আষাঢ়ে গপ্প কথা -১৭
স্বপন ময়রা
বাপ বঠে
হ্যঁ দিদিমণি টুকুন পান্তা হইবেক!
— কেনো রে কি হবে, বাসি ভাতে জল দিতে ভুলে গেছি, সেটাই পড়ে আছে, খাবি!
— নাগো দিদিমণি মুর কুথাঠ বলিলাই , সাঁঝলি আর উয়ার বাপের জইন্য মাঙ্গছি, ঘরে চাইলটা বাড়ন্ত হঁইছে, মারাণঠাকুর জাইন্যে উরা কেইমন কইরে দিনটা কাটাইছে।
মুই তো সেই কাকভোরে উঠাই তুদ্যের বাড়ী চলাইন আঁইছি, বিটিছিল্যাটার কুথাঠ ভুইলতে লারছি, মরদ টাই বা কি খাঁইছে বুইঝতে লারছি।
তিনবাড়ীর কাজ সাইরতে সাঁঝবেলাটা হইয়া জাইবেক , দিনকালটা ভ্যাইল্য লয় রে দিদিমণি , ডর লাগে একা একা ঘরকে জাঁইতে।
— ঠিক আছে তুই কাজ সেরে দুটো খেয়ে নে আর বাড়ীর লোকেদের জন্যে কিছু দিয়েদিচ্ছি , মনে করে যাবার সময় নিয়ে যাস।
— মারণঠাকুর তুক্যে ভ্যাইল্যটা কইরবেক রে দিদিমণি।
সব কাজ সেরে সাঁঝলির মা কোঁচড়ে চাট্টি মুড়ি বেঁধে নিয়ে এক হাতে দুপুরের বাবুদের বাড়িতে বাড়তি ভাত তরকারি একটা টিফিন কোউটেতে ভরে বাড়ীর দিকে রওনা হলো , সূর্যদেব তখন অস্তাচলে যাবার পথে।
ফাঁকা মেঠো পথ দিয়ে জাবার সময় একবারও ভাবতে পারেনি দুজন ষণ্ডামার্কা যুবক তার পিছু নিয়েছে ...
— হ্যা বাপ তুই ইখনো চুপ কইরে থাকবি! কুথাঠ বলনা কেনে , পুলিস আঁইছে , খপোরের কাগজের মানুষ গুলান আঁইছে , ফটক তোলার কলটাকে তাক কইরে মুর মরা মাটার কুত্তো ফটক তুললো, কিছু বইলনা কেনে।
আস্তে আস্তে সাঁঝলির বাপ পুলিসদের কাছে এসে হাত দুটো জড়ো করে বললো ...
হ্যা বাপ তুরা ইখানে কি কঁরছিস বঠে! জানা কেনে ওই শ্যঁয়তান গুলান কে ধরনা কেনে, যারা মুর বউটাকে কুকুরের মইতো কাঁমড়ে জীবনটাকে শেষ কইরাদিলো।
হ্যা ফটক বাবু তুরা কেনে মুর মরা বউটার ইত্তো ফটক তুলছিস ? একবার তো উর সইনমানটা গেছে, কাগজে ফটক চাঁপাই উয়ার ইজ্জত যাবার কুথাঠ ঘইরে ঘইরে বিলাইন দিবির লগে আঁইছিস?
থানার বড়ো বাবু বারবার জিগাইবে কেইমন কুরে হইলো, আগে কুঁইনো সম্পর্ক ছিলো কিনা?
আর কুত্তো অপমান কইরবি তুরা , মইরে শান্তি পাইবেক লাই মুর বউটা।
উ শ্যঁয়তান গুলান একবার উর ইজ্জত লুট কঁইরছে, তুরা বারবার উর ইজ্জতটা লিয়ে ব্যবসা কঁইরছিস,মরদ যদি হইয়ে থাকিস, জানা কেনে সমাজ থেইক্যা উসব শ্যঁয়তান গুলান কে শেষ কর।
মুর ছোট্ট বিটিটার কুথা টুকুন ভাইব, উক্যে লিয়ে ই সইমাজে বাঁইচবো কিমন কইরে!
আজ উর মায়ের ইজ্জত লিছে, দুদিন পর উয়ার শরীল লিঁয়ে খেইলবেক।
একটা কিছু কইরে দেখা বাবুমশাইরা , যাতে মা-মেইরা মাথা উঁচু কইরে বাঁইচতে পাইরে ।
দমে ভ্যালছিস তুরা মুর মরা বউটার দিকে , টুকুন শান্তি দে উকে।
জানি তুরা ছাড়বিক লাই উকে, মড়াকাটার ঘইরে লিয়ে আবার উক্যে উলঙ্গ কইরে কাটাছেঁড়া কইরবি।
বিটিছিল্যান হইয়ে জম্মানোটা পাপ তুদের ই সইমাজে।
হ্যা মইনে রাখিস সইমাজের বাবুমশাইরা, তুদ্যের ঘইরে উ মা-বুনটা আছে বঠে, উদের সইনমানটা রাখিস বঠে ।
মারণঠাকুর তুদের ভ্যাইল্যটা রাখুক কেনে।
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/08/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in.html
সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে লেখা গল্পটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী । মানুষের মনের পরিবর্তন যেদিন হবে
উত্তরমুছুনসেদিন হয়তো এসব হৃদয় বিদারক ঘটনা আর
ঘটবে না। সামাজিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক
সুবিচার হলে পর পৃথিবীর বুক থেকে এ ধরনের
অনাচার দূর হলেও হতে পারে।
খুব ভালো লাগলো। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার গল্পটাকে আরো মর্মস্পর্শী করে তুলেছে।
উত্তরমুছুন