প্রণয়কান্তি কপাট
এই দহন নিয়েই
যে পুরুষটি এইমাত্র
আলো নিভিয়ে খুশিমনে
ঘুমাতে গেলেন
গতকাল তিনিই নিজেকে জড়াতে চেয়েছিলেন
নীল রজ্জুর আলিঙ্গনে
যে নারীটি এইমাত্র
পঞ্চব্যঞ্জনে হাসি মুখে
সংসার করছেন
গতরাতে তিনিই নিজেকে ভরাতে চেয়েছিলেন
আগুনের নিবিড় স্পর্শে
অপ্রাপ্তি
কিংবা
অভিমান
এই দহন নিয়েই
পৃথিবী ছুটছে বিরামহীন
হে দিনান্তের সূর্য
কর্ণের রথের চাকার মত
দিগন্তের মাটিতে ডুবে গেল
চৈত্রের শেষ সূর্য
তন্ময় বালকের মতো দেখেছি
ভেঙেছে আর গড়েছে
মেঘ-বালিকার ঘর
বধূর লম্বা সিঁথির মতো
বিরল সৌন্দর্যে সেজেছে
পশ্চিম আকাশের ঝুল বারান্দা
সন্ধ্যা এসে বুলিয়ে দেয়
অন্ধকার রঙে তুলির এক টান
দিগন্তরেখায় থাকে শুধু
বেলাশেষের গান
হে দিনান্তের সূর্য ,
নতুন প্রভাতে দেবে কোন আলোর বর্ণমালা
হে জীবন
লম্বা সড়ক ধরে ছুটে যায় যেমন
রাতের দুরন্ত একলা ট্রাক
কিংবা
ছিন্ন- মেঘের পিছনে যেমন দৌড়ায়
সূর্যাস্তের যাই-যাই আলো
জীবন চলেছে তেমনই শেষ গন্তব্যের ঠিকানায়
বাবাকে বলেছিলাম বৃষ্টি এনে দেব
উত্তরের মাঠে একদিন ঠিক
কথা দিয়েছিলাম মা-কে রোদ্দুর ঢেলে দেব
নিত্য নিকানো আমাদের উঠোনে
প্রিয়বান্ধবীকে বলেছিলাম খুব পাশে থাকব
মেঘ-বৃষ্টি কিংবা রৌদ্রে
করতল ভরে ভুল পাঠ নেওয়ায়
হায় জীবন !
চুম্বনে এতো বিষ রেখেছিলে
চুপকথা
রবীন্দ্রনাথের অনুভব পেতে প্রথম দাঁড়িয়েছিলাম
ছাতিমতলায়
নিভৃত মনের চুপকথারা সহজে হচ্ছিল
ঝরাপাতা
দূরে তাকাতেই তোমাকে দেখি
সরষেফুলের পাপড়ির মত আঁচল উড়িয়ে তুমি
দিগন্তিকা হয়েছ
প্রস্ফুটিত তোমার মুখখানা রেখেছি
সারারাত
দুই করতলে
হলুদ ফুল দেখলে আজও কাছে যাই
দাঁড়াই
চুপিচুপি বলি
দিগন্তিকা,
তুমি কী এখনো হলুদ শাড়ি পরে
প্রথম অন্ধকার
পায়ের নীচে ছিল ছুটছুট রোদ্দুর ঢালা মাঠ
আর
মনের নিভৃত- আকাশে ছিল স্বপ্নঘুড়ির উড়ান
পূর্ণতার আলো খুঁজতে নির্মাণ হয় তখন
অন্য ভৌগোলিক পথ
আলোর অনুসন্ধানে মনের আবিষ্কারে
ঘামে - ভেজা ক্লান্ত নাবিকের মতো আজও
বিরামহীন খুঁজে চলি প্ৰিয়তম শব্দমালা
রবীন্দ্রনাথ
কিংবা
জীবনানন্দে
আজও মনে পড়ে- যেদিন চলে আসি
আঁচলে মুখ ঢেকে
নীরবে কেঁদেছিল মা রান্নাঘরে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম সেদিন
প্রথম অন্ধকার।
প্রণয়কান্তি কপাট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন