ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-৬)
...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্যমুরলী সত্যিই দারুণ গাড়ি চালায়।। কখনও নিজের কন্ট্রোলিং নষ্ট করে না।। অকারণ ব্রেকে পা দেয় না।।প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী গাড়ির স্পীড সে কখনও বাড়ায়, কখনও ধীর- শান্ত গতি।।
গাড়ি হোটেলের গেটে এসে দাঁড়াতেই তড়িঘড়ি বিল মিটিয়ে, মুরলীর হাতে একশোটি টাকা টিপস্ গুঁজে দিলো সত্যেন।। কথা না বাড়িয়ে, "আগলা মাহিনামে ফির মোলাকাত হোগা।। আচ্ছা রহেনা ছোটে ভাই"-- এক নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলেই হোটেলের দরজার দিকে মুখ ঘোরালো সে।। ঘরে তাড়াতাড়ি পৌঁছে ইরাবতির মেসেঞ্জারে দেখতে হবে কি লিখেছে তাকে ইরাবতি।।
সবে দরজাটি ঠেলে হোটেলের ভিতরে পা বাড়িয়েছে সত্যেন, ম্যানেজার বিশ্বাস বাবু বলে উঠলেন, 'ভেরী গুড্ ইভনিং স্যার।। একবার রিসেপশনে আসবেন স্যার'।। উটকো বিড়ম্বনা।। ঘন্টা দুয়েক পরেই ফেরার ট্রেন ধরবে সে।। গতকাল সমস্ত বিল, মায় আজকে রাতে ট্রেনে খাওয়ার জন্য যে খাবার সে প্যাক্ করে নিয়ে যাবে, সেটা পর্যন্ত মিটিয়ে দিয়েছে।।
হ্যাঁ বলুন।। খানিকটা বিরক্তবোধ নিয়ে রিসেপশনে এসে দাঁড়িয়েছে সত্যেন।। "স্যার, আপনি গতকাল একটি পাঁচশো টাকার নোট বেশি দিয়েছিলেন"।। কৈ আমার তো মনে পড়ছে না।। বলে সত্যেন।। "কাল রাতে পাঁচটি রুম চেকআউট ছিলো।। তাদের মধ্যে একজন আগের দিনই পেমেন্ট ক্লিয়ার করে দিয়ে ছিলেন।। বাকিরা কার্ডে পেমেন্ট করেছেন।। শুধু আপনিই ক্যাশ দিয়েছেন"।।
অন্য সময় হলে, সত্যেন হয়তো টাকাটি টিপস্ ধরে নিয়ে টাকা ফেরত নিতো না।। অথবা নূন্যতম দুশো টাকা ম্যানেজার কে অফার করতো।। কিন্তু তাতে যে বিপদ আছে আন্দাজ করেই, মানে "না স্যার", ঠিক আছে নিন্।। "স্যার আপনার রাস্তা ঘাটে কি দরকার পড়তে পারে"---- একগাদা নাটক।। মাঝখান থেকে সময় নষ্ট হয়ে যাবে।। বিশ্বাস বাবু হয়তো আবার,
"স্যার চা বলেছি, খেয়ে যান" জাতীয় কিছু বলেই বসলেন।।
অন্যরকম তাড়া না থাকলে কতোদিন তো সে গল্প- আড্ডা- চা খাওয়া ইত্যাদি করে তারপর ষ্টেশন গিয়ে ট্রেন ধরেছে।। মোটামুটি সবই তো তার ব্যাগে।। শুধু যে ধুতিটি সে পড়ে, একটি পড়া জামা, গামছা আর দুটোমাত্র আন্ডার গার্মেন্টস্--- সেগুলি শুধু ব্যাগে ঢোকাতে হবে।। কিন্তু আজ মেসেঞ্জার খোলার তাগিদ আছে।।
সত্যেন কথা না বাড়িয়ে টাকাটি নিয়েই সোজা লিফ্ট ছেড়ে সিঁড়িতে পা বাড়ালো।। আছে তো দুই তলায়।। লিফ্টের জন্য দাঁড়াও, ওঠো, থামাও.... তার থেকে সিঁড়ি ধরলে আগে পৌঁছাবে।।
ঘরে ঢুকে দরজা লক্ করলো সত্যেন।। খাটের উপর বসে মোবাইল অন্ করে সোজা মেসেঞ্জারে ইরাবতির কাছে পৌঁছে গেলো।। "কি ভালো মানুষ গো আপনি, একটুও রাগলেন না? এমন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে মজাই মজা।। কখনও রাগবে না যে...।। দিদি নিশ্চয় খুব ভালো বাসেন আপনাকে? এমন মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়"?
সত্যেনের চোখ চলে গেলো ইরাবতির মেসেঞ্জারের একদম ওপরে।। না... মেসেজ করবার পর আর সে খোলেনি মেসেঞ্জার।। লাস্ট সিন্ আর তার মেসেজ একই সময়।। মানে মেসেঞ্জারে মেসেজ করে ইরাবতি সেই যে অফলাইন হয়েছে, আর আসেনি মেসেঞ্জারে।।
"কি ভালো মানুষ গো আপনি"-- কথাটি ভীষণ ভালো লেগেছে সত্যেন এর।। কেমন একটি গ্রাম্য সরলতা আছে কথাটির মধ্যে।। বারবার সত্যেন নিজেই বলতে থাকে, "কি ভালো মানুষ গো আপনি"।। হঠাৎ খেয়াল করে, যদি এখনই ইরাবতি মেসেঞ্জার খুলে বসে, তার সঙ্গে গল্প শুরু করে.... তাহলে তো তার ট্রেন ধরতে দেরি হয়ে যাবে।।
"এমন মানুষকে ভালো না বেসে থাকা যায়"? ঠিক কি বলতে চেয়েছে ইরাবতি? হঠাৎ খেয়াল করেই মাথায় কেমন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে সত্যেন এর।। কিছু কি ইঙ্গিত দিচ্ছে ইরাবতি? ইরাবতি কি তার প্রোফাইল ছবি দেখে তার প্রেমে পড়ে গিয়েছে?
ব্যাপারটি তো হতেই পারে।। ইরাবতি একাই।। তার স্বামী তো মারা গেছেন।। প্রোফাইলে লেখা আছে না, "Widowed"?
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন