লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা( পর্ব-৩১)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ — বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।। E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 




ধারাবাহিক ভ্রমণকথা( পর্ব-৩১)

পৃথিবীর উল্টো পিঠ 

বিশ্বেশ্বর রায়


দেখতে দেখতে Marriott-এ প্রায় এক মাস হয়ে গেল। আর সপ্তাহখানেক এখানের বাস কাল। এরপর যেতে হবে বাবাইয়ের নেওয়া নতুন অ্যাপার্টমেন্টে। সেখানেও কাটবে প্রায় এক মাস। তারপর 'মন চলো নিজ নিকেতনে'। মন বেশ কিছুদিন ধরেই টানছে। কলকাতায় কতো কাজ। তিন মাস পরে বাবাইয়ের বিয়ে। তার সবকিছু সারতে হবে। তারপর একে একে বাড়িঘর, পেনশন, ব্যাঙ্ক, পোষ্টঅফিস, D.S.,M.I.S. কতো কিছু কাজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, সব সামলাতে হবে। তারপর রয়েছে বিয়ের কার্ড ছাপানো, নিমণ্ত্রণ করার পর্ব, ডেকরেটর, ক্যাটারার, কেনাকাটা। এখানে মহাসুখে শুধু কাটালেই তো চলবে না। বাবাই তো প্রায়ই বলে--'কী হবে কলকাতায় থেকে? লাইফটা এনজয় করো। এখানে আমার কাছে, দিদির কাছে থাকো। ইন্ডিয়ায় গেলে মুম্বইয়ে আমাদের কাছে থাকবে। আস্তে আস্তে কলকাতার পাট চুকিয়ে দাও।' বললেই কি আর চুকিয়ে দেওয়া যায়! নিজেদের হাতে গড়া সংসার, বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব-- এসব শিকড়ের টান ছিন্ন করে যাওয়া কি অতই সহজ! এই বয়সে অতল-প্রোথিত শিকড় উন্মূল করে নতুন জল-মাটি-আবহাওয়ায় নতুন করে কি মাটির গভীরে শিকড় ছড়ানো সম্ভব! ওরা হয়তো আমাদের এই যন্ত্রণা ঠিক বুঝবে না। কারণ, ওদের শিকড় বেশিদূর চারিয়ে যেতে পারেনি। আগে তো কলকাতায় ফিরি, আগে তো বাবাইয়ের বিয়ে থাকে চুকুক। তারপর ফ্ল্যাট আর গাড়ির একটা বন্দোবস্ত করতে হবে। বাড়ির কথা না হয় পরে ভাবা যাবে। অনেক কাজ, অনেক চিন্তা, অনেক সমস্যার পারাবার পেরিয়ে তবেই না অন্যত্রের ভাবনা!

      বাবাই অফিস থেকে ফিরলে প্রায় আটটার দিকে আবার সবাই মিলে বের হলাম। কিছু কেনাকাটার ছিল। বাবাইয়ের নতুন অ্যাপার্টমেন্টের সংসারের টুকিটাকি প্রায় সবই কেনা হয়ে গেছে। এখনও রান্নার কিছু বাসনপত্র কেনা বাকি। আগের অ্যাপার্টমেন্টে বাবাইকে বেশ কিছু জিনিসপত্র ফেলে আসতে হয়েছে। আনা সম্ভব হয়নি। তাই ঠিক হয়েছে এবার ভারী এবং দামি কিছু কেনা হবে না। কারণ, কখন আবার অন্যত্র ছুটতে হবে তার নিশ্চয়তা নেই। যেগুলো নেহাতই না হলেই নয় সেগুলোই কেনা হল। যাতে আবার অন্যত্র যাওয়ার সময় সেগুলো সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে। বাকিগুলো ফেলে গেলেও আর্থিক ক্ষতি খুব বেশি হবে না।

      কয়েক দিন পর আজ আবার বেরিয়েছিলাম 3700 নম্বরে Metal Morphosis দেখতে।কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখা গেল সেটা অন্য কিছু। গুগল্-এ যা বলছে তা নয়। G P A-তে পথনির্দেশ  নিয়ে আমরা দু'বার চেষ্টা করলাম সঠিক জায়গায় পৌঁছবার; কিন্তু দু'বারই একই জায়গায় নিয়ে গেল। যাইহোক, শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে Wal-Mart, Family Dollar, Dollar General, Dollar Green, Dollar Tree ইত্যাদি Mall এবং দোকানে যাওয়া হল কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা সারতে। কারণ, আর তিন/চার দিন পর Marriott ছাড়তে হবে বাবাইকে। যেতে হবে নতুন অ্যাপার্টমেন্টে। সেখানে রান্না-খাওয়ার সরঞ্জাম তো লাগবে। এখানে সবকিছুই আছে, কেনার প্রয়োজন পড়েনি। ওখানে রান্না-খাওয়ার সরঞ্জাম ছাড়াও বিছানা-বালিশ-লেপ-কম্বল, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তো চাই। 
      আজ রবিবার, কোথাও বেরুনো হল না। যদিও বেরোবার কথা ছিল। কিন্তু দুপুরের খাওয়াদাওয়া সারতে সারতে এতো দেরি হয়ে গেল যে বেরোবো বেরোবো করেও আর হয়ে উঠলো না। তারউপর বাবাইয়ের এক অফিস-কলিগ্ এই ম্যারিয়টেই এসে উঠেছে ইন্ডিয়া থেকে, আজই। আসার খবর জানিয়ে ফোন করেছিল। বাবাই তার সঙ্গে দেখা করতে গেল সন্ধ্যায়। তারউপর ওর অন্য এক কলিগ্, যে কাছাকাছি অ্যাপার্টমেন্টে থাকে, সে-ও এসেছিল দেখা করতে। ফলে তিনজনে অনেকক্ষণ আড্ডা  দেবার পর নতুন কলিগের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে তিনজনে বেরিয়েছিল। তারপর অতো দেরি করে আমাদেরও আর বিশেষ বেরোবার ইচ্ছা ছিল না। কারণ, আর দু,দিন পর একত্রিশ তারিখে ম্যারিয়ট ছেড়ে নতুন অ্যাপার্টমেন্টে Shift করতে হবে। জিনিসপত্র ছড়িয়েছিটিয়ে এলোমেলো হয়ে আছে, সেসব গোছাতে হবে।



         
(চলবে) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন