিল যাতে তার মুখটা না দেখতে পাওয়া যায় আর চোখে সানগ্লাস ছিল মনে হয়। এই বৃষ্টি বাদলার দিনে সানগ্লাসের দরকার তো থাকার কথা নয়! লোকটা মুখ ঢাকার জন্যে ওই সব করেছিল।”
“এত সব কে বলল তোমায়? পুলিশকে বলেছো?”
মাথা নাড়ল রক, “না, পুলিশকে বলিনি। আর বললেও কিছু হবে না কারণ আমাকে বলেছে ক্রেজি লুই। সে ওই পার্কিং লটের কাছেই ঘুরঘুর করছিল তাই দেখেছে। কিন্তু ওকে সবাই খ্যাপা পাগল বলে, বার দুয়েক জেলেও গেছে এটা ওটা চুরির দায়, তাই সাক্ষী হিসেবে ওর কথা পুলিশ মেনে নেবে না কিছুতেই, বিশ্বাসও করবে না! তবে আমি জানি ও সত্যি কথা বলছে। ও গ্রান্টকে খুব পছন্দ করত, গ্রান্ট মাঝে মাঝেই ওকে খাবার দাবার বা ডলার দিত বলে। গ্রান্টের ব্যাপারে তাই ও মিথ্যে বলবে না কখনই।”
“গ্রান্টের কী তাহলে কোন শত্রু ছিল?”
“সে রকম তো কিছু জানি না। ওকে সবাই খুব পছন্দ করত বলেই তো জানি। তবে ছেলেটা বেশি কথা বলত না ওর নিজের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে তাই আমি সঠিক বলতে পারব না।”
“হুঁ। তাহলে?”
“বুধবার দিন ওর ফিউনারাল। ওর বাড়ি এখান থেকে ঘন্টা দুয়েকের পথ। তোমাদের যেতে হবে আমার সঙ্গে।”
“কিন্তু আমরা গিয়ে কী লাভ হবে?”
“ওর পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে হবে গ্রান্ট কিছু বলেছিল কিনা। কে ওর এমন ক্ষতি করতে পারে। আমি আর প্যাট্রিক যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গেই গাড়িতে তোমরা দুজনও চলো। ব্যাপারটা আমার একটুও ভালো লাগছে না!”
ভজা একটু ভেবে বলল, “ঠিক আছে যাবো নাহয়। কিন্তু তার আগে আমি একবার ওই ক্রেজি লুইয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখতে চাই। যে গ্রান্টের পিছু নিয়েছিল সেই লোকটা আর তার গাড়িটা সম্পর্কে আরো কিছু জানা যায় কিনা দেখতে।”
“হ্যাঁ, সে আমি নিয়ে যাবো নাহয় তোমাদের। তোমরা একলা গেলে তোমাদেরকে কিছু নাও বলতে পারে। ও সবাইকে পুলিশের লোক ভেবে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে। আমি একটু পরেই ওদিকে যাচ্ছি। তোমরাও চলে এসো। এই ধরো এগারোটা নাগাদ। ও আর ভালো কথা, পারলে লুইয়ের জন্যে কিছু খাবার তুলে নিও তাতে ওর বিশ্বাস অর্জন করতে সুবিধা হবে।”
যাওয়ার আগে রক বলে গেল, “সাহায্যের জন্যে তোমাদের অনেক ধন্যবাদ। তবে আমার বিশ্বাস গ্রান্টকে খুন করা হয়েছে, ওর মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়!”
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন