বাইশের বৃষ্টিপথে
ও খুকু কান্না থামা
বল তোর মানটা কিসের ?
লাল শাড়ি, সোনার চুড়ি
এনেছি কতই না ঢের ৷
গলে তোর হীরের মালা
খুশিতে খাচ্ছে দে দোল,
তবু জল দু-চোখ ভরে
কথাতে কোথায় সে বোল ?
আরো কি চাই কিছু তোর ?
বলে দে একটু ভেবে,
যদি চাস মা যে তোকে
আরো ঢের আদর দেবে ৷
দূরে ঐ আকাশ পানে
তাকিয়ে অঝোর ধারে
কেবলই যাস কেঁদে তুই
কেন রে বারে বারে ৷
মনে যা সন্দ ছিল
ধরেছি এতোক্ষণে,
মন তোর মেঘেই ঢাকা
হেঁটে যাস কাব্য-বনে ৷
আমিও তোরই সাথে
জেগে রই শ্রাবণরাতে
সে কবির বিদায় আঁকি
বাইশের বৃষ্টিপথে ৷
যে কবি হৃদয় কোণে
জ্বালালেন জ্ঞানের শিখা
কেন শোক তাঁকে নিয়ে
এ তো নয় ললাট লিখা !
চেয়ে দ্যাখ আসছে ভেসে
সৃষ্টির ওপার থেকে
কান্না থামা খুকু
রবিকে নে তুই ডেকে ৷
বন্ধু যে ওরা
ফুল-ফলে ভরা মস্ত একটা গাছ
তার এক ডালে ছোট্ট টুনির বাস
গাছ ও টুনির ভাব জমেছিল খুব
হাসি-মজাতেই দিন যেত বারোমাস ৷
সকাল হলেই গাছের শরীর জুড়ে
ছোট্ট টুনির খেলা হতো লুকোচুরি
কখনো বা তার মিঠে কাকলির সুরে
হাসত যেন ওই গাছটার ফুল-কুঁড়ি ৷
গ্রীষ্ম যখন চোখ রাঙিয়ে সে আসে
টুনিটা লুকোয় সবুজ পাতার কোলে
পরম স্নেহেতে ছায়াগান গেয়ে উঠে
গাছটার যেন ডাল-পালাগুলো দোলে ৷
কখনো টুনিটা মজার খেলাতে যেই...
আকাশের বুকে উড়াল চিত্র আঁকে
গাছটা তখন ফুলের সুরভী ঢেলে
আকুল প্রাণেতে বন্ধু টুনিকে ডাকে ৷
সেই ছবিখানা পড়ে নাতো আজ চোখে !
নিপত্র ডাল বিছায় না আর ছায়া
শোনায় না সে পাতার বাঁশির সুর
নিথর দাঁড়িয়ে ফ্যাকাশে গুঁড়ির কায়া ৷
টুনটুনি তবু একই ভাবে রোজ আসে
গাছকে শুনিয়ে কত কথা বলে চলে
ডানা ঝাপটিয়ে ঠোঁট ডালে ঘষে ঘষে
হারানো দিনের গল্পটা যায় বলে ৷
চোতগাজনের দিনে
ভূত দেখেছ ? দেখতে কেমন ?
কেমন করে হাঁটে তারা ?
সব কথারই মিলবে জবাব
যাও যদি আজ দখিন পাড়া ৷
দখিনপাড়ার ঠাকুর বাড়ি
দিন-দুপুরে ভূতকে খুঁজো ৷
ভূত সেখানে মনের মধ্যে
লাগাম ছাড়া দারুণ গুজব !
ভূত কিভাবে চিনবে তুমি ?
কাজটা তো নয় মোটেও সোজা !
ভূত যে স্বয়ং লক্ষ্মী,কেতো
গণশা বাবু ভূতের ওঝা ৷
রঙ মেখে সঙ সাজে যখন
টিঙ্কু,রামু,গোসাই খুঁড়ো
চোতগাজনের দিন গুলো হয়
"ছুঃ মন্তর" ..."ভুতুম" পুরো ৷
অন্য মা
সবুজ কেটে সাফ করেছো
ঢাকছো ধুলোয় আকাশখানা
ঘুম ভাঙতেই শব্দদানব
কানের ভিতর দিচ্ছে হানা ৷
জমছে জলা,ভাসছে নালা
পলিব্যাগের রাজত্ব আজ ৷
রুগ্নদেহে ধুঁকছো সবাই
হয় না তাতে একটুও লাজ !
বুজিয়ে মাটি করছো ভরাট
ঢেউ খেলানো পুকুরটাকে
কোন স্বার্থে তোমরা সবাই
হত্যা কর নিজের মা'কে ?
এমন মা কি থাকে কারো–
চারপাশে যার শুধুই আঁধার !
সব কিছুতেই লাগছে যেন
হিং টিং ছট গোলকধাঁধাঁর ৷
ঝরায়-খরায় বৃষ্টি লিখে
গাছগুলো সব বাঁচবে যদি
গান শোনাতে আসবে দেখো
জল চিক চিক একটা নদী ৷
নতুন ভোরের পাখ-পাখালি
!ঘুম ভাঙবে মিষ্টি সুরে
জাগবে সবুজ আবার হেসে
চাঁদ তারা আর সূর্য-পুরে ৷
পঁচিশের অঞ্জলি
নতুন ভোরের অরুণ আলোয়
যেই না পাখি উঠল ডেকে
ভোরাই তারা বলল তখন
যাচ্ছি না আজ এখান থেকে ৷
পাতার বাঁশি বাজিয়ে চলে
হাওয়ার গায়ের হিমের গুঁড়ো
বলল, ওরে বৈশাখীমেঘ
দে সাজিয়ে পাহাড় চুড়ো ৷
গাছের ডালে পাতার ফাঁকে
ফুলজোনাকির আলোর বাতি
নিভতে সেও ভুলেই গেছে
উন্মাদনার আর কি বাকি !
সবুজ শ্যামল মাঠকে দেখি
রাঙা ধুলো মাখার পরে
স্বপ্নবুনে মনের ভিতর
মিহিন সুরে গানটি ধরে ৷
নাচনজলে দুলতে থাকে
নৌকোগুলো ফেরির ঘাটে
জুঁই চামেলী গন্ধ ঢালে
নতুন দিনের সহজপাঠে ৷
চোখের পাতায় ভিড় জমে যায়
এমন হাজার রকম ছবির
আসলে তো অঞ্জলি দেয়
আজ পঁচিশে ঠাকুর রবির ৷
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন