সন্দীপ রায়
না ফেরার ঘর
নক্ষত্র লোকের আলোকের নীচে
এক টুকরো বিষাদের অন্ধকার,
সাফল্যের ভরকেন্দ্রে থেকেও
অবসাদের আত্মহূতি...
অনেক না বলা গল্প থেমে থাকে
বন্ধু মহলের রাজপথে
ব্যস্ত মনের অলিন্দ-নিলয়ে-
অবসাদের দাবার ঘরে কোনদিনও
ভুল চাল ছিল না !
ছিল না কি সমর সজ্জার অবিন্যস্ত বিন্যাস ?
একঝাঁক প্ররোচনার এলোমেলো বাতাস--
বাতাস বিষময় ...প্রাণঘাতী,
যে কোন মূল্যে জীবন বাজি
কিস্তিমাত !
দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জীবন সৈনিকের
রণে ভঙ্গ-অসহায় আত্মসমর্পণ ।
না ফেরার ঘরে চিরস্থায়ী ঘর বাঁধা!
প্রতীক্ষার দীর্ঘ ছায়া
অদৃশ্য প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতা
কখন ট্রেন আসবে কেউ জানে না...
প্রতীক্ষায় কেটে যায় অনেক রাত
অপেক্ষার আয়না মুখ টিপে হাসে ।
ঘন কুয়াশার চাদর গায়ে ভোর হলে
রোদ্দুর গিলে খায় শরীরী ছায়া
কারা যেন কানে কানে কথা বলে-
গোলা ভরা ধান -আর কত দিন ?
বেলা-অবেলায় দেনা বাড়ে
ঋণের বোঝায় আমানতে টান
ভাঁড়ার শূন্য-
কার কাছ বাড়িয়ে দেবে রুগ্ন হাত !
অসময়ে ঝমঝম বৃষ্টি নামলে স্বস্তি ,
মেঘের দেখা কই !
ধান বীজে পোকা লেগেছে, মাথায় হাত
শ্রাবণ দূর অস্ত, লাঙ্গলের ফলায় পাথুরে মাটি
রুজি-রুটির বোবাকান্না ।
অদৃশ্য স্টেশনে ক্লান্তির ধকল সামলে
অনন্ত প্রতীক্ষায় কেটে যায় অনেক অজানা রাত ।
অনুরাগ
সন্ধ্যা গাঢ় হলে- নিমেষে দু'টি ছায়া
কাঁধ ছুঁয়ে আরও ঘনিষ্ঠ, মুখোমুখি...
ভারী ঠোঁট-অন্ধকার হাতড়ে
নরম ঠোঁটের নিবিড় স্পর্শ সুখ ।
সেই কবে যৌবনের অসমাপ্ত চুম্বন --
সেদিনটাও ছিল ধবধবে সাদা
জ্যোৎস্না মাখা তারা ভরা রাত ,
অজান্তেই হাত কাঁপে আবেশে
নড়ে যায় মূর্তির অবয়ব,
রং- তুলির গাঢ় প্রলেপ
অপূর্ণ চক্ষু দান পর্ব।
খোলা আঁচল মাটিতে লুটোপুটি
ঘন ঘন নিশ্বাসে বাতাস ভারী
মাধবী লতা জড়িয়ে কোমরে
সন্ধ্যা মালতী চোখ-- অমৃত তৃষ্ণা ...
কলঙ্ক দাগ রেখে যায় কলঙ্কিনী চাঁদে ।
নীল আকাশের নীচে
ভেতরে মেঘ জমেছিল অনেককাল আগেই -
মেঘের পরে মেঘের পরত, বিদ্যুৎ চমক ।
বাইরে দ্রুত গড়াচ্ছে সময়
সময়ের হাতে মুঠোবন্দি উদ্বেগ-
উচ্ছ্বাসে ভাসল আতঙ্কিত কেউ,
শুধু একটি দু'টি বক মেঘের চাদরে
অজানার সন্ধানে মেলে দিল ডানা।
জীবন মৃত্যুর চেয়ে অনেক বড়,
কিছুই নেই, তবু যেটুকু আছে - তাই স্বর্গ ।
গৃহস্হালী সামলে-অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ...
স্বপ্নের আকাশে মাঝ রাতে ঝড় ওঠে
ছবি আর ছবি থাকে না
ছায়া হয়ে দূরে সরে যায়,
দিশেহারা ঝরা পাতা নিষেধের কাঠগড়ায় -
তাণ্ডব বলে যায় শতাব্দীর প্রাচীন ধ্বংস-কথা ।
পা আছে অথচ মাটি নেই, শুধুই জল
মাথা আছে অথচ ছাদ নেই,খোলা আকাশ -
অভাবী মানুষগুলোর চোখ খোলা আকাশে স্থির।
স্মৃতির ডুব সাঁতার
জানালা দিয়ে দেখা পৃথিবীটা হয়তো অনেক ছোট --
গ্রিল ধরে দাঁড়ানো ভেতরের মানুষটি
দিন-রাত হন্যে হয়ে খোঁজে
পৃথিবীর অন্য কোন এক মানচিত্র ।
হালকা হাওয়ায় ওড়ে উস্কোখুস্কো চুল
যে চুলে একদিন অবাধ্য আঙ্গুলের ছোটাছুটি—
ভরা কোটালের সংগীত সুমধুর ।
মন- পিয়ানোর ছন্দে ছন্দে
মানচিত্র বদলে যায় নিশিদিন,
ভূগোল আর গোল থাকে না
যেন ভাবনার চরম ইতিবৃত্ত,
ঢেউ ওঠে, বান আসে অহরহ
ভাটার টানে পড়ে থাকে ভেজা খড়কুটো ।
জানালার বাইরে জমাট অন্ধকার,
দূরে স্কাইলাইল মিশে আছে
পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে-
ঠিকানা বদলের অন্য গৃহস্হালী,
সাজানো আবাসন।
যে ভাবে কল্পনার মন-ভালোর বিকেলে
রূপ ছড়ায় সন্ধ্যামালতী ।
এখনও কী শাঁখ বাজে প্রতি সন্ধ্যায় ?
এখনও কী শিশিরের টুপটাপ ছন্দে
হেঁটে চলে মন- সকাল!
এখনও কী তারাভরা রাতে আঙ্গুল গুনে গুনে--
ঐ দ্যাখো সন্ধ্যাতারা, সপ্তর্ষি...আরও কত কি...
জানালার ভেতরে দ'চোখে ঝমঝম বৃষ্টি নামলে
অবসন্ন হাত বন্ধ করে দুটো কপাট ।
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন