।।প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -১৪।।
দীপক বেরা- র কবিতা
১.
ঠিকানা
মনে পড়ে একটা বাড়ির ঠিকানা।
বিকেলের রোদে ছায়া-ছায়া মায়াময় ঘর
সেখানে একটা গ্রাম আছে নদীর ধারে
মাঠ ঘাট প্রান্তর, চেনা-চেনা মানুষের মুখ
আজও ভালোবেসে জড়ায় বুকে
কথার পিঠে কথা বলে, শুধায় ভালো-মন্দ।
যত দূরেই যাই...
সাথে সাথে হেঁটে চলে দুচোখের স্বপ্ন-মায়া
মায়ের দুটি স্তনের মতো—জননী ও জন্মভূমি।
২.
কৃত্রিম
আমিও দেশে ফিরেছি।
নদীপার ধরে হেঁটে যাই
ভাঙা বাঁধ, বালির বস্তা ও পাথর
কুয়াশার ভিতর নিঃশব্দ নদীস্বর
ইটভাটা শিল্প, চিমনির ধোঁয়া দেখি
ইটের গায়ে ছাপ ওঠা নাম
সীতা, শ্যামা, লক্ষ্মী, বিষ্ণুপ্রিয়া।
নদীপারে মাটি-উৎসব, জনসমাগম
নদীস্নান সেরে নেব একা একা, মনে মনে
এখানে এখন কেউ বাড়িয়ে দেয় না হাত
এগিয়ে আসে না ঢেউ, জলনূপুর
কেউ বলে না ক্ষণ-সঙ্গমে অমরতার পথ।
নদীপার ধরে হেঁটে যাই
গাজনের বাজনায় কাঁপে পাখিপালক
দোয়েল শ্যামা ফিঙে নেই, পাখিডাক নেই
নদীচরের জল স্পর্শ করেছে গাড়ির চাকা
সানগ্লাস পরা তরুণ-তরুণী,.. জলকেলি।
সারি সারি ঘর, আবাস, জলজ সমাজ
জেলেনি দুয়ারে মাদুর পেতে বসায়
অবচেতনের স্তর ভেদ করে হঠাৎ
নদীপারের আবাসে ফোন বেজে ওঠে
রিংটোনে কোকিলের 'কুহু' আওয়াজ
কৃত্রিম হলেও জেলেনিটি পেয়েছে লাজ!
৩.
কেউ জেগে থাকে
সারাদিন খরতাপে পুড়ে ও পুড়িয়ে
প্রতিদিন সূর্য ডুবে যায়।
সূর্য ডুবে গেলেই কি সূর্যাস্ত হয়, আর
তার সাথে কি সবাই ডুবে যায়?
যেদিন পাড়ার ওই পাগল চিত্রকর
বিকেল বেলায় রং-তুলি নিয়ে
লাল রং ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেয় পশ্চিম আকাশে
সেদিনই আমাদের রক্তিম সূর্যাস্ত হয়।
তারপর মধ্যরাতে কালপুরুষ জেগে থাকে
জেগে থাকে সপ্তর্ষিমণ্ডল...
কেউ ডুবে গেলে, কেউ ঠিক জেগে থাকে।
৪.
মগজহীন
ভাত কাপড়ের চিন্তা ছাড়া
আমাদের মনে আর কোনো ময়লা নেই
তবু খুব ভয়ে ভয়ে থাকি—
দেবী বানিয়েছি যাকে
সে যদি সব স্রোত কেড়ে নেয়?
মনের ভিতর তাকে লালন করি
নিজেকে আড়াল করে, তাকেই দেখি
বুনোফুলের মতো স্নিগ্ধ রূপ তার
রূপের চেয়ে গন্ধ বেশি, রহস্য অপার
শয়নে স্বপনে জাগরণে শুধু মধু পান করি
মগজে বেদম মধু-গন্ধ মায়া জ্বলে
চরম নেশাখোরের মতো ঢুলু ঢুলু চোখে
কেমন মগজহীন, মুহ্যমান মূক হয়ে যাই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন