রবিবাসরীয় বিভাগ
আজকের গল্প
রেডিও-র গল্প
অসিত কুমার রায়
বাবার একটা পুরোনো দিনের রেডিও ছিল। একটা মুখে আঙুল দেওয়া একটা বাচ্ছার ছবিওলা। বাবা বাড়ি থাকা মানে রেডিও চলা না থাকা মানে রেডিও বন্ধ। পাড়াতে তখন এই একটাই রেডিও । নাটক খবর অনুরোধের আসর বোরোলিনের সংসার বা শনিবারের বারবেলা ইত্যাদি । পাড়াতে যে যখন যেমন পারতো শুনতে আসত। ভোরবেলা যখন মহালয়া শুরু হতো, তখন মেলার মত সবাই ভিড় করে শুনতো তাই দেখে আমার মনটা পবিত্র ধুপের গন্ধে ভরে যেতো। কাবেরী বসুর সাদা কালো একটা ছবি ঘরে বাঁধানো দেখতাম। মাকে দেখতে অনেটা তার মতন ছোটবেলাতে আমি মায়ের ছবিই ভাবতাম । কেন ঐ ছবিটা দেওয়ালে টাঙানো জিজ্ঞাসা করলে মা বাবা কিছুই কিছু বলতনা। নাটক সংবাদ বিচিত্রা চলাকালীন কেউ কথা বলতে পারবেনা, চলে যাও অন্যকোথাও।উত্তম সুচিত্রার জুটি ছিল বাবার ভীষণ প্রিয় জুটি। এই জুটির সিনেমা পেলে পৃথিবী একদিকে রেখেও তিনি দেখাবেন। এই জুটির গান শুনলে বাবা তখন রেডিও’র কাছে আঠার মত আটকে যেতেন। যেন মনে হতো নিজেই গানটা গায়ছে। সারা মুখে লেগে থাকতো অদ্ভুত প্রশান্তি ... নীড় ছোট ক্ষতি নেই’ বিখ্যাত সেই গান।
বাবা মায়ের থেকে অনেকটাই বয়েসে বড় ছিলেন। ওদের মুখোমুখি বার্তালাপ কথা কাটাকাটি খুব কম হতো। ভালবাসা কার প্রতি কত ঠিক বুঝে উঠতে পারতাম না ।বাবা যেন সবেতেই রাজি থাকতে পারলে সবথেকে খুশি হন। বাবার আপত্তি থাকা স্বত্তে আমার দিদি মামারবাড়িতে মানুষ হতে হয়েছিল। কারণ, আমি খুব তাড়াতাড়ি দিদির পর পরই এই পৃথিবীতে এসে পড়েছিলাম।তারজন্য বাবাকে কখনো কখনো লুকিয়ে কাঁদতেও দেখেছি। জিজ্ঞাসা করলে জবাব কিছু পেতাম না।আর সেই একটা গান যেটা শুনলেই নিশ্চিত জানতাম এবার বাবাব কাঁদবেন এবং বলবেন ও কিছু না ...গানটা ‘কাটেনা সময় যখন আর কিছুতেই ‘হেমন্ত আর শ্রাবন্তির সেই বিখ্যাত গানটা।
পুজোর মুখে রেডিওটা হটাত খারাপ।বাবার খুব মনখারাপ।অফিস যাবার আগে অফিস থেকে ফিরে রেডিওটা সারাবার চেস্টা করতেন; যদি ঠিক হয় যদি একবার বেজে ওঠে । এরিয়াল ঠিক করে যন্ত্রপাতি খুলে ফেলে আবার জুড়ে ফেলে। কিছুতেই কিছু হলোনা। শেষে কেমন অস্ফুট আওয়াজ হতে লাগল, টিউন মোটেই হলোনা । মা আড়াল থেকে দেখছে কিন্তু কিছু বলার সাহস করলনা। পরেরদিন মহালয়া। ভোরবেলায় যখন সবাই আসবে তখন যে কি অবস্থা হবে সে ভেবে আমার খুব খারাপ লাগছিল। দুপুর গেল সন্ধ্যে হলো রাত ও গড়ালো।বাবা সেদিন রাতে কিছু মুখে দিলনা। মার চোখে অদ্ভুত একটা হাসি লক্ষ্য করলাম যা কোনদিন আগে কখনো দেখিনি।ভোর হতেই ঘুম ভেঙে গেল মহালয়ার গানে। রেডিওতে বাজছে কিন্ত একি! পুরোনোটা কোথায় গেল এটা একেবারে ঝকঝকে নতুন।মার চোখেমুখে বিজয়িনী হাসি। বাবা- মা একসাথে পাড়ার সবাই তখন মহালয়া শুনতে মগ্ন। বাবা পড়েছে ধুতি পাঞ্জাবি মা পড়েছে গরদের লালপাড় একটা শাড়ি কপালে লাল টকটকে টিপ, ভালবাসা যেন উপচে পড়ছে ... রেডিওতে গান বাজে ‘বাজলো তোমার আলোর বেনু'।
*পাঠকের আপনজন* *অঙ্কুরীশা সাহিত্য পত্রিকা*
--------------------------------------
✍🏾*আলোক- উৎসব* বিষয়ক কবিতার আহ্বান*
🙏🙏লেখা আহ্বান🙏🙏
✍🏾✍🏾 অঙ্কুরীশা ই ম্যাগাজিনে শুরু হলো প্রতিদিন বিভাগে 'আলোক- উৎসব' বিষয়ক কবিতা
✍🏾এই পর্বে দুটি করে কবিতা পাঠাবেন।
✍️✍ মেল বডিতে (অভ্র অথবা ইউনিকোড) টাইপ করে পাঠাবেন।
🙏এই বিভাগের লেখা মৌলিক ও অপ্রকাশিত হতে হবে।
🙏কোন প্রকার ছবি বা পিডিএফ ফাইল গ্রহণ যোগ্য হবে না।
🙏এই বিভাগে আপনার মৌলিক ও অপ্রকাশিত লেখা কিনা উল্লেখ করে দেবেন।
✍🏾 এই পর্ব চলবে ১৬ই অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত।
👇🏾আপনি আপনার আলোক- উৎসব বিষয়ক কবিতাটি আজই মেল করুন👇🏾
ankurishapatrika@gmail.com
✍️🙏আপনার এই পাঠানো লেখাটি অঙ্কুরীশা-য় সম্মানের সাথে প্রকাশিত হবে।
🙏
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন