লেবেল

বৃহস্পতিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ( শেষ পর্ব)।। আংটী রহস্যের নেপথ্যে — অনন্যা দাশ।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 



ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস ( শেষ পর্ব)


আংটী রহস্যের নেপথ্যে

অনন্যা দাশ


জিকো কেকাদের বাড়িতে বসে কথা হচ্ছিল। হাসপাতাল থেকে ফোন করে নিখিল জানিয়েছে যে হ্যারির জ্ঞান ফিরেছে। সেন্টারফিল্ড গোরস্থান থেকে ডেনির মৃতদেহ পেয়েছে পুলিশ। চেম্বার্সবার্গ গোরস্থান থেকে মিস্টার টাইসনের মৃতদেহতে অটপ্সি/পোস্টমর্টেম করে দেখা হবে কী দিয়ে মারা হয়েছিল ওনাকে। একই পদার্থ মনে হয় মিসেস ওয়েস্টউডের জন্যেও ব্যবহার করা হয়েছিল।           

অখিলবাবু কিছুই বুঝতে পারছেন না, অনেকক্ষণ ধরে মামাকে সব কিছু বলতে বলছেন তাই মামা বললেন, “ডক্টর বোম্যান ইদানীং ওনার সংস্থা হেলদি হার্টসকে বড় করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। সমাজসেবক হিসেবে খ্যাতি পেতে ওনার ভাল লাগছিল। কেউ কেউ ওনাকে বলেছিল ‘ডাক্তারবাবু এবারে আপনি নোবেল পিস প্রাইজটাও পেয়ে যাবেন!’ যে কারণেই হোক ওনার নেশা ধরে গিয়েছিল সংস্থাটাকে আরো অনেক বড় করার। বড় একটা বিল্ডিং তৈরি করার জন্যে বিশাল লোনও নিয়ে ফেলেছিলেন। উনি নিজের পকেট থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ঢেলেও দেখছিলেন সেটা পর্যাপ্ত হচ্ছে না। তখন ওনার মাথায় একটা ফন্দি আসে। নিজের ওই প্রতিবেশীকে দেখতে গিয়েই উনি টের পান যে প্লেস্যান্ট মেডোজে এমন অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আছে যাদের অর্থ আছে প্রচুর অথচ নিজের বলতে কেউ নেই। উনি তখন খোঁজ নিয়ে তাদের সঙ্গে ভাব পাতান। তাদের টাকা হেলদি হার্টসকে দিলে বিশাল উপকার করা হবে পৃথিবীর, ওনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই সব কথা বলেন ওদের। নিঃসঙ্গ মানুষগুলো ডক্টর বোম্যানকে বিশ্বাস করে। তারা নিজেদের উইলে সব সম্পত্তি হেলদি হার্টসের নামে করে দেয়। আমি মিস্টার টাইকস আর মিসেস ওয়েস্টউড দুজনের উকিল কে খুঁজে বার করে করে ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওদের দুজনেরই সম্পত্তির সিংহভাগ হেলদি হার্টসের নামে করা হয়েছিল। তারপর শুরু হয় ডক্টর বোম্যানের অপেক্ষা। আশি থেকে নব্বইতে গিয়ে তাও বেঁচে আছে মানুষগুলো দেখে অসহিষ্ণু হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। তখন ওনার মাথায় শয়তান চাড়া দিয়ে ওঠে। মৃত্যুর দূত হয়ে কিছু একটা বিষাক্ত ইঞ্জেকশান দিয়ে ওই দুজনের মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসেন উনি। ডেনি খুব একটা বুদ্ধিমান ছিল না বটে কিন্তু আবার একেবারেই বোকাও ছিল না। সে মনে হয় ওনাকে ইঞ্জেকশান দিতে দেখে ফেলছিল। ওর মনে তখন সন্দেহ জন্মেছিল যে উনি তো এদের ডাক্তার নন, উনি কেন ইঞ্জেকশান দিচ্ছেন? আর সেটা দেওয়ার পরের দিন ম্যাগি ওয়েস্টউড মারা যান। ঠিক কী হয়েছিল কোনদিন জানতে পারব না আমরা কিন্তু সে দুয়ে দুয়ে চার করে ফেলেছিল এবং ডক্টর বোম্যানের ভয়ানক অভিসন্ধি বুঝতে পেরেছিল। সেই কারণেই মিস্টার টাইক্সের মৃত্যুর পর ও খুব মনমরা হয়ে পড়েছিল। কী করবে মনে হয় বুঝতে পারছিল না। যেদিন সেন্ট থমাস কলেজের ফাংশান ছিল সেদিন ডেনি ফোন করে ডক্টর বোম্যানকে। ওর ফোনটা ধরার জন্যেই উনি বেরিয়ে যান। পুলিশ ফোন রেকর্ড থেকে সেটা পেয়েছে। তারপর উনি ডেনিকে বুঝিয়ে বাঝিয়ে সেন্টারফিল্ড গোরস্থানে নিয়ে জান। সেখানে বিষ বা যা কিছু দিয়ে ডেনিকে... যাই হোক গোরস্থানের মতন লাশ লোকাবার জায়গা আর কোথাও নেই সেটা তো মানতে হবে। উনি ডেনির দেহটাকে ওখানে একটা গর্তে পুঁতে ওর গাড়িটাকে কিছুটা দূরে জঙ্গলের মধ্যে রেখে আসেন। গোরস্থানের কাছে উনি কেন আবার ফিরে এসেছিলেন জানি না। হয়তো কিছু পড়ে নেই তো চেক করার জন্যে বা কিছু হবে। বা হয়তো চশমাটাই খুঁজছিলেন কিন্তু অন্ধকারে দেখতে পাননি। ভুল নাম ঠিকানা দিয়ে হ্যারিকে ডেকে মুখ লুকিয়ে উনি স্টেশান পর্যন্ত যান এবং সেখান থেকে ট্রেন নিয়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু আংটিটা ট্যাক্সিতেই থেকে যায়। যেহেতু সেদিন গোরস্থানে গিয়ে ওই ভয়ঙ্কর কাজটা উনি করেছিলেন তাই উনি ওখানে ছিলেন সেটা কাউকে জানতে দিতে চাইছিলেন না উনি। হ্যারি রিসেপশানিস্টকে আংটি নিয়ে প্রশ্ন করছিল সেটা উনি হয় নিজে শুনেছিলেন বা রিসেপশানিস্ট ওনাকে বলেছিল। তাখন থেকে চিন্তা হতে থাকে ওনার। উনি ভাড়াটে গুন্ডা লাগান হ্যারির পিছনে। হ্যারিকে তুলে নিয়ে গিয়ে ওর কাছ থেকে আংটিটা নিয়ে নিতে পারলে সেদিন রাতের সঙ্গে ওনার সব যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যেত। ওনার কুকীর্তি ধরা পড়ে যেতে শেষ পর্যন্ত তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল ওনাকে, সেটা ছাড়া আর গতি ছিল না। বেঁচে থাকলে খুনের দায়ে মৃত্যুদন্ড হত ওনার, আর নামটাও ধুলোয় মিশে যেত।”    

অখিলবাবু সব শুনে বললেন, “ও এইবার বুঝতে পারছি ব্যাপারটা! নাহলে আমি বুঝতেই পাছিলাম না সবাই যাকে নিয়ে অত ভাল ভাল কথা বলেছে আপনি কেন কার পিছনে লেগেছেন!”

তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন – 

“লোভ যদি জাগে মনে

                      খ্যাতি বা অর্থের সনে

                      জেনো পথ ভুলে যাবে

                      ঠিক তার সাজা পাবে

                      হয়ে যাবে ছারখার

                      রবে শুধু হাহাকার!" 

দরজায় বেল পড়ল। মিসেস পার্কার এসে হাজির হয়েছেন। লাঠি উঁচিয়ে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে মামাকে বললেন, “তোমার জন্যে এখন টেসা বেশ কিছুদিন আসবে না আমাকে ম্যাসাজ করতে!”

মামা মুচকি হেসে জবাব দিলেন, “আপনিই তো আমাকে জড়ালেন ওর ভাইয়ের ব্যাপারটায়! সেটার পরিণতি যে এই রকম হবে তা আমি কী করে জানব? তাই আমার চেয়ে আপনি নিজেই নিজের অবস্থার জন্যে বেশি দায়ী!” 

মিসেস পার্কার মেকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “কী আর করা যাবে! আমাকেই ঝামেলা পোওয়াতে হবে এখন!” বলে সোফায় বসে মাকে বললেন, “আচ্ছা ওই গোল গোল জিনিসগুলো আছে নাকি তোমার আর? কী যেন বেশ গাছ কাটার মত নাম!” 

কেকা হিহি করে হাসতে হাসতে জিকোকে ফিসফিস করে বলল, “মিসেস পার্কারের ভেজিটেবেল চপের নেশা হয়ে গেছে রে! এখন রোজ এসে হাজির হবেন চপ খেতে!”  





আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস "ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য" প্রতি শুক্রবার অঙ্কুরীশা-র পাতায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন