ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১৩)
ছায়া - ছায়া অন্ধকারের আড়ালে
অনন্যা দাশ
পরদিন সকালে রোহন কুমার পুলিশ স্টেশানে পৌঁছতে মার্কাস বললেন, “একটা খবর আছে। এখন মনে হচ্ছে ঐ পলাশ বলে ছেলেটা কিছু একটা গন্ডগোলে জড়িয়ে ছিল। ওর বেডরুমে খাটের তলার একটা জুতোর বাক্স থেকে বান্ডিল বান্ডিল দশ, কুড়ি ডলারের নোট পাওয়া গেছে! ওর কাজের মাইনে তো সরাসরি ব্যাঙ্কে জমা হত। সেখানে অ্যাকাউন্ট চেক করে দেখা গেছে বাড়ি ভাড়া ক্রেডিট কার্ডের বিল ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অত নোট ওর ঘরে কী করে এল?”
“আপনার কী মনে হয় ও কাউকে ব্ল্যাকমেল করছিল?”
“হ্যাঁ, সেটাই সহজ সমাধান!”
“কিন্তু দীপা মেয়েটাই তো ফোন করে ওকে সেদিন রাতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, মানে যেদিন ওর দুর্ঘটনাটা ঘটে। সেটার কী কারণ হতে পারে?”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না!”
“আমাকে তিনজনের সঙ্গে কথা বলতে হবে আজকে। ডাঃ মিত্র, দীপার বস আর ওর বাড়িওয়ালী। আর আপনাদের কাজ দীপাকে খুঁজে বার করা!”
প্রথমেই ডাক্তার মিত্রর কাছে গেলেন ওঁরা। ডাক্তার মিত্র তো প্রোফেশানাল এথিক্সের দোহাই দিয়ে কিছুই বলতে চাইছিলেন না। শেষমেশ অনেক জোড়াজুড়ির পর বললেন, “না, মেয়েটার মানসিক অবস্থা মোটেই ভালো নয়। খুব বেশি সেশান হয়নি আমার সঙ্গে কিন্তু তাতেই আমার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে ওর মানসিক দিক দিয়ে প্রচুর সাহায্যের প্রয়োজন। দুঃখের বিষয় পলাশের ওই দুর্ঘটনাটা হয়ে যাওয়ার জন্যে ওর অন্য সত্তা ঐশীকে নিয়ে আমার সঙ্গে কোন কথা হয়ে ওঠেনি। ও বলেছিল বলবে কিন্তু সময় হয়নি। তাই ও নিয়ে কিছু বলতে পারব না আমি!”
ওর বস রজারও তেমন কিছু বলতে পারলেন না। শুধু বললেন, “আমার কাছে তো ওর বেশিদিন হয়নি। তবে মেয়েটা কাজ জানে, কাজের হাতও ভালো। বিজ্ঞানও বোঝে। শুধু একটু বেশি ছুটি নেওয়ার প্রবণতা। কিছুতেই শনিবার রবিবার কাজ করতে চায় না!”
ও কোন ওষুধ ইত্যাদি খায় কিনা সেই নিয়ে উনি বা ল্যাবের কেউ কিছু বলতে পারল না। বা ও কোথায় সেই নিয়েও না! ল্যাবে আসেনি বলে রজারকে একটু চটাই মনে হল।
শকটা ওরা খেল দীপার বাড়িওয়ালী মিসেস পালিওয়ালের সঙ্গে কথা বলে। ওঁদের দেখে আর ওঁরা দীপাকে নিয়ে কথা বলতে এসেছেন শুনেই মিসেস পালিওয়াল বললেন, “আমি জানতাম! আমি জানতাম ওই মেয়ে একদিন ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বে! ভীষণ ধুরন্ধর মেয়ে! আর নিজেকে খুব চালাক ভাবে!”
রোহন কুমার আশ্চর্য হয়ে বললেন, “কেন বলছেন ওই কথা?”
“এত বদ মেয়ে! ভেবেছিল আমাকে বোকা বানাবে! আমার বাড়িতে থেকে আমাকেই বোকা বানাবে!”
“কেন? কী করেছিল? ভাড়া দেয়নি?”
“না, না ভাড়া তো ঠিক সময়ই দিয়ে দিত প্রতি মাসে! তা নাহলে তো বাড়ি থেকেই বার করে দিতাম! সেটা সমস্যা ছিল না। মেয়েটা আমাকে ধোখা দিয়ে আমারই বাড়িটাকে সাবলেট করেছিল! আমাকে কিছুটি বলেনি! ভেবেছিল আমি কিছু বুঝব না! কিন্তু আমি কী অতটাই বোকা? একটা অচেনা মেয়ে আমার বাড়িতে থাকবে আর আমি কিছু বুঝব না? আমি হয়তো আর একটা মাস দেখে ওকে চেপে ধরতাম! নির্ঘাৎ পুরো ভাড়াটাই ওর কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছিল!”
রোহন কুমার উত্তেজিত হয়ে বললেন, “আপনি নিশ্চিত ওই বাড়িতে আরেকজন কেউ থাকত?”
“আরে বাবা আমি বাড়িওয়ালী! আমাকে বোকা বানানো অত সহজ নয়! আমি ঠিক দেখেছি! এখানকার মানুষজন হয়তো বুঝতে পারবে না। অনেকটাই দীপার মতন দেখতে আর জামা কাপড়ও একই রকম পরে, চুলও একই রকম স্টাইল করা কিন্তু আমার নাম মেনকা পালিওয়াল বাবা! এত বছর ধরে মানুষ চড়িয়ে খাচ্ছি! আমার চোখে ধুলো দিতে পারবে না! ওটা অন্য কোন মেয়ে। দীপার জামা পরেও আমাকে ঠকাতে পারেনি!”
চলবে...
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
http://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_76.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন