লেবেল

বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—১৭) ।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ —বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।





ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—১৭)


পৃথিবীর উল্টো পিঠ

বিশ্বেশ্বর রায়


আজ বিকেলে সবাই মিলে হার্টফোর্ডের আর একটি বিখ্যাত পার্ক 'এলিজাবেথ পার্কে' গিয়েছিলাম৷ পুরো পার্কটা একবার চক্কোর দিতে এক ঘন্টার উপর লেগে যাবে, এতো বিশাল৷ পুরো পার্কটি যেন সবুজ গালিচায় মোড়া৷ যেকোনো জায়গায় বসা বা শোয়া যায়৷ যদিও বসার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বেঞ্চ পাতা আছে৷ তবে পার্কটির বিশেষত্ব হলো তার ফুলের বাগানগুলি৷ বিচিত্র বর্ণের নানা ধরণের ফুল ফুটে আছে বাগান জুড়ে৷ এক এক জায়গায় এক এক রকম  ফুল৷ অবশ্য পার্কটির মূল আকর্ষণ হলো গোলাপ৷ এখন যদিও গোলাপের মরশুম নয় তবুও নয় নয় করে কুড়ি-পঁচিশ রকমের গোলাপ ফুটে আছে বাগান জুড়ে৷ জয়দীপ-মুনিয়ার কাছে শুনলাম যে, এখন যেটুকু গোলাপ দেখা যাচ্ছে মরশুমের সময় এর একশো গুণ গোলাপ ফোটে৷ মরশুমটা থাকে মাত্র দু'তিন সপ্তাহ৷ মেরেকেটে এক মাস৷ মে-র মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি৷ এক জায়গায় এতো ধরণের এতো বিপুল গোলাপ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা জানা নেই৷


      এক একটা বাগানের এমাথা ওমাথা জুড়ে গোটা কুড়ি-পঁচিশ আর্চ বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি লোহার মাচা সারিবদ্ধভাবে সাজানো৷ মাচাগুলির উচ্চতা মাঝ বরাবর প্রায় আট ফুট এবং চওড়ায় প্রায় দশ ফুট৷ মাচাগুলির দু'পাশ দিয়ে গোলাপ গাছগুলি লতার মতো পুরো মাচা ঢেকে আছে৷ নানা বর্ণের, নানা ধরণের গোলাপ ফুটে আছে৷ তবে তার পরিমাণ নেহাতই কম৷ কিছু কিছু মাচায় লতার মতো গাছই দৃশ্যমান, ফুল প্রায় নেই বললেই চলে৷ অমন একটা মাচার মুখে দাঁড়ালে পর পর কুড়ি-পঁচিশটি মাচা এক সারিতে দেখা যায়৷ তখন দু'টি মাচার মধ্যবর্তী ফাঁকা অংশটুকু বোঝা যায় না৷ মনে হয় যেন দেড়শো-দু'শো ফুটের একটাই টানেল বা সুড়ঙ্গপথ৷ যাইহোক, যতটুকু গোলাপ ওই বাগানগুলিতে দেখা গেল তাতেই মন ভরে গেল৷


      ওই পার্কের মধ্যে সারা বছরই নানা মরশুমি ফুলের একজিবিশান চলে৷ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত৷ কোনো দর্শনি নেই৷ বহু দর্শনার্থী সেখানে জুটে ফটো তুলছে, সময় কাটাচ্ছে, বাচ্চাদের নিয়ে খেলছে, প্রিয়জনদের সঙ্গে গল্পগুজবে মেতে আছে৷ তবে পার্কের মধ্যে বসে খাওয়া দাওয়া করা নিষেধ৷ খাওয়ার জন্য পার্কের ধারে রেস্টোরেন্ট আছে৷ ওখানকার গ্রীনহাউসগুলি দেখার মতো৷ তবে এখন সব তালাবন্ধ এবং প্রায় শূন্য৷


      দেখতে দেখতে কখন যে দু'ঘন্টা সময় পার হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না৷ সাতটা বেজে গেছে অনেক আগে৷ যদিও তখনও সূর্যের শেষ রশ্মিকিরণ গাছ গাছালির ফাঁক গলে বাগানে ইতিউতি লুটোপুটি খাচ্ছে৷ মানুষজন তখনও এখানে ওখানে বসে গল্প-গুজবে মত্ত, ফটো তোলায় ব্যস্ত৷ কিন্তু আমাদের আর অপেক্ষা করা চলবে না৷ কারণ, তখনও যারা ওখানে গল্পে, আনন্দে মেতে আছে তারা সবাই প্রায় স্থানীয়৷ এটা তাদের প্রতিদিনের বিনোদনের জায়গা৷ তাছাড়াও তাদের প্রত্যেকেরই গাড়ি আছে৷ ওদেশে অবশ্য কেউ দু'তিন মিনিটের দূরত্বের কোনো বন্ধুর বাড়ি গেলেও হেঁটে যায় না৷ গাড়ি চড়েই যায়৷ আমাদের মতো পদাতিকদের পক্ষে বেশি দেরী করা ঠিক নয়৷ কারণ, আসা যাওয়ার রাস্তাটি ভীষণ নির্জন, গাছ গাছালিতে ছাওয়া৷



যদিও রাস্তার দু'পাশে সুদৃশ্য বাড়ির সারি এবং এখানে রাস্তাঘাটে ছিনতাই, রাহাজানি বা চমকানি এসব প্রায় নেই বললেই চলে তবু আমাদের দেশের শহরগুলোতে যা ঘটে সেই মানসিকতা আমাদের আরও অপেক্ষা করতে নিষেধ করল৷ তাছাড়া এদিককার রাস্তাগুলিতে বাস বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই বললেই চলে৷ কারণ, এই রাস্তাগুলি বাস চলাচলের রুটের মধ্যে পড়ে না৷ আর এখানে রাস্তায় যত্রতত্র ট্যাক্সি ঘোরে না৷ কারণ, এখানে সবাই গাড়ি নিয়েই ঘুরতে আসে৷ আর আমাদের ভরসা পদযুগল৷
      ফিরতে ফিরতে গা ছমছমে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে এলো৷ রাস্তার পাশের বাড়িগুলির মধ্যে একটা দু'টো আলো জ্বলতে লাগল৷ কোনো বাড়ি থেকে ভায়োলিনের শব্দ ভেসে আসছে বটে তবে বাড়িগুলি দেখলে মনে হবে যেন পরিত্যক্ত, লোকজনের আভাস নেই প্রায়৷ অথচ প্রত্যেকটি বাড়ির সামনে বা পাশে একাধিক গাড়ি দণ্ডায়মান৷ এই পাড়াটিতে বেশ সম্ভ্রান্ত এবং ধনিক শ্রেণীর বাস বলে অনেক বাড়িতেই গ্যারেজ আছে৷ যা এদেশে সচরাচর দেখা যায় না৷ এখানে সব গাড়ি রাস্তায় বা পার্কিং স্থলে উন্মুক্ত স্থানেই রাখা থাকে৷ সম্ভবত এখানে গাড়িচোর নেই বা গাড়ির ক্ষতি করার মানসিকতাও কারও নেই৷
      প্রায় ঘন্টাখানেক হেঁটে ঘরে ফিরলাম৷ মনটা
বেশ খুশি খুশি৷ এতক্ষণ যাতায়াতের হাঁটাতেও যেন ক্লান্তি নেই৷ ফুল এবং প্রকৃতির অনাবিল সান্নিধ্য বুঝি মানুষের মনকে এভাবেই চাঙ্গা করে দেয়৷

      পরদিন আবার নিশ্ছিদ্র অবসর যাপন৷ কোথাও বেরোবার তাড়া ছিল না৷ হার্টফোর্ড এবং তার আশপাশের সব দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি সব ঘোরা হয়ে গেছে৷ আরও দু'টো ট্যুর হবে আগামী সোমবার এবং বুধবার থেকে শুক্রবার তিনদিনের৷ বাবাই এখানে আসবে ৩০ তারিখ মাঝ রাত্রে৷ ওর জন্যেই নায়াগ্রা, ওয়াশিংটন এবং নিউইয়র্ক ট্যুরগুলি জমিয়ে রাখা আছে৷ কারণ, ওই জায়গাগুলি জয়দীপ-মুনিয়াদের ঘোরা হয়ে গেছে৷ এখানকার এই ট্যুরগুলি শেষ করে আমরা দু'জন বাবাইয়ের সঙ্গে চলে যাব ওর আস্তানায়, ক্যানসাস সিটিতে৷ একই দেশ হলেও বিশাল দূরত্ব৷ ফ্লাইটেই প্রায় চার ঘন্টার জার্নি৷ বাবাইয়ের ওখানে আড়াই মাস কাটিয়ে আবার এখানে ফিরে আসবো নভেম্বরের ২৭ তারিখে৷ তারপর কলকাতায় ফেরার তারিখ ৩রা ডিসেম্বর৷ টিকিট কাটা হয়ে আছে অগ্রিম৷


      দেখতে দেখতে প্রায় দেড় মাস হয়ে গেল এদেশে এসেছি৷ কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ হয় ফোনের মাধ্যমে এবং G.mail বা Skype-এর মাধ্যমে৷ পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়৷







আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾











https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_7.html






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন