পার্থেনিয়ামের ইতিহাস (পর্ব- ৫)
- শঙ্কর তালুকদার
পার্থেনিয়ামের বীজের সূক্ষ ও বাতাসে বয়ে বেড়াবার অদ্ভুদ ক্ষমতার কারণে একদিকে যেমন বাসস্থান থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে যে কোন রকম জমিতে এরা প্রাকৃতিক ভাবেই ছড়িয়ে পরতে পারে, ঠিক তেমনই এই আগাছার দেহের বিষাক্ত রস, ক্ষমতা,একই পরিবেশের অন্য উদ্ভিদের বৃদ্ধি প্রতিহত করার সাথে সাথেই পার্থেনিয়াম সচেতনতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হল এই উদ্ভিদটির মানুষের স্বাস্থের ক্ষতি করার ক্ষমতা ও বিভিন্ন প্রকারের রোগসৃষ্টি করা; এই পর্বে উক্ত বিষয়টিকে বিস্তারিত জানাবার প্রচেষ্টায় খানিক বিশদ আলোচনা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি!
কী ক্ষতি করে পার্থেনিয়াম ?
মানুষের তথা জীবযন্তুর শরীরের কী হতে পারে পার্থেনিয়াম থেকে?
আগের পর্বেই উল্লেখ করেছি, পার্থেনিয়াম মানুষের হাতে ও পায়ে লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় হাত, পা চুলকোতে শুরু করে, লাল হয়ে যায় এবং পরে ত্বকে ক্যানসারও পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে।
পার্থেনিয়ামের দেহ নিঃসৃত উপাদানের স্পর্শ জনিত কারণে অথবা রেণু কিম্বা বীজের প্রভাবে ঘনঘন জ্বর হতে পারে।
দেহের সামগ্রিক অসুবিধার কারণে অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চরক্ত চাপে ভুগতে পারেন কেউ কেউ।
দশ মিটার দূর থেকে বাতাসে ভেসে এসে এই আগাছাটির ফুলের রেণু মানুষের দেহের শ্লেষ্মা ঝিল্লি বা কোন প্রদাহ কিম্বা ভিজে চামড়ার উপর পরে এলার্জি, হাঁপানি রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোমল দেহ গঠনের কারণে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়।
পার্থেনিয়াম ভরা মাঠে গবাদি পশু চরলে পশুর নিম্ন দেহাংশ ঘন ঘন এই আগাছাটির সমগ্র দেহের সংস্পর্শে আসার কারণে শরীর ফুলে যেতে পারে।
তীব্র জ্বর, বদহজম-সহ নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে মানুষের মতই গবাদি পশুদেরও।
দুগ্ধবতী গরু, মোষ, ছাগল পার্থেনিয়াম খেয়ে ফেললে দুধের স্বাভাবিক স্বাদ নষ্ট হয়ে যায় এবং বিষাক্ত হয়ে যায়। সেই দুধ খাওয়া খুবই ক্ষতিকর। এই কারণে গবাদি পশু বেশি পরিমাণ পার্থেনিয়াম খেয়ে ফেললে মৃত্যু পর্যন্ত হতেও দেখা যায় বা নুতন দুগ্ধপোষ্য বাছুরের পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে।
এরা সবারই ক্ষতি করে। মানুষ, গবাদি পশু ও ফসলের উপর পার্থেনিয়ামের মারাত্মক প্রভাব আজ এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে ! একবার কোনক্রমে কৃষি জমিতে এই উদ্ভিদ জন্মালেই বহুমুখী দ্রুত বংশবিস্তারের কারণে এরা প্রায় সমগ্র জমিরই দখল নিয়ে নেয় এবং অন্য সকল ফসলের বৃদ্ধি প্রতিহত করে ধীরে ধীরে নির্মূল করে ফেলে উৎপাদনশীল জমিগুলিকে নিস্ফলা জমিতে পরিবর্তণ করে ফেলে।
কৃষি সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবে পার্থেনিয়াম আগাছা ফসলি জমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদন প্রায় চল্লিশ শতাংশ কমিয়ে দেয় এটিও ইতিমধ্যেই পর্যবেক্ষণ করা গেছে।
পার্থেনিয়াম গাছের রস ও ফুলের রেণু যে কোন জৈব মাধ্যমে রাসায়নিক বিষ কৃয়ায় মানুষ ও জীবজন্তুর স্বাস্থের ভয়ানক ক্ষতি করে।
পার্থেনিয়ামতের এইরূপ ভয়াবহতার কারণে মানুষের ও মৃত্যু হওয়াটা একেবারেই অস্বাভবিক নয় !
খারাপ খবর হল প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ভারতের পুনেতে ইতিমধ্যেই পার্থেনিয়ামজনিত বিষক্রিয়ায় এ পর্যন্ত বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
ধারাবাহিক ভাবে এই প্রসঙ্গটিও এখানে আলোচনা করা হল।
চলুন এক নজরে এর বিপদ সম্পর্কেই কিছু কথা জেনে নিই।
পার্থেনিয়ামের কারণে মানুষের বিভিন্ন রোগ ও ক্ষতি:
দেহের লোমস গঠন, অতি সূক্ষ্ম ও অসংখ্য ফুলের রেনু ও বীজ আর বিষাক্ত রসে পূর্ণ দেহের গঠনের কারণে পার্থেনিয়াম গাছের প্রভাবে মানুষের নানা রকম রোগ হতে পারে।
এখনো পর্যন্ত পর্যবেক্ষন অনুযায়ী এই উদ্ভিদের সরাসরি কিম্বা অপ্রত্যক্ষ প্রভাবে যে সমস্ত রোগ মানব শরীরে দেখা গেছে, নিম্নলিখিত তে সেগুলির উল্লেখ করা হল :
১। অ্যাজমা
২। ব্রঙ্কাইটিস
৩। হে ফিভার
৪। অ্যালার্জি
৫। শ্বাসনালীর প্রদাহ
৬। ক্ষতহীন চর্মরোগ
৭। ক্ষতসহ চর্মরোগ
৮। বিষক্রিয়ার কারণে প্রচণ্ড ম্যথাব্যথা
৯। একজিমা
১০। উচ্চ রক্তচাপ
ইত্যাদি
(ক্রমশ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন