অণুগল্পের আড্ডা - ৪১
মেঘ বৃষ্টি পাখিরা
প্রণব ঘোষ
সেদিন মার খাটের তলা পাওয়া গেল একটা মুড়ির কৌটো, আর একটা ভাঙা বিস্কুটের কৌটো। অমলের মনে পড়ে গেল, সকালে বিকেল মুড়ি, বিস্কুটের ভাঙা টুকরো ছড়িয়ে দিত সামনের রাস্তায় । এক ঝাঁক চড়াই, কয়েকটা শালিখ, এমনকি একটা কাকও এসে খুঁটে খুঁটে খেয়ে যেত। মা আজ চলে গেছে বছর দুয়েক হবে। সেই সঙ্গে পাখিরাও যে কোথায় চলে গেছে কে জানে। অমল কয়েকটা ভাঙা বিস্কুটের টুকরো জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিল। তারপর অপেক্ষা। কিন্তু কোনো কাকপক্ষীও এলো না। একটা রাস্তার কুকুর এসে সব চেটেপুটে খেয়ে গেল। অমলের এখন কোনও কাজ নেই। রিটায়ার করার পর বাড়িতেই বসে থাকে। বাজার হাটও করতে যায় না। এখন ওর কাজ হয়েছে রোজ মুড়ি বিস্কুট ছড়িয়ে দিয়ে দেখা কোনও পাখি আসে কি না আসে। অমলের বৌ নীতা রাগারাগি করে। বলে, 'কি তীর্থের কাকের মত রোজ বসে থাক। চড়াই পাখি আর আসবে না, মোবাইল টাওয়ারের জন্যে। ওরা চলে গেছে দূরে বনে জঙ্গলে'। অমল মানে না। মনে মনে বলে, 'মানুষ আর ওদের ভালো বাসে না, তাই ওরা মানুষকে পরিত্যাগ করেছে'। সেদিন দুপুরে সারা আকাশ জুড়ে মেঘের ঘনঘটা। শরতের নীল আকাশ হারিয়ে গেল মেঘের দাপটে। হঠাৎ ক্যাঁ ক্যাঁ আওয়াজ। অমল দেখে এক ঝাঁক টিয়া উড়ে এসে ওর জানলার নীচে রাস্তায় পাঁচিলে বসেছে। অমল তড়ি ঘড়ি মুড়ি আর বিস্কুটের টুকরো ছড়িয়ে দিল ওদের মধ্যে। আর টিয়ারা ঝাঁক বেঁধে খেতে শুরু করল সে সব। অমল মুগ্ধ হুই দেখতে লাগলো লাল ঠোঁটের সবুজ টিয়াদের। আর তখনই আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি এল। আর বৃষ্টি এল অমলের দুচোখেও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন