দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মদিনঃ
শ্রদ্ধা ও স্মরণে — ড. রমলা মুখার্জী
নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর একদিকে যেমন মাটির পুতুলের জন্যে বিখ্যাত তেমনি অপরদিকে বিখ্যাত বহুমুখী প্রতিভায় ভাস্বর কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মস্থান হিসেবেও খ্যাত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পিতা কার্তিকেয় চন্দ্র রায় ছিলেন রাজবংশের দেওয়ান। কার্তিকেয় চন্দ্র গায়ক ও গীতিকার হিসেবে খুব খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম হয় ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের উনিশে জুলাই। সুগায়ক পিতার কাছে শৈশব থেকে সংগীত শিক্ষালাভ করার ফলে খুব ছোটবেলা থেকেই দ্বিজেন্দ্রলাল সুন্দর গান গাইতে পারতেন। তাঁর কণ্ঠটি ছিল সুরেলা ও সাবলীল। তাঁর বাড়িতে বইত সর্বদা সংগীত ও সাহিত্যের মধুর হাওয়া। তাঁর দুই দাদা রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল সুসাহিত্যিক ছিলেন। উপযুক্ত জল আর সারের প্রয়োগ কবি দ্বিজেন্দ্রের কবি অঙ্কুর ক্রমশ বিকশিত হয়ে, ডালপালা মেলে বৃক্ষে পরিণত হয়েছিল। মাত্র উনিশ বছর বয়সে (১৮৮২ খ্রিঃ) দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আর্যগাঁথা’ প্রকাশিত হয়।
প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে এম.এ পাশ করে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বিলাত যান কৃষিবিদ্যা পড়ার জন্য। পড়াশোনার সাথে তিনি সেখানে পাশ্চাত্য সংগীতেও দীক্ষা নেন ও যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেন কারণ তাঁর দেশী সংগীতের ভিতটি খুবই ভাল ছিল। সেখানে তিনি ‘Lyrics India’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন।
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বারোটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতা তাঁর প্রধান বিষয় হলেও তিনি প্রহসন, কাব্যনাট্য, হাস্যরসাত্মক কবিতাও অনেক রচনা করেন। তাঁর রচিত গানগুলি দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত যা আজও মানুষের মনকে ছুঁয়ে যায়। তাঁর সুযোগ্য পুত্র স্বনামধন্য দিলীপকুমার রায় তাঁর গানের সুরগুলি লিপিবদ্ধ করে গেছেন ও রেকর্ডিং করেছেন যেগুলি বাংলা সংগীত ভাণ্ডারে অমূল্য সম্পদ। তাঁর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘একবার গাল ভরা মা ডাক’ প্রভৃতি মানুষকে দেশপ্রেমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।
জীবনে তিনি অনেক প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও তাঁর একটি বিরাট কীর্তি হল তিনি ছিলেন বিখ্যাত নাট্যকার। মোট ষোলোটি নাটক তিনি রচনা করেন ও নিজেও কিছু কিছু অভিনয় করেন। জীবনের শেষ দশ বছর নাটক রচনার কাজেই তিনি মনসংযোগ করেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক সবরকম নাটকই তিনি রচনা করেছিলেন। ঐতিহাসিক নাটকগুলির তাঁর জাতীয় চেতনায় উদ্ভাসিত।
একাধারে গায়ক, গীতিকার, কবি, নাট্যকার, অভিনেতা, প্রহসন রচয়িতা এই বহুমুখী প্রতিভার অনন্য সাধারণ মানুষটি ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাঁর সাহিত্য কীর্তি প্রতিটি বাঙালির মনে চির অম্লান হয়ে থাকবে, তাঁকে জানাই প্রণাম।
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_74.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন