উন্মুক্ত কবিতাগুচ্ছ —১৪
দীপক বেরা-র চারটি কবিতা
১.
নৈঃশব্দ্যের ব্যাকরণ
কবিতা লিখতে গিয়ে হোঁচট খাই রোজ—
শব্দবিধি, বানানরীতি, যতিচিহ্নের সঠিক ব্যবহার
ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সামাজিক উত্তেজনা ইত্যাদি, প্রভৃতি
হাজারো এক বিধিনিষেধের গেরো
তাই, কবিতার খাতা ফেলে মাঝে মাঝে ভাবি
নৈঃশব্দ্য দিয়ে যদি কবিতা লেখা যেত..
নৈঃশব্দ্যের একটা ব্যাকরণ রচিত হওয়া খুব জরুরী!
২.
তরঙ্গ
সকালের ব্যস্ত হাতে ইতস্তত, তবু
এগিয়ে আসত এক পেয়ালাভর্তি তরঙ্গ
কিছু বুদ্বুদ মেশানো উষ্ণতা, ..ওম
আর যেহেতু ওম, চুমুকেই হৃদয় হতো অবনত
করতলে বোধ করি, কত স্মৃতি..!
হৃদয়ের সেই তরঙ্গ কি থেমে আসছে তবে?
করতলে ধরে থাকি তার ক্ষীণ অবশেষ
চাঁদের গায়ে তীব্র গ্রহণ, আশঙ্কিত রোজ;
নদীর ভাটায় এখন শেষ পারানির ক্ষীণ স্রোত..
৩.
শান্তির খোঁজ
আমরা বড়রা দিনে দিনে কেমন যেন
লোভী আর স্বার্থপর হয়ে উঠছি
মাথার মধ্যে সর্বক্ষণ শয়তানি বুদ্ধি যুযুধান
রক্তচক্ষু লুকিয়ে রাখি কালো রঙের চশমায়!
অথচ, দেখো—
শিশুদের চোখ, টলটলে স্বচ্ছ দিঘির মতো
আর তাতে যেসব মাছেরা বাস করে
তারাও সব স্বর্ণাভ উজ্জ্বল উচ্ছল ঝকঝকে
শিশুদের সাথে খেলা করলে মন ভালো হয়ে যায়
ওদের ভালোবেসে কোলে তুলে নিই
হাতে তুলে দিই চকোলেট, বেলুন, খেলনা..
শিশুদের ছোট্ট ছোট্ট হৃদয়ে আছে
পরম শান্তির নীলরঙা এক বিশাল আকাশ।
৪.
সময় ও জীবন
অস্থির, ধ্বস্ত এই সময়ের শরীর থেকে
তুলে নাও কয়েক ফোঁটা অন্ধকার
রাখো তোমার টেস্ট টিউবে, তারপর
মনের ল্যাবরেটরিতে
চেতনার অ্যাসিড মিশিয়ে সলিউশন প্রস্তুত কর
কেমিক্যাল রিয়্যাকশন, স্মৃতি বিস্মৃতির বুদ্বুদ
ধোঁয়া ধোঁয়া পানজেন্ট স্মেল...
এনালাইসিস থেকে উঠে আসে—
এতদিন প্রিয়জন বলে যাদের চিনেছিলে
টেনে নিয়েছিলে নিজের কাঙ্ক্ষিত বৃত্তে
এক নিঃশ্বাসে চুরমার হয়ে যায় আলোহীন সম্পর্ক
মানুষকে যদি জড় পদার্থ ভাবো
জীবন তবে বিয়োগের খাতা
প্রান্তিক হতে হতে শেষে, বিরাট এক শূন্যতা!
অসাধারণ সব
উত্তরমুছুনআন্তরিক ভালোবাসা ও অশেষ ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুন