।।প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -১২।।
খুকু ভূঞ্যা -র কবিতা
১.
পিয়াস
আজকাল সব হারিয়ে ফেলি, শুধু যন্ত্রণা ছাড়া
একাকীত্বের করুণ আবেদনগুলো যতই গা ঘেঁষে বসে
সরে যেতে থাকে চেনা মুখ, নাড়ীর টান অথবা মুঠোয় লুকিয়ে রাখা উষ্ণতা
এত শূন্যতা কোথা হতে আসে প্রত্যুষা
পুবদিকের জানালায় মাথা রেখে আঁচল ভরেছি রোদ কণায়
চিতা জন্ম দিচ্ছে একটু একটু ঊষাকাল
তবে আমি কি ভালোবাসি অন্ধকার
সেতো জানে তার বুকে চাঁদ রেখেছিলাম সঙ্গমের ছলে
আলোর ঘোড়াগুলি টগবগ বাড়িয়ে দেয় সবুজ গতি
জীবন ফিসফিস করে প্রতীক্ষা ও মিলনের মাঝে
সময়ের সর্বনাশ দেখে, চোখ যদি চেপে ধরে
হত্যাদাগ
তুমি তাকে নিরাময় দিও ,হে বৈকুণ্ঠ পুরুষ
২.
কিছুটা সকাল হোক নিজস্ব
দূরে সারি সারি ধান চাঁই
কৃষকের ঘাম ছুঁয়ে ফুটে আছে কানসিড়ে কুলেফুল
শিশুর মত নরম চোখ মেলে ঘুম ঘুম দিবাকর
ভেজা ঘাসে মায়ের মমতা শিশির
কৃষকের মনে সমবছরের আশা দোল খায়
কদিন পর নবান্ন
তোমাকে হিসেব দেব না কী চাই
জোসনায় ধুয়ে রাখা চোখের কিনারে অংকুরিত স্বপ্নের সমাহার
এটুকু গুছিয়ে রাখতে দাওনা
আকাশ আজ হাসিখুশি
পায়রা পালকে লেগে থাকা রোদ মুছে দেয় গোপন দুঃখ
তুমি সিংহাসনে বসে ভাবছ, সময়ের চোখ থেকে ঝরে পড়া রক্ত মুছিয়ে
ভেঙে দেবে ব্যাধের আয়ুধ
সে তো তোমাকেও গিলছে পাখির চোখের নিশানা দেখিয়ে
সবাই বন্দী
চক্রব্যুহে ঘুমিয়ে ভাবছি ভোর হতে কত বাকি
কিছুটা সকাল হোক নিজস্ব
টানাপোড়েন জীবনের আলপথ ঢেকে থাক ঘাসে
চোখে থাক ধানিখড় জমি --
৩.
প্লাবন থেকে দূরে
কেউ যেন শব্দ বন জ্বালিয়ে দিয়েছে মশাল জ্বেলে
সেই থেকে আলো আমার ভয় করে
আগুনের সংস্পর্শে গেলে পুড়ে যায় চোখের ত্বক
এতদিন ঠিক ছিলাম
চাষবাস ঘরবাড়ি উঠোন দিয়ে আটপরা যাপন
হয়তো অভিমান এক দুপশলা বৃষ্টি এনেছে
কালবৈশাখী নামিয়েছে পাকা ধানে
উড়েছে চালের খড়
ভেজা কেন্নোর মত -----
থাক সেকথা
তবু কারুর ঘুম ভাঙেনি মাঝরাতে
বন্ধ হয়নি বিবাহ বার্ষিকী জন্মদিন বড়দিন উৎসব
অক্ষর হেজে গেল যেই আমি অনাথ
আমার ঘরবাড়ি নেই স্বজন নেই
প্রেমিক বন্ধু ---
আলোর প্লাবন থেকে দূরে
অন্ধকার খুঁটে বেঁধে নির্জন একা
পৃথিবী ঝিমোচ্ছে আলোর জন্ম দেখতে দেখতে
৪.
অনাগত মৃত্যু
এই শোয়া বসা ভাত খাওয়া জীবন বিছানা নিলে বেড়ে যায় তোমার আদর
সারা আঁচের আগুন জমা হলে শরীরে এগিয়ে আসে জলপট্টি হাত
চোখের ঘুম গাঢ় হলে ---
গাঢ় থেকে নিবিড় স্তব্ধ --
কত ছায়া চারপাশে,কত শোক বিলাপ দেওয়া নেওয়া
যে কখনও মুখের দিকে ভালো করে দেখেনি সেও বলে কী ভালো ছিল গো
শুধু সন্তান জানে তার পৃথিবী প্রবল অন্ধকার
পা ঘসে পিঁপড়ে মারার মত মৃত্যু দরদহীন পড়শী
কখন যে কাকে খাবে,পাড়ার বখাটে ছেলে
ছুরি মেরে পালাবে
পুজোর সাজি ভরে রাখ রাই
শুধু ফুল গাছ লাগা ভেতরে বাইরে
ফুলের স্নায়ু ছুঁয়ে থাকলে,অনাগত মৃত্যু
সূর্যমুখী ভেবে পালিয়ে যাবে --
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন