লেবেল

বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা:পর্ব-৩২।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ — বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 





ধারাবাহিক ভ্রমণকথা:পর্ব-৩২

পৃথিবীর উল্টো পিঠ 




বিশ্বেশ্বর রায়

      আজও সারাদিন প্রায় কোথাও বেরোনো হয়নি। প্রাত্যহিকের মতো সকালে রেস্টোরেন্টে গিয়ে প্রাতরাশ খাওয়া, সন্ধেয় ডিনারে যাওয়া আর সারাদিন ঘরেই শুয়ে-বসে টি ভি দেখে বা ইউটিউবে গান শুনে কাটানো। তবে আজ বিকেলে বেরিয়েছিলাম। Marriott -এর আশপাশে ঘুরে ঘুরে কিছু ফটো তোলা হল দু'জনে। তবে ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডির জন্য হালকা ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছিল থেকে থেকে। ফলে বিশেষ কাজ হল না। অর্থাৎ ফটো তোলা সম্পূর্ণ হল না। তাই পরদিন আবার বেরোলাম। আজ আকাশ অনেকটা পরিস্কার, বৃষ্টিও নেই। ফলে বেশ ভালোভাবেই ফটো তোলা গেল।
      এরমধ্যে দুপুরবেলা Margarita এসেছিল একতোড়া গোলাপ হাতে। ও এখানকার হাউস কিপিং-এর কর্মী। সুমিত্রার সঙ্গে ওর ভীষণ বন্ধুত্ব  হয়ে গেছে। ওর বাড়ি মেক্সিকোতে। অবিবাহিত, স্প্যানিশ, পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি বয়স। ছোটখাটো চেহারা। সুমিত্রা ওকে একটা জামা দিলো। বম্বে থেকে কেনা। ও খুব খুশি। আমাদের দু'জনের সঙ্গে ফটো তুললো ওর মোবাইলে। সেলফি। আমরাও ওর সঙ্গে ফটো তুলে রাখলাম।
      আজ সকাল সাড়ে নটার দিকে দরজায় টোকা। দরজা খুলতেই সামনে মার্গারিটা। হাতে একটা গিফট প্যাক। খুলে দেখা গেল তারমধ্যে পাথর আর রঙিন কাচ মিলিয়ে নেকলেস, চুড়ি আর কানের দুল। কালকের গিফট-এর রিটার্ন গিফট। মেয়েটা সুমিত্রাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে। ভালো ইংরেজি বলতে পারে না। স্প্যানিশ ভাষা বেরিয়ে আসে। আমরাও ইংরেজিতে খুব একটা দক্ষ নই। কাজ চলে যায়। বেশি গল্প করতে পারি না। ফলে দু'চার কথা বলেই উভয়ে কাজ সারে।

      যে স্যান্ডি ঝড় দু'দিন আগে হালকা আভাস দিচ্ছিল তা ক্রমশ মারাত্মক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আমেরিকার তেরোটি রাজ্যে থাবা বসিয়েছে। এরকম ঘূর্ণিঝড় আমেরিকায় প্রায় প্রতি বছরই আছড়ে পড়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী বিভিন্ন প্রদেশে। এবার নিউইয়র্ক ও নিউজার্সি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এছাড়া ওয়াশিংটন ডি সি, ফিলাডেলফিয়া, কানেকটিকাট প্রভৃতি আরও কয়েকটি রাজ্যেও বেশ তাণ্ডব চালিয়েছে। খবরে শুনলাম পনেরো-ষোলো জনের প্রাণহানি হয়েছে। সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণে। বহু ঘরবাড়ি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বহু গাছ ভেঙে পড়েছে বা উপড়ে গেছে। বহু জায়গায় প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহারা। সমুদ্রের জল প্রায় চার মিটার উচ্চতায় বেলাভূমিতে আছড়ে পড়েছে। ফলে অনেক ছোট জাহাজ এবং নৌকা ভেঙে গেছে বা ডাঙায় আছড়ে পড়েছে। বান্টি নামের এক জাহাজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ডাঙার বহু গাড়ি তুষারে ঢেকে গেছে, গাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে গাড়ি চূরমার হয়েছে। অনেক ডাঙায় থাকা গাড়ি জলের তোড়ে নদী বা সমুদ্রে ভেসে চলে গেছে। আমেরিকার এ এক বাৎসরিক বিভীষিকা। তবে এবারের ঝড় নাকি অনেক বেশি শক্তিশালী। গত দশ বছরে এতো শক্তিশালী ঝড় দেখা যায়নি।
      তবে আমরা যেখানে আছি সেই নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যে ঝড়ের ব্যাপকতা ততটা হয়নি। তার কারণ, এই রাজ্যটি সমুদ্র উপকূল  থেকে বেশ অনেকটা ভিতরে।তবে এই রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলে ভীষণ তুষারপাত হয়েছে।
      'We are sorry we missed you.' Oak Park-এ বাবাই নতুন apartment নিয়েছে। আমরা গতকাল এখানে shift করেছি। যদিও apartment-টা studo type, কিন্তু বেশ বড়।বড় হল ঘরটায় অন্তত চারখানা খাট পাতা যাবে। বেশ বড়সড় modular kitchen. একসঙ্গে চারজনের পরিবারের তিন-চার মাসের রসদ রাখার ব্যবস্থা আছে। চার বার্নারের ইলেকট্রিক  ওভেন। ওভেনের নীচে গ্রিলার। স্টেনলেস স্টিলের বড় সিঙ্ক। ঢাউস ফ্রিজ। ধোঁয়া বা পোড়া গন্ধ বের করার জন্য চিমনি। এছাড়া ছ'জনের খাওয়ার টেবিল রাখার জায়গা। দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকেই shoe rack. সাত×ছয় বাথরুম। বাথরুমে বাথটাব, বেসিন,আয়না, কমোড ইত্যাদি যাবতীয় সরঞ্জাম আছে। বাথরুমের সামনে আরও একটা সাত×ছয় ছোট্ট ঘর। সেখানে আছে wardrobe.এছাড়াও পিছন দিকে  ষোলো ফুটের এক বিশাল কাচের স্লাইডিং দরজা। তার সামনে ওই ষোলো × ছয় ফুটের একটি বারান্দা বা ব্যালকনি। এখানে যাকে patio বলে। এতো কথা বললাম এই কারণে যে,এখানে ছোট-বড় সব অ্যাপার্টমেন্টেই সাধারণ সুযোগসুবিধাগুলো প্রায় সমান।
      যে বাক্যটি দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের বিষয়ে শুরু  করেছিলাম তার অবতারণার কারণ আছে। এই ওক পার্ক আবাসনের অফিস খোলা থাকে সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। তার আগে বা পরে কেউ যদি অফিসে যায় বা ফোন করে তবে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার জন্য এই বাক্যটি। কেউ দেরি করলেও তাকে দোষ না দিয়ে এরা  (আমেরিকানরা) অপরাধটা যেন ওদেরই এমনটি বোঝাতে চায়। আমাদের দেশের মতো 'দূর মশাই এখন এসেছেন কেন! অফিসের সময় আসবেন অন্যদিন।' এ জাতীয় কথা এখানে শুনবেন না কেউ। একটা দেশ, জাতি কেন প্রথম বিশ্ব আর আমাদের দেশ কেন তৃতীয় বিশ্বের গণ্ডি টপকাতে পারছে না তা এদেশের মানুষের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার, মানসিকতা, ভদ্রতাবোধ, কর্মসংস্কৃতি ইত্যাদির পরিমাপেই বোঝা যায়।




        

      চলবে...









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন