লেবেল

শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

রবিবাসরীয় বিভাগ।। আজকের গল্প।। বাৎসল্য রস — স্মৃতি শেখর মিত্র।।Ankurisha ।। E.magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 



রবিবাসরীয় বিভাগ

আজকের গল্প 


বাৎসল্য রস

স্মৃতি শেখর মিত্র

 
"নিতান্তই গরমিল না হলে
 আমরা বোধহয় একই গ্ৰহে আছি
 থাকবো চিরকাল"

এই কথাগুলি বলে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়
তাঁর স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তাঁর স্ত্রী হঠাৎ স্বামীর
মুখে একথা শুনে কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না।
তিনি শুধু বললেন  "এটা তো আমারই মনের কথা।
আমি তো তোমার সঙ্গে আছি সদাসর্বদা, সায় দিয়েছি তোমার প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিটি মুহূর্তে।"

জীবন কখনও থেমে থাকে না।তবু এক একজনা বিশেষ ভাবে চিহ্নিত হয় ঈশ্বরের কাছে। বিশ্বজিৎ বাবু তাঁর কলেজের ছাত্রীর সাথে বিয়ে করেছেন।
বয়সের ব্যবধানও অনেকখানি।শ্যামলাবরণ দীর্ঘাঙ্গী, ছিপছিপে তন্বী মেয়েটি কখন তাঁর মনে 
স্থান করে নিয়েছে সেকথা তিনিও বুঝতে পারেননি।যে বছর প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে
ইংরেজি অনার্সের প্রথম বর্ষের ছাত্রী হিসেবে প্রথম
বর্ষে ভর্তি হয় পরমা , তখন তাঁর বয়স আঠারো
পেরিয়ে সবেমাত্র উনিশে পা দিয়েছে।আর সেসময়
বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় কলেজের একজন অতিশয়
সম্মানিত অধ্যাপক । কলেজে তাঁর ভীষণ সুখ্যাতি।
তিনি তখন চল্লিশ বছরের সুঠাম সুন্দর চেহারার
যুবা পুরুষ। বয়সের তুলনায় অনেকটাই কম বয়স
বলে মনে হয়। অনেক ছাত্রীই তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। একথা তিনি বেশ বুঝতে পারেন। তিনি নিজে গাম্ভীর্য বজায় রাখার জন্য কেউ সাহস পায় না এ ব্যাপারে এগোতে। কিন্তু পরমার দিঘীর জলের মতো দুটি ভ্রমর কালো
চোখের মায়ায় তিনি প্রেমে পড়ে গেলেন অচিরেই।
যত ভাবেন নিজেকে সরিয়ে রাখি ততই পরমার
চোখদুটি ভেসে উঠে মনের গভীরে। এতদিনের
সংযম যেন কোথায় উধাও হয়ে গেছে। সাহিত্যের
ক্লাস তাই প্রেমের মুহূর্ত তৈরী হয়েই যায়, সেসব
মুহূর্তগুলিতে তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন এবং পরমাও সেকথা বুঝতে পারে তাই মাঝেমধ্যেই
উন্মনা হয়ে যায় এবং ধরা দেয় তাঁর ঐ দুর্বলতায়।
পরমাও উপভোগ করে ব্যাপারটা।এসব প্রেমের
ব্যাপার কিন্তু বেশিদিন আড়ালে থাকে না এবং
এক্ষেত্রেও থাকেনি।পরমার বন্ধুরা ওকে নিয়ে
হাসাহাসি করে নানান কথা বলে ।পরমা ওদের
কথায় কান দেয় না। মানুষ যদি কাউকে গভীরভাবে ভালবাসে তাকে চায় তো কোন না কোন ভাবে সুযোগ এসেই যায়। একদিন ভীষণ
বৃষ্টি পড়ার জন্য রাস্তায় থৈ থৈ জল। কোথাও
কোথাও এক হাঁটু পর্যন্ত জল দাঁড়িয়ে গেছে।গাড়ি
ঘোড়াও চলছে না।বাস, ট্যাক্সি নেই বললেই চলে।
পরমার রুটে বাস না চলায় পরমা গভীর উদ্বেগের
মধ্যে পড়ে যায়।তার সমস্ত বান্ধবীরা এক এক করে
কলেজ ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গেছে। শুধু  মাত্র সেই
একা দাঁড়িয়ে বাস স্ট্যান্ডে বাস ধরার আশায়। এমন সময় তাদের কলেজের একজন পিওন এসে
জানালো যে " দিদি,স্যার আপনাকে ডাকছেন। উনি
লাইব্রেরী থেকে আপনাকে দেখেছেন যে আপনি
বাস ধরার জন্য অনেকক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হয়তো আপনাকে কিছু বলবেন।"
কি করি না করি সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে লাইব্রেরী
পৌঁছে যায় এবং লাইব্রেরীতে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে  " স্যার, আপনি আমাকে ডেকেছেন?" বিশ্বজিৎ বাবু নকল গাম্ভীর্য বজায় রেখে ওকে সামনের চেয়ারে বসতে বলেন।পরমা
সামনের চেয়ারে বসে বলে " এবার বলুন কি জন্য
আমাকে ডেকেছেন?" বিশ্বজিৎ বাবু জানালেন "আমি জানালা দিয়ে দেখছি এক এক করে সব
মেয়েরা কলেজ চত্বর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। শুধুমাত্র তুমিই দাঁড়িয়ে আছো।কি ব্যাপার তোমার বাস আসেনি বুঝি? কিভাবে বাড়ি ফিরবে?পরমা উত্তরে
জানালো " স্যার! দু তিনটি বাসের সময় পেরিয়ে গেছে। বোধহয় বৃষ্টির তোড়ে বাসগুলি আসতে পারেনি। আমি তো ভীষণ সমস্যাই পড়েছি।অন্য কোন সাধনও তো নেই,যাই কি করে?"সবকথা শুনে বিশ্বজিৎ বাবু জিজ্ঞেস করলেন "তুমি কোথায় থাকো?" " আমি স্যার উল্টো ডাঙ্গায় থাকি।" একথা
শোনার পর বিশ্বজিৎ বাবু মনে মনে খুশি হলেন। "আমিও তো ঐদিকেই থাকি। আমার সঙ্গে গাড়ি রয়েছে । তোমার বাড়িতে আমি তোমাকে ছেড়ে
দেব।" একথা সেকথার পর পরমা রাজি হয়ে গেল
যাওয়ার জন্য এছাড়া তার কোন উপায়ও ছিল না।
এভাবেই সে সন্ধ্যায় বিশ্বজিৎ বাবু সারা রাস্তা গল্প
করতে করতে কখন যে হুশ্ করে পরমার বাড়ির
কাছে এসে পৌঁছে গেলেন বুঝতেও পারলেন না।
পরমার মনের মধ্যে বেলা, রজনীগন্ধা, চামেলী
নানান ফুল ফুটতে শুরু করলো।ওর বাড়িতে ও
এবং ওর মা , বাবা থাকেন। এখনও পরমার বাবা
অফিস থেকে ফিরতে পারেননি। মেয়েকে ফিরে
আসতে দেখে ওর মা সবিতা দেবী খুব খুশি হলেন।
"তুই এই বৃষ্টিতে কিভাবে এলি? আমি তো তোর
চিন্তায় পাগল।"পরমা বিস্তারে সমস্ত ঘটনা জানায়
এবং তার মায়ের পরিচয় করিয়ে দেয়।পরমা মাকে
বলে "ইনি আমাদের কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের
অধ্যাপক ডাঃ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়।উনিই আমাকে ওনার গাড়ীতে বাড়ি পৌঁছে দিলেন। উনি
না থাকলে আমি যে কিভাবে বাড়ি পৌঁছাতাম একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।" সব শুনে সবিতা দেবী
স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এবং বিশ্বজিৎ বাবুকে বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিলেন। বিশ্বজিৎ বাবু কিন্তু সেদিন আর বসলেন না। জানালেন "আমার মাও এই বাদলা দিনে খুব চিন্তায় থাকবেন।বাবার ইদানিং শরীর খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে মাঝেই সর্দিকাশিতে ভোগেন।তাই আমি আজ আর বসতে পারবো না।
অন্য কোনদিন আসবো।"এভাবেই প্রথমদিনেই
তাঁদের প্রেম অনেকটাই পরিপূর্ণতা পায়।যেন এই দিনটা ওদের জীবনে উজ্জ্বল করে ধরা দেয়।

বিশ্বজিৎ বাবুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ পরমা। ইদানিং উঠতে বসতে শয়নে স্বপনে ঐ একনাম একচিন্তা
বিশ্বজিৎ বাবু, বিশ্বজিৎ বাবু। এই প্রেমকে আরও
কিছুটা উসকে দেওয়ার সুযোগ করে দেন পরমার মা সবিতা দেবী। একদিন সুযোগ বুঝে বিশ্বজিৎ বাবুকে বলেন  "বাবা,
তুমি যখন এই রাস্তা দিয়ে যাও তখন না হয়
আমার পরমা মাকেও তুলে নিয়ে যেও।" এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন বিশ্বজিৎ বাবু।
পরম প্রিয় বস্তুকে কে আর হাতছাড়া করতে চায়?
এদিকে রোজ রোজ বড় গাড়িতে চড়ে পরমা কোথায় যায় এটা তাদের পাড়ায় একটা চর্চা ও
কৌতুহলের বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। এতদিন যারা
এই পরিবারটিকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল তারাই
পরমার মায়ের সঙ্গে যেঁচে এসে আলাপ  শুরু করে
দেয়। মানুষ ঈর্ষার বলে অনেক কিছুই করতে পারে।পাড়া প্রতিবেশী সব জানতে চায় 
ঐ ভদ্রলোক রোজ রোজ আপনার মেয়েকে কোথায় নিয়ে যান?
আগে তো কখনও দেখিনি।কোন আত্মীয় হন?
পরমার মা তাদের সকলকে এক কথাই বলেন যে
"উনি পরমার কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক এবং যেহেতু আমার মেয়েও ইংরেজি
অনার্সের ছাত্রী তাই ওকে এই রাস্তায় পড়ে বলেই
উঠিয়ে নেন।একই পাড়ায় থাকেন মাইল খানেক আগে। তাই ওঁর যাওয়া আসার রাস্তায় পড়ে বলেই
উঠিয়ে নেন।"এভাবে মানুষের মুখকে বেশিদিন চাপা দিয়ে রাখা যাবে না জেনেই সবিতা দেবী
মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন "তোর সম্পর্কে বিশ্বজিৎ বাবু কি ভাবেন বা কি ধারণা পোষণ করেন?" পরমা বলে যে সে চাইলেই বিশ্বজিৎ বাবু তাকে
বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবেন। এ কথায় সবিতা দেবী মেয়েকে বলেন  "তোর তরফ থেকে জানিয়ে 
দে যে তুই বিয়ে করতে রাজি আছিস।" বিশ্বজিৎ বাবু যদি রাজি থাকে তবে আমি আর তোর বাবা
একদিন ওদের বাড়ি গিয়ে সব কথা জানিয়ে আসব এবং বিয়ের দিন ধার্য করবো। এভাবেই
দু'পক্ষের পূর্ণ সমর্থনে মাস খানেকের মধ্যেই সবিতা দেবীর মনোবাসনা পূর্ণ হলো এবং একমাত্র সন্তানের খুব নিকটেই শ্বশুর বাড়ি হওয়াতে পরমার
বাবা মা ভীষণ খুশি।প্রায় প্রতি রবিবার দিন মেয়ে
জামাই পরমার মায়ের কাছে সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে।যে মেয়েকে  একদিনের
জন্যেও ছেড়ে থাকেননি তাকে ছেড়ে থাকতে খুব
কষ্ট পান। তবে বাড়ির সামনেই শ্বশুর বাড়ি হওয়াতে দু'পক্ষের যাওয়া আসা লেগেই থাকে।
এই যা সুরাহা। পরমার ব্যবহারে ওর শ্বশুর ও
শাশুড়ি দুজনাই খুব খুশি। দিন কাটছিল এভাবেই
কিন্তু বাদ সাধল পরমার সন্তান না আসা নিয়ে।
চার বছর পেরিয়ে গেলেও  সন্তান আসার
কোনরকম লক্ষণ না দেখার জন্য পরমা, তার স্বামী
ও উভয় বাড়ির সকলের মনেই একটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়। স্বামী ও স্ত্রী দুজনার সব ধরণের 
চিকিৎসা ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে যাবতীয় টেস্ট
করানোর পরেও কোন খারাপ কিছু খুঁজে পাওয়া
যায়নি। দুজনাই সক্ষম দম্পতি।সব ডাক্তারের একই রায় আপনাদের বাচ্চা না হওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বাচ্চা হবে এই
আশাতে আরও অনেক দিন পার হয়ে যায়। বিশ্বজিতের অসুস্থ বাবা বার বার বলেন "আমার
কপালে নাতি নাতনীর মুখ দেখা লেখা নেই,কবে
আছি কবে নেই তার কোন ঠিক নেই।" সত্যি বলতে কি ওর মাও ইদানিং বৌমার বাচ্চা না হওয়ার জন্য
বিশেষভাবে চিন্তান্বিত ।পাড়া প্রতিবেশীদের নানান ধরনের বিদ্রুপ ও কটুক্তি শুনতে হয় যা সচরাচর
হয়েই থাকে। শ্বশুর, শাশুড়ি সরাসরি কিছু না
বললেও এ ব্যাপারে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন যা পরমার কানে আসে। পরমার মনে ভীষণ
কষ্ট হয়,মন ভেঙ্গে যায়।কলেজেও বিশ্বজিৎ বাবুকে
নানান কথা নানারূপ বক্রোক্তি শুনতে হয়।এসব 
ব্যাপারে শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষের কোন
ভেদাভেদ নেই। অনেকেই বিশ্বজিৎ বাবুর পুরুষত্বের ব্যাপারেও সন্দিহান। তাই তিনিও আজকাল মনমরা হয়ে থাকেন। কিছুতেই ভালভাবে ক্লাস নিতে পারেন না। মনে মনে ভাবেন
এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না। একটা কিছু
ফয়সালা করতেই হবে। পরমাও চিন্তায় চিন্তায়
পাগল।তার সে রূপও এখন আর নেই। দুচোখের
নীচে কালি জমেছে।সেও বড় অসহায়। মাঝরাতে
উঠে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকে।শুলেই নানান
চিন্তায় সে কাতর হয়ে পড়ে। একদিন মন্দির থেকে
ফেরার পথে রেখার সঙ্গে বিশ্বজিৎ বাবু ও পরমার 
দেখা হয়।রেখা ও বিশ্বজিৎ এককালে পাশাপাশি
দুটি বাড়িতে থাকতো।রেখা একতরফা বিশ্বজিতকে খুব ভালবাসতো কিন্তু বিশ্বজিৎ
এ ব্যাপারে কখনোই কোন দুর্বলতা প্রকাশ করেনি।
সেই রেখা আজ দু সন্তানের মা।এক ছেলে ও এক মেয়ে কিন্তু সে অল্প বয়সেই বিধবা হয়ে পড়ে।
রেখা ওদের ছেলে মেয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে
জানতে পারে ওদের কোন সন্তান আসেনি।এ কথা
শোনার পর রেখা অনেক কষ্টের সঙ্গে জানায় " যদি
তোমরা আমার  মেয়েটাকে দত্তক হিসেবে রাখতে
চাও আমি দিতে রাজি আছি। আমার দুই ছেলে
মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে খুবই বেহাল দশা।
আমি জানি বিশ্বজিতদা ও তোমাদের কাছে খুব
ভালো ও নিরাপদে থাকতে পারবে। ছেলেটাকে নিয়ে আমি কোনরূপ ভাবে দিন কাটিয়ে নেব।ও
এখন দু বছরের মেয়ে। দরকার পড়লে আইনের
আশ্রয় নিতেও রাজি আছি।"মেয়েটিকে দেখে
পরমার খুব ভালো লেগে যায় এবং মাতৃহৃদয় জেগে ওঠে ও মেয়েটিকে কোলে নিয়ে খুব
আদর করতে শুরু করে। এসব দেখে বিশ্বজিৎ বাবু বুঝতে পারেন যে তাঁরা দুজনাই মেয়েটিকে ভালবেসে ফেলেছে। অবশেষে বিশ্বজিৎ এ ব্যাপারে
তাঁর মা বাবাকে ঘটনাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে 
জানান। তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে
চান। বলেন , " বাবা, তোমার কি মনে হয়?" "তোমাদের দুজনারই যদি ভালো লেগে থাকে তোমরা ওকে দত্তক নিতেই পারো। মেয়েটির
মা ছোট থেকেই আমাদের বাড়ি আসা যাওয়া
করতো যেহেতু আমাদের পাশেই ওরা থাকতো।
আমরা জানি রেখা খুব ভালো স্বভাবের মেয়ে।"
বিশ্বজিতের মায়েরও এ ব্যাপারে কোন আপত্তি
না থাকায় আইনের আশ্রয় নিয়ে পরমা ও বিশ্বজিৎ
নিজেদের সন্তান হিসাবে গ্ৰহণ করেন।মেয়েটিও
খুব শান্ত স্বভাবের নিরীহ মেয়ে । নানান ধরনের
খেলনাপাতি ও নতুন নতুন জামা কাপড় পেয়ে
ও পরমার পরম মমতায় বড় হতে লাগলো। সংসারের কষ্ট অনেকটাই দূর হলো। মায়ের কোলের কাছে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে
পড়তো। পরমার হাতে খাওয়া দাওয়া, ওর কাছেই
চান করা এসব করতে করতে পরমার দিন খুব
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যেত । সংসারের সব কাজ
সেই করতো। শাশুড়ি মাকে কিছুই করতে দিত  না।
পরমা মেয়েটির ছোট ছোট আব্দার পূরণে ব্যস্ত থাকায় বাৎসল্য রসের ফল্গুধারা তার শরীরের
শিরায় শিরায় বইতে থাকে। পরমার রজঃস্রাব
এক মাস যাবত না হওয়ায় শাশুড়ি মাকে সে কথা
জানায়। এছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে
পরিস্ফুট হয়। স্বামীর সাথে একদিন শহরের সবচেয়ে বড় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে জানা যায় পরমা সন্তানসম্ভবা।
তার জরায়ুতে তিন মাসের বাচ্চা। বাড়িতে খুশির
বন্যা বয়ে যায়। এতদিনের চেষ্টায় যা সম্ভব হয়নি
রেখার মেয়েটিকে দত্তক নেওয়ার পর ওর মনে
ও শরীরে এক ধরনের রস সদাসর্বদা বয়ে যেত 
সে রস বাৎসল্যরস যা ওর শরীরে প্রতিক্রিয়া করে
এবং ঐ রসের দৌলতেই ও আজ মা হতে পেরেছে।
ধীরে ধীরে পরমা ও অধ্যাপক ডা: বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় তাঁদের পুরানো রূপ গুণ ও মানসিক
স্থিতি ফিরে পেল। ওরা রেখার মেয়েটিকে চোখে
হারান।ওর জন্যই পরমার মা হওয়ার সাধ পূর্ণ
হয়েছে।ডাক্তার বৈদ্য যা করতে পারেনি একমাত্র
বাৎসল্য রসের ফল্গুধারায় মাতৃসত্তার উদ্ভব ঘটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন