বাঙালি চিত্রকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ শ্রদ্ধা ও স্মরণে - বিমল মণ্ডল
কলকাতার জোড়সাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল বাংলার সংস্কৃতি চর্চার প্রাণকেন্দ্র। এখানে শিল্পকলা চর্চাও যথেষ্ট প্রাণ পেয়েছিল। এই ঠাকুরবাড়ির শিল্পকলা চর্চার অন্যতম শিল্পী ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যাঁকে আমরা জানি নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতির জনক ও আধুনিক ভারত শিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
অবনীন্দ্রনাথ প্রথম চিত্রকলার মধ্যে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বাপেক্ষা আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে ছিলেন। তিনিই প্রথম চিত্রকলার মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রীতির সার্থক মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন । তিনি Drawing, Pastel, Oil Painting ও জলরঙের কাজ শেখেন ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকের প্রথমে। ইউরোপিয়ান গিল্ডি ও ইংরেজ শিল্পী সি. এল. পামারের কাছে পাশ্চাত্যরীতির অনুসরণেই তিনি কাজ শেখেন। পাশ্চাত্য রীতির তুলনায় ভারতীয় রীতিতেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন বলেই এই রীতির পুনরুদ্ধারে তিনি তৎপর হন।
প্রথমদিকে ছবিগুলি তিনি 'কৃষ্ণলীলা' , শুক্লাভিসার ' যা সম্পূর্ণ ভারতীয় রীতিতে এঁকেছিলেন। এছাড়া তিনি 'বুদ্ধ ও সুজাতা', 'শেষ যাত্রা', 'কচ -দেবযানি' 'বজ্রমুকুট', প্রভৃতি চিত্রগুলি তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিত্রাবলী।
হ্যাভেল সাহেবের অনুপ্রেরণায় ১৮৯৮খ্রীস্টাব্দে তিনি সরকারি Art College- এ তিনি উপবিক্ষ হন। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ভারতীয় শিল্পে "নব জন্মদাতা " বলা যেতে পারে। কলাবিদ্যার শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন সার্থক। তাঁর জনপ্রিয় চিত্রগুলির মধ্যে - 'ভারতমাতা', 'শাহজাহানের মৃত্যু', 'নির্বাসিত যক্ষ প্রভৃতি। তাঁর ছবি প্রদর্শিত হয় লণ্ডন, প্যারিস ও জাপানে। ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতীর আচার্য হন। তিনি সার্থক করে তুলে তুলেছিলেন 'কাটুম - কুটুম ' নামে এক হেলাফেলা শিল্পকে।
জাপানি শিল্পী টাইকানের প্রশিক্ষণে সেই দেশের শিল্পরীতিতে তিনি 'অমর খৈয়াম' চিত্রাবলী সৃজন করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আধুনিক ভারতশিল্পের অন্যতম ব্যক্তিত্ব।
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ৭ই আগস্ট ১৮৭১ খ্রীস্টাব্দে। তিনি ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাতুস্পুত্র, দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র এবং গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র। তিনি শৈশব থেকেই নিজের বাড়িতেই শিল্পচর্চার পরিবেশ পান। তাঁর আজ জন্ম দিন। এই জন্মদিনে তাঁর চরণে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন