রবিবারের গল্প
অন্তর হাওয়া
দুর্গাদাস মিদ্যা
রমলা আর রমেন। দুজনে দারুণ জোড়ি। বিয়ের আগে মলে বাজার করতে গিয়ে দুজনার মুখোমুখি হয়। অমোঘ আকর্ষণে জড়িয়ে যায় দুটো মন। তারপর একদিন চারহাত এক হয়। রমেন যেদিন ওকে প্রথম দেখে সেদিন থেকেই ও ফিদা হয়ে গিয়েছিল। আর হবে নাই বা কেন। পাঁচশ জনের মধ্যে থাকলেও রমলা কে চিনতে ভুল হবার কথা নয়। রমেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বড়সড় চাকুরে। বেশ মোটাসোটা মাইনের প্যাকেট।
গড়িয়ার পৈতৃক বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে সকাল আটটায় বেরিয়ে রাত আটটায় সাড়ে আটটায় ঘরে ঢোকে। তবে মাঝে মাঝে যে এর ব্যতিক্রম হয় না তা নয়। কোন মিটিং থাকলে বাড়ি ফেরার ঠিক থাকে না।
রমলা এমনিতে বেশ ঠান্ডা। দেখলে মনে হবে যেন ফ্রিজে রাখা বরফের মতো। কিন্তু নিজের আত্মসম্মান সম্বন্ধে ভীষণ সজাগ এবং সচেতন। সেখানে ঘা লাগলে আগুণের মতো জ্বলে উঠতে ওর বেশি সময় লাগে না। রমেন তা বেশ জানে। তবে মাঝে মাঝে যে ভুল হয়না তা নয়। এই ভুল হওয়াতে বিপত্তি হয়েছে বেশ কয়েকবার। রমেনের জিগরি দোস্ত যতীন। যেহেতু এক কোম্পানিতেই কাজ। ফলে যতীনের আসা যাওয়া আছে। আড্ডা চলে ঘন্টার পর ঘণ্টা। যতীনের স্বভাবে একটা গায়ে পড়া ভাব আছে। সেটা যে রমলার নজরে পড়ে নি তা নয়। তবে যতীনের ব্যবহার লক্ষণ রেখা অতিক্রম করেনি কোনো দিন। তবে রমলার ফিগারের দিকে যখন ওর চোখ পড়ে তখন যেন অদ্ভুত এক লোলুপতার আলো ছায়ার খেলা দেখতে পায়। ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভেবে রমলা আত্মতুষ্টি ভোগ করে মজা পায়। রমেনের কানে তোলার প্রয়োজনীয়তা মনে করেনি তা নয় তবে ব্যাপারটাকে লঘুভাবে এড়িয়ে গেছে।
প্রতি শনিবার রমেন এবং যতীন এক সাথে এক গাড়িতে রমলাদের বাড়িতে আসে। হট ড্রিংক চলে, চলে খানা পিনা। রমলার সৌন্দর্যের সাথে আর একটা গুণ আছে তা হল দারুণ রান্নার হাত। হাতের ছোঁয়ায় সব যেন অন্য এক মাধুর্যে উত্তরিত হয়। মজলিসের আবহাওয়া জম্পেশ জমে ওঠে। ম্যাডাম ম্যাডাম করে রমলাকে একেবারে উতলা করে তোলে যতীন। এই আদিখ্যেতা রমলার যে খুব ভালো লাগে তা নয়। রমলা বুঝতে পারে অন্য এক উন্মাদনা যতীনের ভেতর কাজ করে।
যতটা সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে বন্ধুকৃত্য করে রমলা। সেদিন রমেন বাড়িতে ছিলনা। অফিসের কাজে ট্যুরে গিয়েছিল। ফিরে আসার কথা ছিল না তা নয়। যতীন সে কথা জানতো। ফ্যাল্টের দরজাটা আলগা আটকানো ছিল রমেন আসবে বলে। ফ্যাল্টের দরজা খোলা পেয়ে যতিন নিঃশব্দে ঢুকে পড়ে। রমলা বুঝতেই পারেনি। ও ভেতরের ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিল আপন মনে সুডোল দুই বাহু উপরে তুলে। যেন চিত্রার্পিত এক ছবি। মডেলের মতো লাগছিল ওকে। রমলাও বড় ভালোবাসে তার শরীরকে।
লোভনীয় শরীর রমলার সে কথা আগেই বলেছি।যতীন কোনো সাড়া শব্দ না করে রমলার শরীরী বিভঙ্গ চোখ দিয়ে গোগ্রাসে গিলছিল। যতীনের লোভ ছিল না তা নয়। রমেন বাড়িতে নেই দেখে ওর মধ্যে সুপ্ত পাশব সত্তা জেগে উঠলো। সেই লোভ সেই লালসা সামলাতে না পেরে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়লো রমলার ওপর অগ্র পশ্চাৎ চিন্তা না করে। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া রমলা আগুনের মতো গরম হয়ে উঠলো। আগুনের ভাটার মতো চোখ দুটো যতীনকে ঝলসে দিল।
অপদস্থ যতীন ছিটকে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বদলে হাওয়ার মতো। বিশ্বাস ভঙ্গের ক্লেদাক্ত পরিচয়ে বিধ্বস্ত রমলা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো।
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
http://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_25.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন