ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-২২)
... এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
কথা অনুযায়ী সত্যেনের রবিবার ট্রেন ধরে সোমবার পৌঁছানোর কথা।। কিন্তু রবিবার ছুটির দিনটি চুটিয়ে উপভোগ করবার লোভ কিছুতে সামলাতে পারলো না সত্যেন।। একই সঙ্গে ইরাবতি কে দেখবার, ছুঁয়ে নেওয়ার দুর্বার আকর্ষণ তাকে টিকিট কাটবার সময় একদিন আগেই মানে রবিবারের বদলে শনিবারের টিকিট কেটে নিতে প্রভাবিত করলো।। ইরাবতি কে ফোন করে সত্যেন জানালো, রবিবারের টিকিট নেই, সে শনিবারের টিকিট পেয়েছে।। তাই টিকিট কেটে নিয়েছে।। অর্থাৎ সোমবারের পরিবর্তে রবিবার ভোর বেলা সে পৌঁছে যাবে।।
তার মনের যা অবস্থা তাতে আজ এই মুহূর্তে পৌঁছে গেলেই সবথেকে ভালো হয়, কিন্তু শুক্রবার সত্যেন কে তার ব্যবসার একজন ক্লায়েন্ট একটি অর্ডারের জন্য ডেকে পাঠানোর জন্য তাকে শুক্রবার পর্যন্ত নিজের শহরে থাকতেই হবে।।
ট্রেনে ওঠবার ঠিক আগে সত্যেনের মোবাইলে ফোন ঢুকলো ইরাবতির।।
-- হ্যালো তুমি ষ্টেশনে পৌঁছে গেছো।। সটান প্রশ্ন করে ইরাবতি।।
-- না শিয়ালদহ যাচ্ছি।। পৌঁছে ট্রেন ধরবো।।
-- তুমি শিয়ালদহ পৌছাও নি এখনো? - কাতর ভাবে আবার প্রশ্ন করে ইরাবতি।।
-- না আগের ডানকুনি লোকালটি কি একটি কারণে ক্যানসেল্ ছিলো, তাই সঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারি নি।।
হতাশ ইরাবতি বলে ওঠে, তোমার জন্য ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? সে তো তার টাইমে ছেড়ে দেবে।।
-- সে তো ছাড়বেই।।
ইরাবতির গলা আরও হতাশ শোনায় "আর তো মাত্র কয়েক মিনিট বাকি।। মানে তুমি আসতে পারছো না"।।
-- আমি যাবো তোমার কাছে।। ট্রেন না হলে ধর্মতলা থেকে বাসে যাবো।।
কেমন সন্দেহ হয় ইরাবতির।। সে বলে, সত্যি বলো তো তুমি কি শিয়ালদহ পৌঁছে গেছো?
-- এখন দক্ষিনেশ্বর ষ্টেশনে ঢুকবো।।
-- তুমি শিয়ালদহ না গিয়ে নেমে যাও দক্ষিনেশ্বরে।। ট্রেন তো ওখানে স্টপেজ দেবে।। ওখান থেকে উঠে পড়ো।।
-- এটি দার্জিলিং মেল নয় ম্যাডাম।। দক্ষিনেশ্বর দিয়ে যাবেও না, এই ট্রেনের রুট আলাদা।।
সম্বিত ফিরে পায় ইরাবতি।। বলে, "ও: হ্যা।। তাই তো, আমি ভুলে গেছিলাম।। এখন তো দিনের বেলা।। না দার্জিলিং মেল তো রাত দশটায়।। তাহলে তুমি তো ট্রেন পাবে না।। কি হবে? ট্রেন ছাড়তে তো মিনিট দুই বাকি আছে"।। ইরাবতির উদ্বিগ্ন গলা সত্যেনকে খুব প্রভাবিত করে।।
-- ঠিক আছে, তাহলে ট্রেনে উঠেই পড়ি।। এখনই তো ছেড়ে দেবে।।
এবার ইরাবতির বুঝতে অসুবিধা হয় না, সত্যেন তার সঙ্গে ইয়ার্কি করছে।। বলে ওঠে, "শয়তান একটি"।। একটু থেমে আবার বলে, "হাঁদারাম খুব চালাক হয়ে গেছে না? আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে"?
হো হো করে হাসতে থাকে সত্যেন।। বলে, কি হাঁদি কেমন দিলাম?
ইরাবতি বলে, হ্যা হাঁদারাম, এসো, তারপর তোমার হবে।।
-- কি হবে শুনি? পৌঁছে যাবো তো ভোরের আলো ফোটার আগেই।। সবাই তখন ঘুমিয়ে কাদা।। তুমি বুঝতেই পারছো কি হবে তোমার?
এবার ইরাবতি বলে ওঠে, না একদম শয়তানি করবে না।। চুপচাপ ঘরে এসে বসবে।।
আবার হো হো করে হেসে ওঠে সত্যেন।। ইরাবতি কি যেন বলতে যায়।। সত্যেন তাকে থামিয়ে বলে ওঠে, আজ রাতে দুই পিস্ মাছ আমার জন্য ভেজে রেখো, আমি গিয়ে ভাজা মাছ উলটে পালটে খাবো।। "চুপ্" বলে ওঠে ইরাবতি।। তারপর বলে, তোমার জন্য তো মাছ ভেজেই রাখবো।। কিন্তু তুমি পৌঁছোতে পারবে তো আমার বাড়িতে? ঠিকানা আছে তো?
সত্যেন বলে, আমি ঠিক তোমার গায়ের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে পৌঁছে যাবো।। এবার ইরাবতি আবার বলে ওঠে, "চুপ যা বলছি শোন।। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে এসে একটি টোটো ধরবে।। বলবে পালপাড়া তেরো নম্বর গলি।। দশ টাকা ভাড়া।। তবে অতো সকালে বেশি ভাড়া নিতেই পারে।। তেরো নম্বর গলির শেষ মাথায় নেমে আমাকে ফোন করবে।। আমি তোমাকে ডেকে নেবো।।
তোমার ঘুম অতো সকালে ভাঙবে তো? প্রশ্ন করে সত্যেন।।
যা বললাম, মনে রেখো।। পালপাড়া তেরো নম্বর গলির শেষ মাথায় নামবে।। তারপর কি করবে? এবার উল্টো প্রশ্ন করে ইরাবতি।।
-- কি আবার করবো? তোমাকে ফোন করবো।। কিন্তু তুমি এমন করে বলছো, যেন এখন থেকে পৌঁছানো পর্যন্ত তোমার সঙ্গে আমার আর কথা হবে না।। যেন তুমি আমাকে বলে এখনই মহাকাশ ষ্টেশন পৌঁছে যাবে।।
দুজনেই হেসে ওঠে একসাথে।। ইরাবতি প্রশ্ন করে, ট্রেন এখনো ছাড়ে নি? সময় তো পার হয়ে গেছে।। মৃদু প্রতিবাদ করে সত্যেন।। বলে, তোমার ঘড়ি ফার্স্ট আছে।। এই ঠিক সময় হলো।। এখনই ছাড়বে।।
ট্রেন চলতে শুরু করে।। সত্যেন চলেছে ইরাবতির বাড়ি।। ইরাবতির সঙ্গে তার আবার দেখা হবে।। সে ইরাবতির সান্নিধ্য পাবে ভেবে আনন্দে সত্যেনের বুক ভরে ওঠে।।
চলবে.....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন