অণুগল্পের আড্ডা -৩৭
পালক
তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য
আজ আকাশটা একটু ময়লা দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কতদিন একটা সাদা কাপড় আকাচা পড়ে আছে। ইচ্ছে করছে ভালো করে আকাশ টাকে ধুয়ে একটু নীল দিয়ে দড়িতে মেলে দিই।ঠিক যেন বিল্টুর মায়ের শাড়ি। বেচারি ঘুঁটের ব্যবসা করে সারাদিন আগানে বাগানে গোবর কুড়িয়ে ঘুঁটে দিতে দিতে চামেলী নিজের আর খেয়াল রাখতে পারেনা। ওর ছেলেটাকেও আজকাল তেমন দেখা যায়না ছয় সাত বছর বয়স হবে। হয়তো স্কুলে পড়ে। যাই একটু মুকুন্দপুর স্টেশনের দিকে। উরি বাবা কি ভিড়! এই ভর দুপুরে ছুটির দিন এত মানুষ কোথায় যাচ্ছে ?স্টেশনে বেলা মাসির চপ খুব বিখ্যাত। মাসির দোকানে মাছি গলবেনা দেখছি। একটু ভিড় ঠেলে গিয়ে বল্লাম ও বেলা মাসি এত লোক কেন আজ? মাসি বললো "তোমার বিয়ে তাই নেমন্তন্ন খাইতে আইছে লোক বুঝলা?" আমার খুব হাসি পেল আর সব লোক আমার দিকে তাকিয়ে খানিক হেসে নিলো। একটি আমার সমবয়সী তরুণ বললো আজ "হলদে পার্টির" মিটিং তো তাই গ্যাদারিং"। আমি বল্লাম হলদে পার্টি তো শুনিনি কোনোদিন? তরুণটি উত্তর দিল "আপনার কানের সমস্যা আপনি শোনেননি আমি কী করতে পারি?"আমি দুটো চপ খেতে খেতে রথতলা বাজার গেলাম। একটি বাচ্চা কখন থেকে হাত পাখা বিক্রি করছে । খুব সুন্দর রঙিন হাতপাখা। দেখে খুব কষ্ট হলো আহা কতটুকু বাচ্চা মায়া ভরা চোখ।
তা বলি কত দাম? বললো "দশ টাকা"।আমি দুটো দশ টাকার নোট একত্রে করে ওকে দিলাম। ও একটি নীল পাখা দিল। তারপর পয়সা গুণে আরো এটি গোলাপি পাখা দিল। আমি বল্লাম পাখা লাগবেনা আর,তুই দশটাকা রেখে দে।ও বললো না আমার পয়সা লাগবেনা।
জিজ্ঞেস করলাম পড়াশোনা করিস? বাচ্চাটি বললো "তিন ক্লাসে পড়ি"। বল্লাম নাম কী?" বললো "বিল্টু"। আমি বিস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলাম তুই চামেলীর ছেলে? তোর মা ঘুঁটে বিক্রি করে? বললো "হ্যাঁ হ্যাঁ, আর আমি তোমাকে চিনি তুমি গানের দিদিমণি"। আমি জানি তোমার গান " আমরা সবাই রাজা "... গাইতে গাইতে ছেলেটা বাজারের ভিড়ে মিলিয়ে গেল "পাখা চায় পাখা"..। মনে হলো একটা পালক হাওয়াই উড়ে এসে আবার হাওয়াতেই ভেসে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন