আষাঢ়ে গপ্প কথা -১৫
দুর্গাদাস মিদ্যা
ঘূর্ণি
১৯৬২ সাল। আবাস স্থল রাইপুর। বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত একটি জায়গা। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বেশ বড়সড় চওড়া একটি নদী, কংসাবতী। এমনি বারো মাসের মধ্যে আট মাস বড় নিরীহ। তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের :--আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে। আর বর্ষায় তার রূপ যেন বিশ বিঘত ময়াল সাপের মতন ফুলে ফেঁপে উঠে। কলকল বয়ে যায়। সেবার অঝোর বর্ষা। শহরের স্কুল যেমন গরমে ছুটি থাকে গাঁয়ের ইস্কুল বর্ষায় ছুটি থাকত। আমাদের ছোটবেলায় যখন পড়তাম তখন দেখেছি। সেই ছুটিতে অশ্বিনী মামা রাইপুরে আমাদের ঘরে এসেছিল। বেশ গাট্টাগোট্টা চেহারা। মাঠের সেরা ফুটবলার। আর ভীষণ চঞ্চল। সেই মামার দুরন্তপনার একটা গল্প বলবো। ভরা আষাঢ়। বেশ কদিন বৃষ্টিতে নদী কানায় কানায়। রবিবার ছুটির দিন। বেলা বারোটা। এমন সময় পাড়ার পাতানো আর এক গামছা কাঁধে বাড়িতে হাজির। নদীতে চান করতে যাবে। এই পাতানো মামার বাতিক আছে নদীতে স্নান করার। এইবার অশ্বিনী মামাও লাফিয়ে উঠলো নদীতে স্নান করবে বলে। বাবা বারন করা সত্যেও কোন কথা শুনলো না। পাড়ার মামাও উৎসাহ দিল শুধু জেনে নিল ও সাঁতার জানে কি না! সঙ্গে আমিও ছিলাম তবে নদীর ওই ভয়াল রূপ দেখে আমি নদীর পাড়ে বসে নদীর গর্জন শুনছিলাম।
দেখছিলাম বড় বড় গাছ ভেসে যাচ্ছে জলের তোড়ে। দুই মামা নদীর ঘাট থেকে বেশ খানিকটা উপরে গিয়ে জলে নামলো সাঁতার কেটে এই ঘাটে এসে পৌঁছোবে। পাড়াতুতো মামা বগলা মামা নদীতে সাঁতার কাটায় ওস্তাদ কিন্তু অশ্বিনী মামা তো তা নয়। তবে সাঁতার ভালো ই জানে। বেশ খানিকটা আসার পর দেখলাম অশ্বিনী মামা ঘূর্ণির সামনে পড়েছে। আর ঘূর্ণির সামনে কী ব্যাপার হতে পারে যারা নদীতে সাঁতার কাটতে অভ্যস্থ তারা জানে। বগলা মামা সমূহ বিপদ বুঝে ওর দিকে গামছা ছুঁড়ে দিয়ে একপ্রান্ত নিজের হাতে ধরে আছে। অশ্বিনী মামা কোনরকমে গামছাটা ধরতে পেরেছিল বলে সেই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিল। এইরকম ডানপিটে মামাকে বাবা তারপর দিনই বাড়ি ফেরৎ পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল। কেননা ও তো বাবার কথা শোনেনি। কত বড় বিপদ ঘটে যেতে পারতো এই গোঁয়ার্তুমির জন্য। সেই ১৯৬২সালের বন্যার কথা আজো আমার মনে জ্বল জ্বল করে আর ওই দৃশ্যের কথা মনে পড়লে ভয়ে গোটা শরীর শির শির করে ওঠে। অশ্বিনী মামা এখন আর আমাদের মধ্যে নেই তবুও স্মৃতি এখনও পিছু ছাড়ে না।
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
http://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_81.html
বর্ষায় শান্ত নদীও খুব ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে একথা
উত্তরমুছুনসকলেই জানেন। কিন্তু যৌবনের উদ্দামতা মানুষকে
দিয়ে অনেক দুঃসাহসিক কাজ করিয়ে নেয়।
অনেক সময় ফলস্বরূপ মৃত্যুও হতে পারে সেকথা
যুবকটির মাথায় ঢোকে না। খুব সুন্দর হয়েছে গল্পটি।