লেবেল

রবিবার, ২৫ জুলাই, ২০২১

আষাঢ়ে গপ্প কথা -১০।। তপনজ্যোতি মাজি।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 




আষাঢ়ে গপ্প কথা -১০


তপনজ্যোতি মাজি





বৃষ্টি সকাল  



নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তৃনা যখন বড় জানালার ধারে এসে দাঁড়াল বৃষ্টির তেজ কিছুটা কমেছে। ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছে। পূবদিকের আকাশ  শ্যমাঙ্গি রমণীর মতো কপালে পড়েছে গলিত সিঁদুরের সূর্য টিপ। কাল রাতে বিছানায় শরীর বিছিয়ে দিতে মধ্য রাত পার হয়ে গিয়েছিল।ইউ টিউব অন করে বনানী মুখোপাধ্যায়ের 'একালের কপালকুন্ডলা'শ্রুতিনাটক টা ইয়ার ফোন লাগিয়ে শুনে শুনে লিখছিল। বইটা সংগ্রহের জন্য জেলা শহরে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও টানা লক ডাউন এর কারণে স্টক শেষ। অথচ  সমীরণের খুব ইচ্ছা রবিবারের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় দুজনে শ্রুতি নাটকটা  উপস্থাপিত করবে। অতএব, সমীরণের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে রাত জেগে ইউ টিউব অন করে লিখেছিল।সকালের চা খেয়ে সমীরণ রেনকোট লাগিয়ে বাজারে গেছে। তৃণা কাপ ডিশ সিঙ্কে রেখে বিছানা পরিপাটি করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিল দ্রুত হাতে। সকালে বৃষ্টি তৃনার মনে অন্য দরজা খুলে দেয়। বৃষ্টির ভাষা বোঝে তৃনা। আজ সকালের বৃষ্টি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতো। স্বভাবে দিলখোলা, বাউন্ডুলে। একটু অগোছালো কিন্তু রোমান্টিক। যেন কাউকে কিছু বলার নেই, অথচ দরজায় কড়া নাড়ছে ।এরকম বৃষ্টিতেই মনে গান আসে। কবিতা আসে। আজও এলো।ওষ্ঠের দুই তীরে সোনারতরী , রবীন্দ্রনাথ।এই কবিতার সঙ্গে তৃনার ফ্রক-বেলার সম্পর্ক। বাবার কাছে তালিম নেওয়া কবিতা। সঞ্চায়িতারপাতা থেকে। এখনও বৃষ্টি দিনে কিংবা বৃষ্টি রাতে এই কবিতা তার হৃদয়ে কড়া নাড়ে। আজও। …কূলে একা বসে আছি… উচ্চারণ করে একটু থামল। নাহ ! সে কিন্তু কূলে একা নয়। তার সংসার আত্মীয়ও প্রিয়জনদের প্রিয় ঠিকানা। সে আর সমীরণ সকলের জন্যে প্রস্তুত। সবার ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় তাদের আনন্দ-সংসার। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জীবন, তাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।  তৃনা এই সম্পর্ককে  লালন করে , ভালোবাসে। ভালোবাসার ভেলায় সব থেকে বড় অবলম্বন সমীরণ। সারাদিন ব্যস্ত। সকাল থেকে রাত্রি। কিন্তু সমীরণ খুব বড় মনের মানুষ। এখানেই তৃনার তৃপ্তি। প্রশান্তিও।বাজার  থেকে ফিরে এসেছে সমীরণ।  রেনকোট ছেড়ে এসেছে নিচে। সামনের চুলে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টি চিহ্ন।এই সময় হাফ কাপ চা পছন্দ করে সমীরণ। আজ বৃষ্টির আমেজ সমীরণের মনেও। আবারও বৃষ্টির তেজ বাড়ল। ঝাপসা হয়ে এলো সকালের আলো। বড় জানালা দিয়ে বৃষ্টির দুস্টুমি ঢুকছে বসার ঘরে। চেঞ্জ করে জানালার কাঁচ টেনে সোফায় বসলো আরাম করে।" আজ আর চা নয়, কফি রেডি করো দু কাপ "  সমীরণের বলার আগেই তৃনা রান্না ঘরে। কিন্তু অবাক হলো, কফির কথা শুনে।কি হলো আজ মানুষটার ! ব্যস্ততা নেই। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সমীরণ বললো,  " আজ সব কিছু হবে অন্যরকম। সব ব্যস্ততা থেকে কিছুক্ষনের ছুটি। কফি নিয়ে এসো। বসো , আর শ্রুতি নাটকের স্ক্রিপ্টটা নিয়ে এসো। একটু রিহার্স করে নেব। " রান্না ঘরের জানালা দিয়ে তখনও বৃষ্টি দেখছিল তৃণা। বেশ বিস্মিত হলো। কি হলো আজ চেনা মানুষটার। ভালো লাগলো। এই ভালো লাগার জন্যেই তো জীবনভর পরিশ্রম করে যাওয়া। এই মুহূর্তটা যতই দুর্লভ হোক সে হারাতে চাইলনা। টি টেবিলে গোলাপী ট্রেতে জোড়া নীল কফি মগ রেখে শোয়ার ঘরে গেল স্ক্রিপ্ট আনতে। একবার  পর্ণার ঘরে উঁকি দিল। মেয়েটা শিশুর মতো ঘুমোচ্ছে। হালকা চাদরটা গা থেকে সরে গেছে। যত্নে চাদরটা ঠিক করে দিল।তৃনার মনেও বৃষ্টি এলো । এই বৃষ্টি মনে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা হলো। স্ক্রিপ্টটা টি টেবিলে রেখে বসলো সমীরণের  মুখোমুখি। সমীরণ স্ক্রিপ্টটা হাতে নিয়ে তৃণার দিকে তাকালো। বাইরে তুমুল বৃষ্টি আর সমীরণের মুখে একরাশ আনন্দ , তৃনার বুক সাংষ্কৃতিক তৃপ্তিতে ভরে দিল। এই মুহূর্তটা তৃণা র স্বপ্নের। আকাঙ্খিত এই মুহূর্তটার অভিব্যক্তি ছড়িয়ে পড়ল তার সারা শরীরে।সমীরণ শুরু করল পাঠ। ঠিক এই সময়  ডাইনিং টেবিলে রাখা তৃনার ফোন বেজে উঠলো। তৃনা উঠে গিয়ে  দেখল স্ক্রিনে সুমিতাভর নাম।সুমিতাভ তাদের ছেলে,রেড ক্রসের অফিসার , ফোন করেছে পাটনা থেকে।ফোন অন করে তৃনা বললো , বল... সমীরণ জানে মা কে সুমিতাভর ফোন মানে অন্তত কুড়ি মিনিটের বিরতি।বৃষ্টি দেখার জন্যে কাঁচ সরিয়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়াল সমীরণ।








আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_40.html




২টি মন্তব্য:

  1. বৃষ্টি ভেজা দিনে স্বামী স্ত্রীর সহাবস্থান খুব সুন্দর
    ভাবে তুলে ধরেছেন লেখক ।মন ভালো হয়ে যায়।

    উত্তরমুছুন
  2. আরও একটু হলে ভালো হত।ভালো লাগলো।

    উত্তরমুছুন