লেবেল

শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রবিবাসরীয় বিভাগ।। আজকের গল্প।। চিঠি — দুর্গাদাস মিদ্যা।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 




রবিবাসরীয়  বিভাগ

আজকের গল্প 



চিঠি

দুর্গাদাস মিদ্যা


শুভ বিয়ের পর অষ্টমঙ্গলায় শ্বশুরবাড়ি গেছে। রমলা শুভর স্ত্রী। পঞ্চমীর দিন রমলা ভাইয়ের সাথে বাপের বাড়ি এসেছিল। শুভ ব্যাঙ্কের অফিসার। ছুটিছাটা কম, তাছাড়া বিয়ের পর ছুটি নিয়ে করবেই বা কি? সামনে হানিমুনে যাবার সময় পনেরো দিন ছুটি নেওয়া আছে। তাই যতটা পারে ছুটি বাঁচানোর চেষ্টা যেমন করে তেমনি ব্যাঙ্কের কাজেও বেশ আনন্দ পায়। নিত্য নতুন কত সমস্যার উদ্ভব হয়। তার সমাধানে ওর  মুন্সিয়ানা  বেশ প্রমাণিত। তাই ব্যাঙ্কের অন্য সব স্টাফরাও বেশ নিশ্চিন্তভাবে তাদের কাজ কারবার করতে পারে শুভ অফিসে থাকলে।


শুভর একটা বড় গুণ, ও খুব সহজে লোকের সাথে মিশে যেতে পারে। কেমন যেন একটা আপন আপন ভাব তৈরি করতে পারে অনায়াসে । তাই যে কোনো সমস্যায় শুভর শুভ হস্তক্ষেপের দরকার হয়। গ্রামের ব্রাঞ্চ। স্টাফও খুবই কম। ম্যানেজার লোকেশবাবু, ক্যাশিয়ার দিগন্ত, ফিল্ড অফিসার দেবব্রত এবং ডেপুটি ম্যানেজার শুভব্রত।


আজকাল ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরকারের সমস্ত স্কিমের কাজ যেমন করানো হয় তেমন স্কুলের কলেজের সমস্ত বিভাগের স্যালারিও এখন এই শাখাগুলো থেকে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা আছে। ফলে গ্রামীণ ব্রাঞ্চ  হলেও স্টাফ স্ট্রেংথ  অনুযায়ী কাজের চাপ বেশি। ফাঁকি মারার সময় বা আড্ডা দেওয়ার সময় একেবারে হাতে পায় না কেউ। তবে মিলেমিশে কাজ করে বলে বেশ ভালো পরিবেশ আছে ব্যাঙ্কের মধ্যে। যে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে এতদূর চলে আসা সেখানে ফিরে যাওয়া যাক। শুভর অবর্তমানে একখানা চিঠি এসে পৌঁছেছে  শুভ'র নামে। C/০. শ্বশুর মশায় চিঠিটা যথারীতি রমার হাতে পড়েছে। পড়াটা স্বাভাবিক! এই ব্যাপারে রমা কিন্তু কিছু জানায় নি শুভকে।


শুভ দু'দিনের ছুটি নিয়ে এসেছে। সমস্ত আচার আচরণ শেষ করে রমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে সেইরকম একটা প্ল্যান মাথায় নিয়ে শুভ এসেছে। সব স্বাভাবিক! কোথাও কোন গোলমাল চোখে পড়েনি শুভর। অন্ততঃ শুভর তাই মনে হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে শুভ বসে গল্প করছে। এমন সময় রত্না, রমার ছোট বোন অর্থাৎ শ্যালিকা এসে কানে কানে বলে গেল-জামাইবাবু দিদি আপনাকে শোবার ঘরে ডাকছে। দোতলার কোণার ঘরে আপনাদের শোওয়ার বন্দোবস্ত হয়েছে। রাত সাড়ে দশটা । একে একে সবাই যে যার ঘরে চলে গেছে শোবার জন্য। অতএব শুভরও ওঠা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। বেশ ফুরফুরে মন নিয়েই এগিয়ে গেল শুভ। নতুন বৌয়ের সাথে ভালো করে পরিচয়ই হয়নি। ও বলতে ভুলে গেছি আমাদের বিয়েটা কিন্তু প্রেমের বিয়ে নয়। আমাদের সময়ে এত প্রেমের ঢেউ উঠত না যখন তখন। বাবা, মা মেয়ে পছন্দ করে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। তবে মানতেই হবে বাবা, মায়ের চোখ আছে। এইসব ভাবতে ভাবতে শোবার ঘরে ঢুকলো শুভ। ঢুকেই মনে হল ঘরের আবহাওয়াটা বেশ গরম। সেটা আরো পরিষ্কার হল যখন আলো আধারি নাইট বাল্বের আলোতে রমলার মুখে চোখ পড়ল। শুয়ে আছে আধশোয়া হয়ে। গুমোট আবহাওয়াটা ভাঙার জন্য শুভ সচেষ্ট হল। ওর বুকের কাছে এসে বসল শুভ। রমলার ডান হাতটা ধরতে গিয়েই বিপত্তি। শুভ দেখলো হাতে ভাঁজ  করা একটা ইনল্যান্ড লেটার। ও একটু অবাক হল।


রাতে শুতে এসে হাতে ইনল্যান্ড লেটার? কারণটা কি? জিজ্ঞেস করতেই রাগী গোখরো সাপের মতো

ফোঁস করে উঠল যা একেবারে অভাবনীয় ছিল শুভর কাছে। বিগত কয়েকদিনে রমলাকে যা দেখেছে বা বুঝেছে শুভ ওকে এত রাগী বলে মনে হয়নি ওর। বরঞ্চ ওকে বেশ হাসিখুশিই দেখেছে যা শুভর মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তির বাতাবরণ তৈরি করেছিল। সামলে নিয়ে শুভ জিজ্ঞেস করল-রাগের কারণটা কি? সহজে উত্তর পাওয়া যাবে সে কথা ভাবেনি শুভ। পেলও না। কিন্তু প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হল তাকে। তুমি কি কল্যাণীকে চেন? সে তোমার কে? কি করে সাহস হল এখানে আমার বাপের ঘরে তোমার নামে চিঠি? কী এমন সম্পর্কের জোর! পরপর এতগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বেশ বিধ্বস্ত হয়ে গেল শুভ। কী উত্তর দেবে ভাবতে ভাবতে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেলল! শুধু একবার বলল-চিঠিটা কি আমি দেখতে পারি? দাঁত খিঁচিয়ে উঠলেও চিঠিটা রমলা শুভর হাতে তুলে দিল।


এক নিশ্বাসে চিঠিটা পড়ে যা বুঝলো তাতে ওর ভয়ের কোনো কারণ নেই। বোধহয় চিঠিটা ঠিক মত না পড়েই স্বভাবতই একটা ভুল ধারণায় এত ক্ষিপ্ত। চিঠিতে কোথাও এমন বলা নেই যে শুভর সাথে ওর কোনো সম্পর্ক ছিল। ঠাণ্ডামাথায় বোঝানোর চেষ্টা করল শুভ। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সন্দেহের অন্ধকার ঘরের অন্ধকারকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলল।





আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾


*প্রেমের কবিতা পর্ব-৩৯* 

 *আজকের কবি* 

জয়শ্রী সরকার 💕


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/09/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_3.html





1 টি মন্তব্য: