লেবেল

মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০

ছেড়ে চলে গেলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড.অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

 না ফেরার দেশে বাংলার স্বার্থক জ্যোতির্বিজ্ঞানী  ড.অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের
শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে- ড.শঙ্কর তালুকদার       

 
 

                                 জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড.অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়  
                                        জন্ম- ১লা ফেব্রুয়ারী ১৯৩০ 
                                         মৃত্যু- ২২শে জুন ২০২০ 

মহাকাশ বিজ্ঞান সচেতনতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান উৎসুক সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত তথ্য ও ধারণা জুগিয়ে তিনি দীর্ঘ ৯০বছরের কর্মময় জীবন অতিবাহিত করে জ্যোতির্বিজ্ঞানী,বিজ্ঞানকর্মী ডক্টর অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল রাতে এই জৈব প্রকৃতির মায়া কাটিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন।জ্যোতির্বিজ্ঞান প্রসার ও বিজ্ঞান আন্দোলনে ওনার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।




            
বিজ্ঞানী অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯৩০ সালের পয়লা   ফেব্রুয়ারি বাগনানের মুগকল্যাণ গ্রামে।মুগকল্যাণ উচ্চমাধ্যমিক    বিদ্যালয়ে (১৮৬৬) পড়াশোনা করেন তিনি। স্কুল জীবন কাটে এই    গ্রামেই। উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৫২ সালে সেখান থেকে ফলিত গণিত নিয়ে M.sc পাশ করেন। তাঁর বিশেষ পাঠ্য ছিল- জ্যোতির্বিজ্ঞান। 
এই বিষয়টি তাঁর পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল বর্তমানে বিশ্ব বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নার্লিকারের পিতা তৎকালীন হিন্দু 
বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা গণিতের অধ্যাপক বিষ্ণু বাসুদেব নার্লিকারের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে ওনার কাছ থেকেই অমলেন্দু বাবু জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার অনুপ্রেরণা লাভ করেন। স্নাতকোত্তর পড়াশোনার পর বারাণসীরই একটি কলেজে চার বছর অধ্যাপনা করেন।
            ১৯৫৬ সালে বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অবস্থানিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা কেন্দ্র " নটিক্যাল অ্যালম্যানাক ইউনিট " - এ যোগ দেন। এই কেন্দ্রে গবেষণায় নিযুক্ত থাকেন ছয় বৎসর।১৯৬২ সালে  বিমান চালনা সংক্রান্ত আবহাওয়া বিজ্ঞানে গবেষণায় নিযুক্ত হন।
১৯৬৮ সালে "নটিক্যাল অ্যালম্যানাক ইউনিট " - এর সমস্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ১২ বছরের অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে এই ইউনিটটি কলকাতায় ভারত সরকারের একটি আন্তর্জাতিক অবস্থানিক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণার সংস্থায় রূপান্তরিত হয়।১৯৮০ সালে সম্প্রসারিত হয়ে এই সংস্থার নতুন নামকরণ হয় — " পজেশনাল অ্যাষ্ট্রোনমি সেন্টার "। তিনিই এই সংস্থার প্রথম ডিরেক্টর হন।১৯৮৮ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর গ্রহণ করেন।অবসর নেওয়ার পর ১৯৮৯ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি বিড়লা তারামণ্ডলে কর্মরত আছেন।
           প্যারিসে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের এফিমারাইউস কমিশনে একমাত্র নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য, বিলেতে রয়্যাল অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ফেলো, ব্রিটিশ অ্যাষ্ট্রোনমিক্যাল- এ নির্বাচিত সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির ফেলো।
             আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা সংক্রান্ত সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম,ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, চীন ও কোরিয়ায় গবেষণা মূলক নিবন্ধ পাঠ করেন।আজ পর্যন্ত ২২৫ টির বেশি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রবন্ধের সংখ্যা ইংরেজি ও বাংলা মিলিয়ে ২৫০০ টিরও অধিক। ইংরেজীতে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা তিনটি এবং পাঁচটি বাংলা ভাষায়।
          দূরদর্শন ও বেতারে অসংখ্য জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর বিশেষ আকর্ষণ হল রঙিন স্লাইড দেখিয়ে নানা বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় বক্তৃতা দেওয়া যাতে গ্রামে গঞ্জের সাধারণ মানুষ জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন।আজ পর্যন্ত এমন বক্তৃতার সংখ্যা চার হাজারেরও বেশী।
           জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়কে ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য ১৯৯৫ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন।একই কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০১ সালে তাঁকে " গোপাল চন্দ্র ভট্টাচার্য " স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করে।ঐ বছরই বর্ধমান বিশ্ব বিদ্যালয় তাঁকে D.Sc ডিগ্রি প্রদান করেছে।
            ২ নভেম্বর,২০১৮ থেকে শুরু হওয়া নতুন একটি বিশেষ আকর্ষণ— দর্শকদের সামনে  মহাকাশকে হাজির করার প্রয়াস। মহাকাশে ঘুরে চাঁদ, মঙ্গলের মাটিতে ঘোরার মজা সঙ্গে নক্ষত্র জগতে বিচরণ ও রয়েছে। সেই প্রকল্পের প্রধান রূপকার তারা মণ্ডলের ডিরেক্টর ড. দেবীপ্রসাদ দুয়ারির সাথে ড. অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিলিত প্রয়াস চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে।

  শ্রদ্ধা ও প্রণাম    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন