লেবেল

বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা: (পর্ব-১৮)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ — বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 





ধারাবাহিক ভ্রমণকথা: (পর্ব-১৮)



পৃথিবীর উল্টো পিঠ

বিশ্বেশ্বর রায়

পরের দিনটাও শুয়ে-বসেই কেটে গেল৷ শুধু অ্যাপার্টমেন্টের সামনের রাস্তায় একটু হাঁটা৷ না হলে খাওয়া, ঘুম আর জানালার পাশে বসে গাড়ির আনাগোনা দেখা, চড়ুই-কাঠবিড়ালি-পায়রা-শালিখের ব্যস্ততা, খাদ্যান্বেষণ দেখা৷ এছাড়া নজরে পড়ে বাচ্চাদের স্কুল যাতায়াত৷ ঘড়ির কাঁটা ধরে প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা বা তার দু'চার মিনিট আগে থেকে এখানকার কর্পোরেশনের কয়েকজন কর্মীর কর্মপদ্ধতি নজরে পড়ে৷ যে তিনজন কর্মী প্লাস্টিক বোতল,ক্যান বা প্যাকেট সংগ্রহ করেন তাঁদের পরনে রোজই দেখি সাদা হাফ প্যান্ট আর নীল হাফ বা ফুলশার্ট প্যান্টের মধ্যে গুঁজে পরা৷ পায়ে সাদা মোজা এবং স্নিকার৷ দু'হাতেই সাদা ধবধবে গ্লাভস্ ৷ বাঁ হাতে ধরা একটা সাদা রঙের বাকেট এবং ডান হাতে বটল-ক্যাচার৷ যা দিয়ে বোতল, ক্যান বা প্লাস্টিকের ছড়ানো ছিটানো জিনিসগুলো ধরে বাকেট ভর্তি করেন সারা অ্যাপার্টমেন্টের বিশাল এলাকা ঘুরে ঘুরে৷ এছাড়া দু'জন রাজমিস্ত্রি, দু'জন স্যুইপার, দু'তিনজন রং মিস্ত্রি প্রতিদিনই সামনের পার্কিং-এ গাড়ি পার্ক করে যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজে নেমে পড়েন আটটার মধ্যে৷ খালি হাতে এখানে প্রায় কাউকে কাজকর্ম করতে দেখি না৷ যার উল্টো চিত্র আমাদের দেশে দেখা যায়৷

      আর আছে পোষ্য কুকুর এবং বিড়াল চরানোর দৃশ্য৷ বলা বাহুল্য প্রত্যেকের হাতেই গ্লাভস্ এবং একটি-দু'টি প্লাস্টিক প্যাকে৷  কুকুর বা বিড়াল পটি করলে তা হাতে তুলে প্যাকেটে ভরে কোনো ট্র্যাসে(বড় ডাস্টবিন, রাস্তার পাশে রাখা থাকে) ফেলে দেন সবাই৷ ফুটপাতে বা রাস্তার পাশে পটি ফেলে রাখা অপরাধ৷রাত প্রায় দু'টোর দিকে বাবাই এলো যেমন বলা ছিল৷ ক্যানসাস সিটি থেকে শার্লট ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট দু'ঘন্টা লাগে ফ্লাইটে৷ ওখান থেকে হার্টফোর্ডের ব্র্যাডলি এয়ারপোর্টও প্রায় দু'ঘন্টার পথ৷ তারপর ওখান থেকে ট্যাক্সি ধরে এখানে আসতে প্রায় আধ ঘন্টা লাগে৷ এখানে প্রতিটি গাড়িতেই নেভিগেটর  বা জি পি এস আছে৷যা ভারতের কোনো শহরে তখনও (২০১২ সালে) চালু হয়নি৷ ট্যাক্সিতে বা গাড়িতে উঠে নেভিগেটরে ডেস্টিনেশন পুট করে দিলেই গাড়ির চালককে সে গাইড করে পথ দেখিয়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় নিয়ে আসবে৷ বাবাইও ওইভাবেই এলো ড্রাইভারকে ঠিকানা বলে৷ ঠিকানা অর্থাৎ রাস্তার নাম এবং বাড়ির নম্বর৷ এখানে বাবাই দশ দিনের ছুটিতে এসেছে৷ এর মধ্যে আমরা নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও নায়াগ্রা ট্যুরে যাব ওর সঙ্গে৷ তারপর ১০ই সেপ্টেম্বর ওর সঙ্গে চলে যাব ক্যানসাস সিটি৷অত রাত্রে খাওয়া-দাওয়া সেরে শুতে শুতে প্রায় সোয়া তিনটে বাজলো৷ তারপর স্বাভাবিকভাবে আর ঘুম এলো না ভালোমতো৷

মাত্র বারো ঘন্টার মধ্যে মানুষেরাজীবনে যে এমন কাণ্ড ঘটতে পারে তা কল্পনা করিও দুঃসাধ্য৷ পরদিন দুপুর বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ বাবাইয়ের ল্যাপটপে এমন একটা mail এলো যার অভিঘাতে ওর এবং আমাদের আমেরিকা প্রবাসের সমস্ত পরিকল্পনা ওলট পালট করে দিলো৷ Mail-এর মোদ্দা কথা হলো ও যে প্রজেক্টে এখানে এসেছে তার ক্লায়েন্ট সাইড হঠাৎই জানিয়েছে যে, ওরা আর এই প্রজেক্টটা চালাতে পারবে না আর্থিক কারণে৷ অথচ ওকে এক বছরের বেশি সময়ের জন্য এখানে পাঠিয়েছে ওর ভারতীয় অফিস৷ কিন্তু ওকে ওই কারণে Roll off করে দিয়েছে৷ অথচ এক বছরের বেশি সময় প্রজেক্টটা চলবে বলে ও এক বছরের টার্মে ঘরভাড়া নিয়েছে৷ প্রচুর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছে৷ এক বছরের টার্মে net-এর কানেকশান নিয়েছে৷ গাড়িও নিয়েছে৷ তার চেয়ে বড় কথা—ও ৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে আছে৷ অথচ ওকে এক সপ্তাহের মধ্যে সবকিছু সামলে আমেরিকা ছাড়তে হবে৷ ছুটির মধ্যে আমাদের Newyork এবং Nayagra ট্যুরের টিকিট কাটা রয়েছে৷ গ্রে হাউন্ড বাসে নিউইয়র্ক যাওয়া-আসার টিকিট কাটা আছে৷ তার চেয়ে বড় এবং সাংঘাতিক কথা বাবাইয়ের এবং আমাদের দু'জনেরও ক্যানসাস সিটি যাতায়াতের ফ্লাইটের টিকিট কাটা হয়ে গেছে পনেরো দিন আগে৷ বিপুল টাকার ব্যাপার৷ কী যে ঘটতে চলেছে আমরা কেউ তা জানি না৷ বাবাই তো নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে ওর জানাশোনা সব Project Manager-দের একের পর এক mail করে ঘটনাটা জানিয়ে চলেছে যাতে এখানে অন্য কোনো প্রজেক্টে ও থেকে যেতে পারে৷ ছুটি কাটানো, বেড়াতে যাওয়া সব মাথায় উঠেছে৷ 'গোদের উপর বিষফোঁড়া'র মতো টানা তিনদিন ছুটি পড়েছে সব অফিসে৷ ফলে কারও কাছ থেকে ভালো-মন্দ কোনো খবর এই তিনদিনের মধ্যে পাওয়া যাবে কি না তাতেও সন্দেহ৷ জানি না কী ঘটতে চলেছে!





ক্রমশ... 






আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_21.html





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন