আগমনী বন্দনা -২৫
স্মৃতি শেখর মিত্র
১.
রাগী গোয়ালিনী
যদিবা বর্ষা ঘনঘোর
মাঝে মাঝে দক্ষিণ বঙ্গের বাস ধরে
দুর্গাপুর যাওয়ার পথে চোখে পড়ে
কাশফুলের হাতনাড়া।
ওগো বন্ধু পথিক! আমি এখানেই জেগে আছি
ভালবেসে থাকতে চাই শরৎসুন্দরীর কাছাকাছি
এখনও প্রতিবছরের মতো 'রাগী গোয়ালিনী'
প্রত্যেককে তার দাওয়ায় বসায় ।কতগান কত
গল্প শোনায়। আটচালায় যাত্রাপালা
'ভাবরা ফুলুরীর গল্প,' আরও কত কী?
পিঁড়ি পেতে দেয়, মাটির দেওয়ালে তার
পড়ে নূতন মাটির প্রলেপ ,
পূজোর আগে প্রতিবছরেরই মতো।
যদিও পিতৃদত্ত নাম তার 'রাগী গোয়ালিনী'
মোটেও রাগী নয়,সে নিত্য সদালাপী।
ভালবাসার আঁচল পেতে রাখে
দীণ, দুঃখী মানুষের লাগি।
মায়ের মন্দিরে তার
নিত্য আসা যাওয়া।
ভোর বেলায় আশ্বিনের
শুরু থেকেই শুনিয়ে যায়
আগমনী গান
খঞ্জনি বাজিয়ে
যতদিন না বিসর্জনের
ঢাক বাজে।।
২.
খোলা চিঠি
মা! তুমি দুঃখের তরী বেয়ে আসছো এবার
চারিদিকে জল থৈ থৈ মাঠ ঘাট
নেই কোন প্রাণীর নিস্তার।
বাপের বাড়িতে তোমার কিভাবে আপ্যায়ন হবে
পূজা হবে কেমন করে তাও তো জানা নেই।
মেদিনীপুর আজ জলের তলায়গাঁদা, গোলাপ,পদ্ম, শালুক ফুলের পড়েছে
আকাল।বসতে দেওয়ারও নেই কোন পরিপাটি করে আলপনা আঁকা পিঁড়ি।
শুধু জল,জল আর জল, জলের সংসার।
সমস্ত শস্যক্ষেত আজ জলের তলায়।
মাথায় হাত রেখে বসে আছেন রহমান চাচা
কিংবা গোবিন্দ তামুলী যাঁরা সব প্রান্তিক চাষী।
মা! তোমার সন্তানেরা আজ গৃহহীন, ছন্নছাড়া
জলের স্রোতে ভেসে গেছে তাদের মন ও মাণিক্য
যা কিছু সঞ্চয়, মানুষের বিলাস ,ব্যসন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন