যে কোনো ভাবে ফেরত চাই
সুপুষ্ট ফুল তুলে এনেছি
মালা পরাবো তোমার বিশালতার গলায়
এমন দিনে বিষাদ ঢেলে দূরে চলে যাচ্ছো !
আর কি দেখা হবে না তোমার সমুন্নত শির!
শঙ্কাতুর প্রাণ নিয়ে বসে আছি
তোমার ফেরার খবর নিয়ে দক্ষিণ-বাতাস আসে যদি!
দেখে নিও, তোমাকে বরণ করবো
যা কিছু সুর তোলে
যা কিছু ফুল ফোটায়
যা কিছু সুরভি ছড়ায়... তাই দিয়ে
যদি ফিরে আসো, গ্রহণ করবো
যা কিছু স্থায়ী
যা কিছু সুগভীর
যা কিছু আলোক-উজ্জ্বল ... তাই দিয়ে
সত্যিই যদি এসে যাও
যা কিছু সারিয়ে তোলার
যা কিছু পুনরুদ্ধার করার
সে সবকিছু করে দেবো
অশনিকালে
আশার উঠোন থেকে তুমি হারিয়ে গেলে
ফেলে যাওয়া মনের টালমাটাল দশা
তোমায় কি একটুও কাঁপায় না !
ফিরে এসো, কথা দিচ্ছি
তোমার সৌন্দর্যের সুষম বন্টনে
সামঞ্জস্যের ভার নেবো
বিপুল হয়ে ফিরে এসো হে নির্মল
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
মিছিল
ঐ যে সুদূর ... দেখতে পাচ্ছি...
তোর চকচকে চোখে শুকতারা উজ্জ্বল
এখনও তোর দামাল শরীরে খই-গুড়ের মিশ্র ঘ্রাণ
এখনও তোর বুদ্ধিগুলো বুনতে পারে বাবুইয়ের ঘর
বাগান থেকে উড়ে যাওয়া পাখি তোকেই খুঁজছে
মনে ও মননে তুই এসে গেলে
পালিয়ে যেতো মোড়া পেতে বসা অদ্ভুত আঁধার
কতদিন তোর খবর নেই ! বাদল মাদল থলেয় পুরে
অন্ধকারে যাচ্ছিস কার মুঠোর মধ্যে ?
মেঘ দে...পানি দে... চিৎকারে কর্তার দরজায়
আন্দোলনে দেখেছিলাম তোকেই
বেলা বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে ছায়াদের
দীর্ঘ হওয়ার মতো ছিল তোর সম্মুখ-পদক্ষেপ
নদী দখলকারী দস্যুর বুক চিরে পলি টেনে বের করে নে
তোর পলি ঢাকা দু'পায়ে কোন শেকল এসে ছোঁবেনা
মুমূর্ষু নদী বাঁচানোর ঝুঁকি নেয়নি যারা
ভেসে যাক তারা
বানের জলে ভাসমান পচা ইঁদুর-চিকার মতো
ভোর টোকা দিচ্ছে তোর দরজায়
উঠে আয়... মিছিল... উঠে আয়... তুই যে তুমুল !
সম্ভাবনার পথে কোটি কোটি মুখ !
জন্ম আছে তোর, মৃত্যু কখনও নেই
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
নীরব প্রাপ্তি
একদিন নক্ষত্রে উন্মুখ ছিলো এক জোড়া চোখ
সবুজ ক্ষেতের প্রাচীর ছিলো বাড়ন্ত হৃৎপিন্ডের চতুর্পাশে
একসময় পিচপথ, দালানকোঠা, বণিক সমাজের তীরে
শহরের বুক ভর্তি সম্ভাবনার নৌকা ভিড়তো
কুয়াশার স্বর মুছে ধোঁয়াশারা এসে গেলে
ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়-
নৌকোর বদলে এখন পাড়ে ভিড়ে কাগজের নৌকো
এখানে রোজ মুখোশের ভিড়ে
নতুন মুখোশ যুক্ত হওয়া কারসাজি
এখানে ধর্তব্য কথার বদলে উড়ন্ত বাক্যের সংলাপ
এখানে স্বচ্ছ জলের প্রবাহ খোঁজার প্রহসন
এখন নদীর জল শুকোনোর দিন চলছে
এখন আকাশ ভরা চিল মাছালের ওড়াউড়ি
ইদানিং জল ও কাদার ঘোলাটে রং বহে কৌশলী-স্রোতে
কেবল দর্শকে উপনীত হওয়া,
এবং তঞ্চকতা-চর্চাগুলোর আয়ু পেয়ে যাওয়া
পাশাপাশি চলে বেশ !
এখানে সঙ্গির মনদ্বীপে নিঃসঙ্গতার নিরেট নিবাস
এখানে মাটি ঢেলার ভিড়ে এক পাথরের বোবা-বিস্ময় !
মাটি থেকে কোনো পাথরকে 'বিচ্ছিন্নতা' দিতে-
নীরবতা'র সর্বোচ্চ মাত্রা কেমন হতে হয় !
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
অমল দ্রষ্টব্য
খুঁজছি নিদারুণ উৎকন্ঠায়
স্বস্তির বৈঠকে পাচ্ছিনা তা কোনোরকম
আকাঙ্ক্ষার পেছনে পেছনে হেঁটে আসে ব্যর্থতা
দীর্ঘকালের তৃষ্ণা ; এবার নতুন কিছু শুনবো বলে
খুঁজছি ঘুমন্ত শহরে
জেগে থাকা বাতিগুলোর মতো নীরবে
নাকে মুখে কুয়াশার ছুরিকাঘাত সইয়ে সইয়ে
কিংবা চৈত্রের খরাকে মাথার টুপি করে নিয়ে
চলছি এলোপাথারি ; খুঁজছি তুমুল
কোথায় যেন সে চাপা পড়ে আছে নিরুপায়
যন্ত্রের চিৎকার, বিত্তের ভায়োলিন
টুঁটি টিপে ধরেছে তার
খুঁজছি সেই হারানো পথ ; মাঠের পাঁজর ঘেঁষে নিথর
শুয়ে ছিল যে পথ ; যে পথে কাঠ খুঁটুনিরা
কাঠ খুঁটে খুঁটে নিয়ে যেত মায়ের কাছে
খুঁজে চলেছি নিয়মিত ভোরে, মধ্যদুপুরে, সন্ধ্যায়
রাত্রে, জানালার পর্দা সরিয়ে, চিঠির উত্তরে
অনিদ্রা তাড়িত হয়ে অন্ধকারে সম্ভাব্য কল্পচিত্রে
বিক্ষিপ্ত পড়ে থাকা অসংখ্য মৃতদেহে
খুঁজে চলি ঘরময় নিঃসাড় হেঁটে চলায়, দক্ষিণ বারান্দায়
ড্রয়ারে পড়ে থাকা পুরোনো পোস্টকার্ডের ঠিকানায়
ক্ষুধা আর হতাশার রোদে সে কি বিচূর্ণিত ?
তা না হলে তাকে নিয়েই কেন চলছে টেবিলতত্ত্ব !
শৈশবে টেক্সটাইল মিলের শব্দ আজও বাজে কানে
ছুটির সাইরেনে যেন শ্রমিকের বৃষ্টি নামতো পথে
আজও কি তারাই পথে পথে ন্যায্যমূল্যের প্রহসনে উদ্বিগ্নময় !
তবে কি তাকে পাওয়া যেতে পারে
সঠিক মিছিলে অথবা অপূরনযোগ্য দাবি-দাওয়ায় ?
আর কত খুঁজবো ! খুঁজে পাচ্ছিনা তাকে- আলোয়
অন্ধকারে, অলি-গলিতে, মাঠে, খালে, বিলে, জলে
তাকে পাইনি উড়ন্ত ধুসর ধুলায়
কিংবা অতল স্থবির কাদায়
খুঁজেছি খবরের কাগজে, স্টেশনে, হাসপাতালে
গোয়ালঘরে, নদীঘাটে, বাগানে, মোড়ে আড্ডায়
সভা-সমাবেশ-টকশো বা কফিশপে
খুঁজেছি সাহিত্যের বাজারে, মঞ্চে, পুরস্কার-পদকে
খুঁজে চলি বিজ্ঞাপনে, বক্তৃতায়, ফাঁদ পাতা উৎসবে
যাত্রি ছাউনি-সমাগমে, ট্রাফিকআইল্যান্ড, ভিড়ভাট্টায়
বাদ পড়ে না শিল্পীর পোর্ট্রেট, সেলুন বা এটিএম বুথ
ওদিকে বইছে অবসরপ্রাপ্তদের ক্ষোভ আলাপ
ওখানে কি মিলতে পারে খোঁজ ! তবু ক্ষীণ আশা
দুর্বাঘাস, শাখা-পাতার স্নেহ ছুঁয়ে থাকা
সবুজের কাছাকাছি ফিরে যাই অবশেষে
ক্লান্ত শ্রান্ত পথিক আমি ; তবু খুঁজি...
খুঁজে খুঁজে একান্তে ঝরাই আকুতি
খোঁজা বাকি আছে তবু
বাকি আছে পরমের খোঁজ
খুঁজে চলি নিরবধি
ওপাশে ঠান্ডা নীরব কফিনের স্তব্ধতায়
প্রার্থনা করি যেন সেখানেও না থাকে ; তার চেয়ে
বরং খুঁজি শ্বাস... এবং খুঁজে চলা চলুক অবিরত
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com
খুব নিরীহ অথচ অন্তর্ভেদী এক মৃদু সম্মোহন সঞ্চারিত হয় বোধের স্তব্ধ দরজায়। সময় ও অবক্ষয়ী চেতনার ছবিগুলি ভেসে ওঠে। আইডেন্টিফিকেশন বা অস্তিত্বের অন্বেষণে বার বার নিজের কাছে ফিরে আসি। শব্দ ও বাক্যের অভিনব বিন্যাস, উপলব্ধির তীব্র মোচড় উদ্দীপিত করেে। পাঠের পর অনেকক্ষণ বাজতে থাকে:
উত্তরমুছুন"এখানে সঙ্গির মনদ্বীপে নিঃসঙ্গতার নিরেট নিবাস
এখানে মাটি ঢেলার ভিড়ে এক পাথরের বোবা-বিস্ময় !
মাটি থেকে কোনো পাথরকে 'বিচ্ছিন্নতা' দিতে-
নীরবতা'র সর্বোচ্চ মাত্রা কেমন হতে হয় !"