রবিবাসরীয় বিভাগ
আজকের গল্প
অমাবস্যার চাঁদ
মেঘলামন চক্রবর্তী
অন্ধকারে শুয়ে অর্পিতা। শঙ্খধ্বনির শব্দে বোঝে, সন্ধ্যে হয়েছে। দীপালোক জ্বলে উঠবে ঘরে ঘরে। চতুর্দ্দশীর ঘোর কালো ছাপিয়ে দিগন্ত মেতে উঠবে ঈশ্বরীর আলোয়! ঠাকুমা বলতেন, ভূতচতুর্দশীর রাতে মাটির চোদ্দপ্রদীপ দিতে হয় চোদ্দ-পুরুষের উদ্দেশ্যে।নিবেদিত আলোর শিখা বেয়ে তারা নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। আজ সেই ভুতচর্তুদশী! অন্ধকার ছাদে উঠে আসে অর্পিতা চুপটি করে এককোনে দাঁড়িয়ে থাকে, আকাশের দিকে তাকায় লক্ষতারার মিছিলে বাবাকে খোঁজে , ঠাকুমাকে আর তাকে ও অ-সময়ে যে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে!
দরজায় কড়া নড়তেই ভূমিকম্পের মতো কেঁপে উঠে বসে অর্পিতা। ছিটকিনি খোলে। চাঁদার বিল এগিয়ে দেয় একটি হাত। সুইচে হাত রাখে ও আলো জ্বাললো না কী হবে এই আলো! বৈদ্যুতিন আলোয় কি তার মনের ঘর অন্ধকারহীন হবে? সেখানে যে চির অমাবস্যা।
দেখতে দেখতেই আশে- পাশের বাড়িগুলোতে নানাবর্ণ আলোকমালায় সেজে উঠল। প্লাবিত আলোর রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। ভেতর থেকে কে যেন টুঁটি চেপে ধরে তার। শ্বাসকষ্ট হতে থাকে অর্পিতার, সীমাহীন শূন্যতার পাহাড় চেপে বসে হৃদপিন্ডে। কাঁদতে চায় কিন্তু এক ভাষাহীন অভিব্যক্তি প্রাণবায়ু আন্দোলিত করে। খাঁচার পাখির মতো ডানা ঝাপটায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে অর্পিতা। দু'চোখের কোল বেয়ে নামে জাহ্নবীধারা!
এই বিশাল বৈভবের পৃথিবীতে সে সবকিছু হারানো ভাসমান খড়কুটো। কিন্তু কী ছিল তার? শিকড়ে হাতড়ায় অর্পিতা তারও নিচে, শরীর ছুঁলেই কী হৃদয়ের গভীরে স্বর্ণকৌটোয় ভালাবাসার ভ্রমর জাগাতে পারে সবাই?
জীবন অত সোজা নয়, তার একটা লক্ষ্য আছে হিসাব মেলেনি কোনদিনও অর্পিতার। অনেক যুদ্ধ করে শেষপর্যন্ত বদ্ধ জলাশয়ের নাগপাশ থেকে ছিটকে পড়েছিল গ্রহান্তরে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো টেনে নিয়েছিল এক দমকা হাওয়া।
এখানে এখন মরুভূমির জোৎস্না ফুল ফুটবে না কোনদিন,প্রকৃত আলো জ্বলে উঠবে না!মধুর বিরহবন্ধনের মাঝখানে প্রশ্নচিহ্নের মতো তার বেঁচে থাকা! অভিমান হয় খুব। নিজেকে খোঁজে নক্ষত্রে, দিক-দিগন্তে। নদী ও নারী নিজেকে নি:শেষ করে অন্যের পাড় বেঁধে দেয়...
সুন্দর
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো
উত্তরমুছুন