লেবেল

শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১

রবিবারের গল্প ।। তন্ময় চট্টোপাধ্যায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 





রবিবারের গল্প 


তন্ময় চট্টোপাধ্যায় 



                                               

  ভূতের গল্প 

                      


 সন্ধ্যা বেলা খুব জোরে বৃষ্টি পড়ছে ।একটু মুড়ি আর তেলেখাবার হলে মন্দ হয় না ।মেশোমশাই ঘরে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছেন ।সামনে গিয়ে দিলাম জোরে হেঁচে।মেশোমশাই ধড়মড়িয়ে উঠে বললো কে রে করোনা এলি নাকি ।আমি ভাবলাম করোনা কি মেশোমশাই এর পোষা পশু নাকি ।মেশোমশাই বললো কাউকে বলবি না।তা ঠিক আছে কিন্তু কি দেবে তার জন্য ।মেশোমশাই বিপদে পড়ে বললো কি চাস।জানতাম মেশোমশাই অনেক দিন চিনে ছিলেন ব্যবসার সূত্রে। তখন বুঝলাম করোনা তাহলে মেশোমশাই এদেশে আমদানি করেছে । আর মেশোমশাই এর ঝাঁপিতে অনেক রকম ভূতের গল্প থুড়ি আসল ঘটনা  আছে ।গল্প বললে মেশোমশাই ভীষণ রেগে যান।বাইরে বৃষ্টি  ঘরে ঘুটঘুট্টি অন্ধকার ।বিদ্যুত গেলে এ অঞ্চলে মোটামুটি দুঘণ্টার মধ্যে আর আসে না । ভূতের গল্পের জন্য এই তো সুযোগ ।ধানাইপানাই না করে মেশোমশাই বলতে শুরু করলো  আসবে না । তখন আমি ক্লাস এইট পেরিয়ে নাইন।ভাদ্র মাসের মোটামুটি রাত্রি ।তখন আমাদের এরিয়াতে বিদ্যুতের আগমন ঘটেনি ।রাত্রি আটটা সাড়ে আটটা হবে ।পাশের বাড়ির কাকিমা এসে মাকে  বললো দিদি ‘মনা’র বাবা বিকেলে গিয়েছে চাষের জমি দেখতে ।এখনও ফেরেনি।কাকুর গ্রামেও একটা বাড়ি ছিলো ।কিন্তু যাবে কে।আমি তখন বেশ ছোট আঠারো ঊনিশ বছরের ছোকরা ।আমি বললাম কোন অসুবিধা নেই ।আমিই যাবো ।আসলে বিপদটা তখন বুঝতে পারিনি ।একে সাহস একটু বেশি ।আবার কাকুর মেয়ে মনার সাথে আমার একটু চিঠি দেওয়া নেওয়ার সম্পর্ক ।অতএব বেরিয়ে পড়লাম সাইকেলে চেপে।হাতে তিন সেলি টর্চলাইট ।মা সঙ্গে বেঁধে দিলো বাড়ির মাছ কাটার বঁটি টা আর কয়েকটা কাঁচা মরিচ ।বলে দিলো কেউ এলে তোর কিছুই করতে পারবে না ।আর যদি আসে একটু লঙ্কা ঘষে দিবি।এসব শুনে একটু ভয় পেলাম । একেই তো হরিতকি।তায় আবার ভূতের গায়ে লঙ্কা ঘষা।বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার ।  কিন্তু মুখে কিছুই বললাম না।



            মাটির রাস্তা,আকাশে চাঁদ আর মাঝে মাঝে শরতের মেঘ।বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মাঝে ।পেরিয়ে গেলাম আমাদের গ্রাম ।গ্রামের শেষে শ্মশান ।খুব একটা কিছু মনে হলো না।মাইল খানেক যাওয়ার পর আর একটা শ্মশান পুকুরের পাড়ে ।একটু দূরেই দেখলাম কতকগুলো আলো ঘোরাঘুরি করছে ।হঠাৎ মনে পড়লো ঠাকুমা বলতো রাত্রি বেলা ডাইনিরা বেরোয় চরতে ।মানুষের কোন ক্ষতি করে না।যাক বাবা ।একটা বড় নিশ্বাস বেরিয়ে গেলো।এগিয়ে চলেছি ।পুকুরের পাড়ে একটা অশত্থ গাছ আর তার পাশের শ্যাওড়া গাছটার উপর দেখি সাদা কাপড় পরে একটা মেয়ে ছেলে বসে আছে ।মনে হলো যেন আমার সাইকেলের পেছনে বসে আছে ।আমি তো একমনে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি ।বৃষ্টি শুরু হলো ।আমি ছাতা মাথায় নিয়ে চলেছি।সামনেই মনা দের গ্রাম।আমি তো মনা দের বাড়ি চিনি না ।দেখলাম সাদা কাপড় পরা মেয়েটা আমার সাইকেলের সামনে দিয়ে আমাকে পথ দেখিয়ে চলছে ।একজায়গায় এসে দেখি সাইকেল আর নড়ছে না।বুঝলাম এখানেই মনা দের বাড়ি নিশ্চয়ই ।দরজায় আলতো টোকা দিতেই দেখি কাকু মানে মনার বাবা দরজা খুলে আমাকে দেখেই তো ভির্মি খাওয়ার যোগাড় ।সব শুনে বললেন উনার ই ভুল হয়েছে এই ভাবে  খবর না দিয়ে চলে আসা।কিন্তু আমাকে আবার ফিরতে হবে খবরটা মনাকে দেওয়ার জন্য । ফিরে চলেছি ।মনে হচ্ছে সামনে কেউ যেন  আমাকে রাস্তা দেখিয়ে চলেছে ।ফেরার সময় দেখি ও রকম অনেক আলো আমার চারিপাশে ।আমি কিন্তু একমনে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি ।তিন তিনটে শ্মশান পেরিয়ে গ্রামে ঢুকছি যখন দেখলাম পাশেই একটা আমগাছের মোটা ডাল ভেঙ্গে পড়লো।বুঝলাম ভূতটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে ।যে কোন কারণে আমার প্রতি একটু দুর্বলতা ছিলো হয়তো ভূতটার ।যার জন্য আমাকে এতো সাবধানে রাস্তাটা পরে করে দিলো আমার কোন ক্ষতি না করে ।পরে শুনছি একটা কচি মেয়ে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ঐ পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করেছিল ।সে ঐ কচি ছেলে দেখলেই সাহায্যে এগিয়ে আসে।



        ভূতের দেখা আরও কয়েকবার পেয়েছি ।সে গুলো আরও ভয়ের ।এরপর দেখি বাচ্চা গুলো সব ভয়ে সিঁটিয়ে গেছে ।এখনও রাতের খাওয়া বাকি।এর পর তিন দিন আর কেউ গল্প শুনতে চায়নি ।








আরও  পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_57.html







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন