ধারাবাহিক ভ্রমণকথা (পর্ব-২২)
পৃথিবীর উল্টো পিঠবিশ্বেশ্বর রায়
আজ ছিল জয়দীপের জন্মদিন। এই উপলক্ষে কেক, পিজ্জা, বার্গার ইত্যাদির আয়োজন করা হল। কলকাতা থেকে এবং ইউ এস এ থেকে অনেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠালো। আমরাও সেই তালিকায় নিজেদের নাম ঢোকলাম। তবে জয়দীপ খুব সাদামাটা, লাজুক প্রকৃতির ছেলে । বেশি হাই -হুই, বাইরের চাকচিক্য পছন্দ করে না। একটু প্রাচীনপন্থী। অতি আধুনিকতা বা পশ্চিমী দুনিয়ার দেখনদারি ওর বিশেষ পছন্দ নয়।
আবার দিন চলেছে মন্দাক্রান্তা ছন্দে। কর্মহীন, প্রায় শুয়ে-বসে কাটাবার এই জীবনযাত্রা আর যেন ভালো লাগছে না। নতুন দেশ দেখা, নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন জীবনধারা দেখা এসব বিস্ময়কর অনুভূতি আস্তে আস্তে ফিকে হতে শুরু করেছে। আর বিশেষ নূতনত্ব খুঁজে পাই না এখানে। চৌহদ্দিতে দ্রষ্টব্য যেগুলি ছিল তার প্রায় সবই দেখা হয়ে গেছে। এবার বাবাইয়ের ওখানে গিয়ে আবার নতুন কিছু দেখার প্রত্যাশা। নতুন কিছু অভিজ্ঞতা জীবন-ঝুলিতে ভরে নেওয়া যাবে হয়তো। হয়তো বলছি এই কারণে যে, এখানকার সব প্রদেশের হালচাল (যতটুকু দেখা হয়েছে) জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার প্রায় একই রকম। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশের মতো ভাষা,খাদ্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচারাচরণের স্পষ্ট ভিন্নতা প্রায় নেই বলিলেই চলে। তাই মনে হয় এখানে জাতীয়তাবোধ বা দেশপ্রেম অনেক বেশি মজবুত। বহু বাড়ির সামনে সারা বছরই জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায়। প্রত্যেক সরকারি বাসের গায়ে জাতীয় পতাকার চিহ্ন আঁকা আছে। এছাড়া প্রত্যেক বাসের মধ্যে ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় নিয়মাবলি লেখা আছে। এখানকার স্বীকৃত সরকারি ভাষা দু'টি--ইংরেজি এবং স্প্যানিশ। বহু ছেলে-মেয়ের টি-শার্টের বুকে লেখা থাকে 'I love you N Y' বা 'I love U S A'. ইত্যাদি। ব্যাপারটার উল্লেখ এই কারণে করলাম যে, আমাদের দেশে এমন শহর বা দেশের নামাঙ্কিত টি শার্ট দেখতে পাওয়া যায় না।বরং I U S A, N Y বা Canada লেখা প্রায়ই দেখা যায়। এর থেকেও মনে হয় অতি সূক্ষ্মভাবে জাতীয়তাবোধ সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে।
নিউইয়র্কের চায়না টাউন বা ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় গেলেই বোঝা যায় আমেরিকাবাসীদের সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য। সেখানে রাস্তাঘাটে নোংরা বা ময়লার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি। পাকিস্তানি,বাংলাদেশি এবং কিছু কিছু ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকায় তো পানের পিক,পানপরাগের পিক জাতীয় ফুটপাথ বা রাস্তা রঞ্জিতকারি বস্তু হামেশাই দেখা যায়। এগুলো বড়ো বড়ো শহরেই দ্রষ্টব্য। বিশেষত নিউইয়র্ক, নিউজার্সির মতো মহানগরীতে। অথচ এখানে রাস্তায় বা ফুটপাথে থুতু ফেলাও দণ্ডনীয় (অর্থদণ্ড) অপরাধ। তবুও জাতীয় অভ্যাস যায় কোথায়! টুক করে পানের পিক বা থুতু ফেলে সরে পড়তে হামেশাই দেখা যায়। অথচ হার্টফোর্ডের মতো ছোট শহরে এর চিহ্ন মাত্র নেই। এখানকার রাস্তাঘাট, ফুটপাথ, প্রত্যেকটা বাড়ির সম্মুখস্হ বাগান বা রাস্তা অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। কেউ কেউ যে এরই মধ্যে কিছু নোংরামি করছে না তা নয়, তবে তা এতো নগন্য যে ধর্তব্যেই আসে না। এখানকার পার্কস্ট্রীট এবং প্রান্তিক দু'একটি এলাকায় নোংরার কিছু আধিক্য দেখা যায় বটে, তা না হলে সমগ্র শহরটি অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিপাটি সাজানো ছবির মতো।
এখানে বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসপত্র (যেমন, কেউ স্হানান্তরে যাবে ভাড়া বাড়ি বা নিজস্ব বাড়ি ছেড়ে )সমস্তকিছু নির্দিষ্ট স্হানে নিজেকে ফেলতে হয়। যত্রতত্র ফেলে রেখে যাওয়া দণ্ডনীয়। তবুও দেখা যায় এরই মধ্যে কিছু এলাকায় (যেখানে নিজস্ব বাড়ির সংখ্যা বেশি ) ফুটপাতের উপর দামি, প্রায় নূতন সোফা, ম্যাট্রেস, টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি রাতের অন্ধকারে ফেলে রেখে দেয়। এর দুটি কারণ। প্রথমত অব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলার জায়গায় ওগুলো নিয়ে যাওয়ার খরচ প্রচুর। দ্বিতীয়ত সেই টাকায় নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন জিনিস কেনা যায়। জানি না ওই ফেলে যাওয়া জিনিসগুলো অপেক্ষাকৃত আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষজন নিয়ে যায় কি না! কেউ না নিলে কয়েক দিন পর কর্পোরেশনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়।
এখানে বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসপত্র (যেমন, কেউ স্হানান্তরে যাবে ভাড়া বাড়ি বা নিজস্ব বাড়ি ছেড়ে )সমস্তকিছু নির্দিষ্ট স্হানে নিজেকে ফেলতে হয়। যত্রতত্র ফেলে রেখে যাওয়া দণ্ডনীয়। তবুও দেখা যায় এরই মধ্যে কিছু এলাকায় (যেখানে নিজস্ব বাড়ির সংখ্যা বেশি ) ফুটপাতের উপর দামি, প্রায় নূতন সোফা, ম্যাট্রেস, টেবিল, চেয়ার ইত্যাদি রাতের অন্ধকারে ফেলে রেখে দেয়। এর দুটি কারণ। প্রথমত অব্যবহৃত জিনিসপত্র ফেলার জায়গায় ওগুলো নিয়ে যাওয়ার খরচ প্রচুর। দ্বিতীয়ত সেই টাকায় নতুন জায়গায় গিয়ে নতুন জিনিস কেনা যায়। জানি না ওই ফেলে যাওয়া জিনিসগুলো অপেক্ষাকৃত আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষজন নিয়ে যায় কি না! কেউ না নিলে কয়েক দিন পর কর্পোরেশনের লোকজন তুলে নিয়ে যায়।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন