ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৭)
ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য
অনন্যা দাশ
এখানে তো কোন কাজ হবে না রে!” অঙ্কন নিরাশ হয়ে বলল।
সারা বিকেল ধরে ওরা দুজন ঘুরে ঘুরেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। লোকজন যেন ওদের দেখলেই পালিয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ির জানালা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঝপাঝপ, দোকানের ঝাঁপ পড়ে যাচ্ছে!
“কী ব্যাপার বল তো? আমাদের দেখে সবাই ওই রকম ভূত দেখার মতন করছে কেন?” অঙ্কন জিজ্ঞেস করল।
“জানি না বাপু এত ভয় কিসের ওদের,” ভজা বলল।
একটা ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে পিজা কিনল ওরা। দোকানদার ওদের সঙ্গে কোন কথা বলল না। লাইনে ওদের পিছনে একজন লোক ছিল। ওরা যখন পিজা নিয়ে হোটেলের দিকে হেঁটে যাচ্ছে তখন কে যেন ওদের ডাকল। ওরা পিছন ফিরে দেখল লাইনে ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা।
লোকটার বয়স পঁয়ত্রিশ চল্লিশ হবে। পরনে দামি সুট। দিব্যি ফিটফাট। ওদের দিকে এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করে বলল, “তোমরা তো এখানে নতুন এসেছ বলে মনে হছে। আগে তো তোমাদের দেখিনি। আমার নাম এরিক ওয়েবার। আমি সি অ্যাণ্ড স্যান্ডে কাজ করি। আমার অফিস কাছেই। চলো সেখানে গিয়ে গল্প করা যাক। এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না।”
কেউ কথা বলতে চাইছে জেনে অঙ্কন আর ভজা তো সঙ্গে সঙ্গে যেতে রাজি হল। এরিক ওদের নিজের অফিসে নিয়ে গেল। ঢুকে রিসেপশান বসা মহিলাকে হ্যালো বলে ওরা এরিকের অফিসে গিয়ে বসল।
“তোমরা চা কফি কিছু খাবে?” এরিক জিজ্ঞেস করল।
“একটু কফি হলে মন্দ হত না,” ওরা দুজনে বলল।
“দাঁড়াও আমি ম্যান্ডিকে বলে আসি,” বলে রিক বেরিয়ে গেল। একটু পরেই ফিরে এল।
“আপনাদের এই অফিসটা কিসের?” ভজা প্রশ্ন করল।
“সি অ্যান্ড স্যান্ড একটা হোটেল কাম রিসর্ট চেন। মার্কিন দেশের বেশ কিছু সমুদ্র সৈকতে আমাদের রিসর্ট আছে। তা আমার কথা থাক। তোমরা এখানে কী করতে এসেছো?”
ভজা বলল, “আমাদের এক বন্ধু পাহাড়ি পথে হাইকিং করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যায়। তার বাড়ি এই এলাকাতেই। আজকে তার ফিউনারাল ছিল আমরা সেটাতেই এসেছিলাম। যদিও এখানকার লোকজনদের ব্যাপার স্যাপার ঠিক বুঝতে পারছি না। সবাই এমন ভাব করছে যেন গ্রান্টকে আমরাই মেরেছি!”
“ও গ্রান্ট, মানে গ্রান্ট ফস্টার মারা গেছে?”
“হ্যাঁ, আজ ওর ফিউনারাল ছিল। এখানে তো মনে হয় সবাই সেই খবরটা জানে। আপনি জানেন না শুনে আশ্চর্য লাগছে!”
“না, আমি জানতাম না। আসলে আমি দিন সাতেকের জন্যে মায়ামি গিয়েছিলাম। ওখানেই আমাদের হেড অফিস।”
“ও আচ্ছা, তাও বলুন। কিন্তু এখানের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।”
“আসলে গ্রান্ট ওর বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল শুনেছিলাম। খুব বড়ো ধরনের ঝামেলা হয়েছিল। এখানকার লোকজন বেশ সেকেলে মনোভাবের। ছেলে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করে গেছে মানে সেই ছেলে ত্যেজ্যপুত্র! এখানকার সবাই এটাও মনে করে যে বেশি পড়াশোনা করেই ওর মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল। তোমরা যেহেতু ওর কলেজের বন্ধু তাই তোমরাও শত্রু পক্ষ!”
এর মধ্যে ম্যান্ডি নামক মহিলা এসে কফি দিয়ে গেল কিন্তু সেটা বেজায় কড়া। প্রচুর পরিমাণে দুধ আর চিনি মিশিয়ে তবে ওরা খেতে পারল।
“তোমরা কী আজকেই ফিরে যাবে নাকি?”
“না, আজকের রাতটা এখানেই থাকব। কালকে ফিরে যাবো।”
“ও আচ্ছা। তা তোমরাও পিজা কিনেছো আর আমিও পিজা কিনেছি তাই ডিনার আর আমার সঙ্গে করতে বলছি না। কাল সকালে বরং চা খেতে চলে এসো তখন গল্প করা যাবে। আমরা যারা এখানে বিদেশী তাদের একসঙ্গে থাকা উচিত তাই না? এখন অফিস বন্ধ করতে হবে। ম্যান্ডি বাড়ি যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।”
“হ্যাঁ, তা তো বটেই। ঠিক আছে আপনি অফিস বন্ধ করুন। আমরা আজ আসি। কাল সকালে আবার দেখা হবে। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল।”
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন