লেবেল

বুধবার, ১০ নভেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-৩৩)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ— বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 




ধারাবাহিক ভ্রমণ কথা(পর্ব-৩৩)



পৃথিবীর উল্টো পিঠ
বিশ্বেশ্বর রায়

আজ আরও একটা ঘটনায় এদের কর্মনিষ্ঠা, কাস্টমারদের সঙ্গে আফটার সেল ডিলিং কী রকম হওয়া উচিত তা জানতে পারলাম। আজ সন্ধে সাড়ে সাতটার দিকে ওয়ালমার্টে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ গাড়িটা চলতে চলতে এক বিদঘুটে শব্দ শুরু করল। যাইহোক, ওভাবেই আরও মাইল দু'য়েক গিয়ে ওয়ালমার্টে পৌঁছে দেখা গেল গাড়ির বাঁদিকের পিছনের চাকাটি একেবারে ফেটে চৌচির। এখানকার গাড়ির টায়ারের মধ্যে কোনও টিউব থাকে না। ফলে ফেটে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়নি এবং চাকাও বিশেষ নীচু হয়ে যায়নি। যাইহোক, বাবাই গাড়ির Rental Office-এ ফোন করল। তারা জানাল যে, পঁচিশ মিনিটের মধ্যে মেকানিক আসছে। মিনিট কুড়ির মধ্যে প্রায় সত্তর বছর বয়স্ক এক ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে হাজির। এসে চাকার অবস্থা দেখে প্রথমেই তো ভীষণ দুঃখ প্রকাশ করলেন। তারপর মাত্র চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফাটা চাকা খুলে নতুন চাকা লাগিয়ে দিলেন। সম্পূর্ণ কাজটা  করলেন যন্ত্রের সাহায্যে। নাট-বোল্ট খোলা-লাগানো থেকে জ্যাক দিয়ে গাড়ি উঁচু করা সবই। যাওয়ার আগে আরও একবার ক্ষমা চেয়ে গেলেন।
     আমাদের কলকাতার মানসিকতায় বাবাই একটু জিজ্ঞাসা করল যে, আচ্ছা এভাবে টায়ার পাংচার হল এটা কি কারও কারসাজিতে বা ক্ষতি করার জন্য? উনি বললেন, না না, কক্ষণো না। এখানে এ ধরনের মানসিকতার মানুষ নেই। কোনমতেই সম্ভব নয়। টায়ারটা যেভাবেই হোক ফেটেছে। তারপর তুমি ওই অবস্থায় চালিয়ে এসেছো বলে এতো জায়গায় ফেটেছে। অবশ্য তার জন্য তিনি কোনও দোষারোপ করলেন না।
     এরপর ঠিক পঞ্চান্ন মিনিট পর একটা অটোমেটেড কল এল। সেখানে জিজ্ঞাসা-- গাড়ির চাকা কি পাল্টানো হয়ে গেছে, না এখনও কাজ চলছে? আসলে এখানে শহরের মধ্যে যদি এমন কোনকিছু ঘটে তবে এদের সার্ভিস রুল অনুযায়ী পঞ্চান্ন মিনিটের মধ্যে কাজটা সম্পূর্ণ করতে হবে নাহলে অন্তত শুরু করতেই হবে। আবার বুঝলাম একটা দেশ কেন এগিয়ে আর আমরা কেন পিছনে ছুটছি। S.L.A. বা Service level agreement নামে একটা আইন আছে এখানে। যার অন্তর্ভুক্ত এসব কাজ। এবং এসব আইন শুধু বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে লুকিয়ে থাকে না, তার প্রয়োগ নিখুঁতভাবে হয়। যদি না হয় তবে কাস্টমার একটা case ঠুকলেই তাদের ব্যবসা লাটে উঠবে এবং  ক্ষতিপূরণ তো করতেই বাধ্য। যা আমাদের দেশে চিন্তা করাই যায় না। যদিও এমন আইন আছে কিন্তু তার বিচারপদ্ধতি এতো দীর্ঘমেয়াদী যে, দু'হাজার টাকা আদায় করতে বিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে।
     আজ থেকে এখানকার সময় এক ঘন্টা পিছিয়ে গেল। এটাকে এখানে বলা হয় Day time saving. জানি না তাতে কিছু ক্ষতি-বৃদ্ধি হয় কিনা। কিন্তু রাতারাতি এক ঘন্টার হেরফেরে সকাল একঘন্টা পরে হচ্ছে। অর্থাৎ এক ঘন্টা পরে স্কুল, কলেজ, অফিস ইত্যাদি শুরু হচ্ছে।
     সে যাইহোক, আজ বিকেলে কাছাকাছি একটা পার্কে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। নাম Delta Park. U.S.A.তে এসে যতগুলো পার্কে বেড়াতে গেছি এটা তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। এর আগে হার্টফোর্ডে থাকতে আমরা গিয়েছি বুশনেল পার্ক, এলিজাবেথ পার্ক ছাড়াও আরও একটা পার্কে। যাদের আয়তন এটার চেয়ে অন্তত  দশ-পনেরো গুণ বড়। এখানে এসেও আমরা গিয়েছি Freedom Park-এ। তার আয়তনও বিশাল। তবে ছোট বড় যেমনই হোক এখানকার সব পার্কে যে ব্যাপারটা সচরাচর দেখা যায় সেটা হল, প্রতিটি পার্কের একাধিক খেলার মাঠ আছে। ফুটবল, বাস্কেটবল, টেনিস, রাগবি ইত্যাদি খেলার মাঠ আলাদা আলাদাভাবে আছে। এছাড়া বহু নারী-পুরুষ ছুটছে, হাঁটছে, জগিং করছে, স্কিপিং করছে বা অন্য শারীরিক কসরৎ করছে। এছাড়া বাচ্চাদের জন্য আছে নানাবিধ খেলার সরঞ্জাম। আর আছে ট্রেল। সেখানে কেউ দৌড়াচ্ছ, সাইক্লিং করছে। এক-দু'বছর বয়সী থেকে সত্তর-আশি বছর বয়স্ক মানুষ সবাই শরীরচর্চায় ব্যস্ত। এছাড়া কুকুর নিয়ে ঘোরা বা কুকুর চরানো তো আছেই।
     রাতে Up Town-এ  Rock Bottom রেস্টোরেন্টে ডিনার সেরে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বাজল।
     এখানে অর্থাৎ শার্লটে জাঁকিয়ে শীত পড়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস রাতের তাপমাত্রা  (--1°) সেন্টিগ্রেডের নীচে নামবে। তবে ঘরের ভেতরে কিছুই বোঝা যায় না। এখানে প্রতি ঘরেই হিটিং-এর ব্যবস্থা আছে। ফলে তাপমাত্রার তারতম্য কিছুই বোঝা যায় না। ওদিকে হার্টফোর্ড থেকে মুনিয়ারা জানালো যে, ওদের ওখানে দু'তিন দিন ধরে  (--3-4°) তাপমাত্রা চলছে। ওদের ওখানে আবার Centrally heating  দেয় Apartment Authority থেকে। তার heat এতো বেশি যে শরীরে সহ্য হয় না। মাঝে মাঝেই heating machine বন্ধ করে রাখতে হয়। যন্ত্রও মাঝে মাঝে যন্ত্রণারও কারণ হয়ে ওঠে।



(চলবে) 








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন