লেবেল

রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

প্রকাশিত হলো ।। কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী স্মরণে অঙ্কুরীশা পত্রিকায় সেকালের অগ্নিবীণাঃ একালের কণ্ঠস্বর — কবি কাজী নজরুল

 




সেকালের অগ্নিবীণাঃ একালের কণ্ঠস্বর 

কবি কাজী নজরুল কবিতা সংখ্যা 



সূচিপাতা

১. দীর্ঘ কবিতা 

আরণ্যক বসু 
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
শেলী সেনগুপ্তা
তপনজ্যোতি মাজি 
বিকাশ দাস 
আব্দুস সালাম
শুভঙ্কর ঘোষ
বহ্নি শিখা
দীপা কর্মকার
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য 
অনিন্দিতা শাসমল 
গৌতম  মণ্ডল 
অশোককুমার লাটুয়া 
শুভ্রাশ্রী মাইতি


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_12.html





২.ছোটো কবিতা 

জ্যোতির্ময় দাশ 
দীপ মুখোপাধ্যায় 
তৈমুর খান
সৌমিত বসু 
গৌতম হাজরা 
সুস্মেলী দত্ত
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের 
অভিজিৎ দত্ত
সুবীর ঘোষ
ফটিক চৌধুরী 
বৈদ্যনাথ ধাড়া
রামকিশোর ভট্টাচার্য 
দীপক বেরা 
বিশ্বজিৎ রায়
দীনেশ সরকার 
অশোক রায় 
অমিত কাশ্যপ 
শ্রাবণী বসু 
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
রঞ্জন ভট্টাচার্য 
শুভময় দাস
স্বরলিপি দাস
অসীম ভুঁইয়া
ভক্ত গোপাল  ভট্টাচার্য 
শেখ সিরাজ 
রাসমনি ব্যানার্জি 
জয়শ্রী সরকার 
তন্দ্রা ভট্টাচার্য 
দুর্গাদাস মিদ্যা
বিমল মণ্ডল 
সুব্রত চৌধুরী 
নন্দিনী মান্না 
প্রদীপ দাস
সামসুজ জামান

                    

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_12.html








সেই মানুষের ঢলে
   আরণ‍্যক বসু

(....যে বীণা তোমার পায়ের কাছে/বুক ভরা সুর লয়ে জাগিয়া আছে..../ নজরুল গীতি )

দুনিয়ার যত বেদনার ভাষা
তাকালেই চোখ খুলে,
মুগ্ধ আকাশ মেঘ দোলাবেই 
নজরুলে নজরুলে।

জানি ,বাংলার পথে দিগন্তে
দুখু মিয়াঁদের গানে ,
ধানের স্বপ্ন উদাসী মনের 
অন্তরকথা জানে ।

সেই কানাকানি বাদল হাওয়াকে
এই কথা বলে যায়,
প্রাচুর্য নয় -- 
শৈশব যেন অন্নের স্বাদ পায়।

সেই অন্নই ডেকে নেবে তাকে
সমন্বয়ের ভেলায়,
বুক পেতে নেওয়া ঝড় ঝাপটার
ওলট - পালট খেলায়।

যন্ত্রণা মানে মরে যাওয়া নয়
যারা গায় দিল খুলে ,
সেই বিশ্বাসী প্রাণের কলি তো
নজরুলে নজরুলে...

হাতে হাতে যদি সেতু বাঁধা হয়
প্রদীপ ও চেরাগ জ্বলে ,
জেনো নজরুল আসবেই ছুটে,
সেই মানুষের ঢলে...

যন্ত্রণা মানে মরে যাওয়া নয়
যন্ত্রণা মানে ঝরে যাওয়া নয়
যন্ত্রণা মানে শেষ কথা নয়...





রাম-রহিমের বন্ধু

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি


বিভেদ যেখানে তুলেছে মাথা প্রতিবাদে নজরুল

ঝড়ের পাখিকে সঙ্গী করে ফোটালে কাব্যমুকু

 

মানুষের থেকে যেখানে বড়ো ধর্মীয় অহমিকা

ঠিক সেখানেই আঘাত তোমার হেনেছ বজ্রশিখা

 

জীবনব্যাপী ভেঙেছ তুমি অসাম্য ঢেউ যত

বলিষ্ঠ লেখনী দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের সব ক্ষত

 

অগ্নিবীণার আগুন আখরে ভেঙেছ কারা-প্রাচীর

শত কষ্টেও অটুট তোমার চির উন্নত শির

 

ভাঙতে শিকল পরাধীনতার সেনাদলে যোগ দিলে

জন্মভূমি ভারতমায়ের মুক্তির গান গাহিলে।  

 

দারিদ্র্য তোমাকে করেছে মহান সেকথা বলেছ হেসে

তোমার টানেই গঙ্গা-যমুনা এক স্রোতে বুঝি মেশে।

 

বেদনাও দেখি হয়েছে মধুর তোমার দুয়ারে এসে

সব অপমান হয়েছে বিলীন মিলন সাগরে ভেসে।   

 

ক্ষুধার তরে যে শিশু কাঁদে সেখানেও সোচ্চার

কলম তোমার দুর্বার দুর্জয় ত্যজেছ অহঙ্কার

 

যে তুমি বিদ্রোহী সেই তুমিই প্রেমে চিরকাঙাল

ভালোবাসা ফুলে ভরেছ হৃদয়, ভরেছ শূন্য ডাল।   

 

মানবতা যেথা ধুলায় লুটায় কেঁদেছে তোমার প্রাণ

বাঁশিতে বেঁধেছ সাম্যের সুর মানুষের জয়গান।

 

পেটের দায়ে লেটোর দলেও লিখিয়েছিলে নাম

রাম-রহিমের বন্ধু তুমি নজরুল ইসলাম।





যুগলবন্দী
শেলী সেনগুপ্তা

চোখ মেলে দেখি 
ইশারায় ডাকছো আমায়
অতঃপর
হাঁটছি পাশাপাশি
আমরা বিপ্লবের কথা বলছিলাম,

যাবতীয় সবকিছু ছুঁড়ে 
নতুনের কথা বলছিলাম,

অনেকটা পথ যেতেই
তুমি থমকে গেলে,

তখনও আমি চলছিলাম-
যেতে যেতে হাতে দিলে অগ্নিবীণা
আমি বাজালাম,

দিলে বিষের বাঁশি
       নীলকন্ঠ হলাম
       চেয়ে চেয়ে দেখলে,
সাম্যবাদী চেতনায় উদ্ভাসিত আমি
তখনও পথ চলছিলাম,

শিউলি মালা হাতে এগিয়ে আসে নি কেউ
বুলবুল ভুলে গেছে গান,

তুমি এবং আমি
আমরা 
আবার মিলেছি ফনিমনসার ঝোপের পাশে,

হারিনি-
মৃত্যু ক্ষুধা জয় করে 
আমরা হয়েছি অগ্নিগিরি,

এখন আমিরা 
জীবনের পথ চলছি
জ্বালিয়ে প্রলয় শিখা,
এখনও আমরা ভাঙ্গার গান গাইছি
গড়তে নতুন বিশ্ব-
       শুধু তুমি এবং আমি...






বহ্নি ও প্রেম
তপন জ্যোতি মাজি


অগ্নিভুক আস্ত একটা জীবন। দীর্ঘ ছায়া বিনত পরিব্রাজকের
মতো মাটি ছুঁয়ে আছে দুই শ্যমবাংলার। প্রতিবাদী কণ্ঠে প্রেম
পংক্তি। রূপকথা।

প্রণত কে নয়? ভালোবাসার সেতু। বৃন্তে দুটি প্রস্ফুটিত কুসুম।
কান্ডারী কে ডাকো। রাষ্ট্র ভালো নেই। জটিলতম অসুখ  তার।
মিলনের গান চাই।

অগ্নি শুদ্ধ। অগ্নি সর্বভূক। অগ্নি জানে ছিন্ন শৃঙ্খলের বন্ধনহীন
স্বাধীনতা। অগ্নি তো পরশমণি। স্পর্শে জাগে অলকনন্দা জল। 
ঘুমভাঙ্গা গান।

সংগীতে আহ্নিক। দরদী নদীর স্রোত। কবিতা ওড়ায় বিদ্রোহের
উন্নতশির পতাকা। সব অহংকার নত হয় সমন্বয়ের বেদীতে। কি
আশ্চর্য বিজয়!

স্ফুলিগ তার ডানায় পেল আগুনের দীক্ষা। কি দুঃসহ নির্বাক দৃষ্টি !
শান্ত সরোবরের মত চোখ। বহুদিন অস্নাত স্বদেশ। কন্ডারীকে বলো, 
' মরিছে মানুষ সন্তান মোর মা 'র।'






আমার কবি  নজরুল
বিকাশ দাস 




চিরদিনের বাঙালি বাংলা ভাষার তুমি পূজারী
আকাশ-অরণ্য-প্রকৃতিমগ্ন ছন্দের অধিকারী।

ঘাত প্রতিঘাত দ্রোহের উতরোলে কাজী, মশগুল  
সাম্যের কবি মানবতা-দরদি,বিদ্রোহী কবি নজরুল।  

বেঁধেছ শব্দের অসিতে,রণরণিত স্বাধীন কণ্ঠস্বর
সৃষ্টি-সুখের-উল্লাসে সর্বহারার অখণ্ডতার চরাচর। 

শব্দের প্রসূত এক অভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায় জাতপাত  
পৃথিবীর গোলা ভরা ধান।মানুষের রক্তশ্রমের বরাৎ।  

ধৈর্যশীলতা প্রেম ভালোবাসার শুদ্ধতম বলিদান
মানুষের হৃদয় অন্তরে নজরুল আজও অস্তিমান।

কাগজে কলমে যদিও দেখেছি মাটির বিভাজন
শব্দ ছন্দের পরাগে পরাগে করেছ অসাধ্য সাধন।

সোয়াস্তি-স্বরাজ-আত্মদান মানুষ মানুষের বাঁধন ক্ষুধার অন্নে প্রাণের ঘ্রাণ দু’মুঠো ভাত একটু নুন।


এক হাতে বাঁশের বাঁশরী আর এক হাতে রণ-তুর্য
প্রেম-পীড়ন-তৃষ্ণার অলঙ্কার; বিপ্লব সমুদ্ধত সূর্য।

চির-উন্নত শির প্রাণখোলা হাসি মৃত্যুর পরাজয়  
শব্দের সমৃদ্ধিতে শত্রুর কোলাকুলি প্রাণবন্তময়।

বেলা শেষে শাস্ত্র পুঁথি গ্রন্থ দুর্গতির পাতার দর্প ছিঁড়ে
যাপন ভ্রমণ হোক আকাশ খোলা সত্য সংসার-নীড়ে।  

কাব্যের নিভৃতে ধরেছ আকাশ প্রকৃতির সবুজ হাওয়া
মনুষ্যত্ব সর্বশক্তিমান, দু’চোখে বাঁধলে অভয় চাওয়া।    
শব্দে চেতনা জাগিয়ে বলেছ অদৃষ্টের কঙ্কালে
বৃথা খুঁজিস তোর ঠাকুর। সে তোরই অন্তরালে। 
 
বুকের পাঁজরে শ্রেষ্ঠ রত্নবৎ হৃদয় এক খানা
মন্দির-কাবা ঈশ্বর-খোদা পাথর সবার জানা। 




খোলা চিঠি নজরুল কে
আবদুস সালাম

প্রিয় নজরুল
পারিলে এসে দেখে যাও তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ ।

আকাশে বাতাসে ভাসিতেছে বিনাশ
বিষাদ উড়িতেছে পাড়া মহল্লায়
আমরা খুঁজিতেছি ইতিউতি করে তোমাকে
পারিলে একবার দেখে যাও তোমার স্বপ্নের ভারতবর্ষ ।

নর্দমা ঘেঁটে ঘেঁটে ক্লান্ত সিলিফিস জীবন
সংশয় ভাসিতেছে দিকে দিকে
তুমি ই তো বলেছিলে" আমি সেই দিন হব শান্ত
যেদিন উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ভাসিবেনা"
কৈ আজও তো থামিলো না নিপীড়িতের ক্রন্দন রোল
বরং অতিমাত্রায় হাজির আজ নবনব রূপে

তোমার  কাছে অনুরোধ করি হে প্রিয় কবি
শোনাও তোমার মিলনের সুর
ভেসে যাক আবার পদ্মা মেঘনা যমুনা---
একদিকে কবিগুরু অন‍্যদিকে তুমি
মাঝে নড়বড়ে সেতু
ঝড়ের তান্ডবে  হারিয়ে ফেলেছি মূল্যবোধ
আবার এসে বলো
"একই বৃন্তে দুইটি কুসুম
  হিন্দু মুসলমান"

এখনো জাগিলো না আমাদের মূর্খ বিবেক
ভাঙিয়া  ফেলিতেছি  বিদ‍্যাসাগরের মূর্তি
ছিঁড়িয়া ফেলিতেছি বিদ‍্যাসাগরের নীতিমালা
আজও ক্ষুধার  রাজ্যে "পূর্ণিমার চাঁদ ঝলসানো রুটি"

ক্ষণে ক্ষণে বাজিয়া উঠিতেছে রক্তাক্ত আয়ুর ধর্ম সঙ্গীত
সাম‍্যগান তাল  ছাড়িয়া বেতালে বাজিতেছে
ষড়যন্ত্রের রঙে রঙিন হইতেছে তিরঙ্গা পতাকা
দেখে যাও নজরুল তোমার কান্ডারীর  দৈন্যদশা
অসহায় কান্ডারী ভুলিয়াছে সাঁতার

আবার ফিরে এসো নজরুল    শোনা ও তোমার প্রেমের গান
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় আমরা

দিকে দিকে দেবতারা  অস্ত্রে দিতেছে শান্
থরথর করিয়া কাঁপিতেছে মন্দির মসজিদের দরজা
ধর্মপুঁথি সব  হয়েছে বস্তাবন্দি
ঝনঝন করিয়া বাজিতেছে  অস্ত্র গান

চুরুলিয়া আজ কাঁদিয়েছে
হারিয়ে গিয়েছে তাদের সোনার ছেলে
ঘরে ঘরে  সংগঠিত হইতেছে আত্মধ্বংসের বিপ্লব
বাজিতেছে বিভেদ আর অসাম‍্যের গান
দিশাহীন হয়ে চলেছি দিন দিন
সম্প্রীতির ভাবনা নেমে চলেছে পাতালে
বিশ্বাসের রশি দিয়ে উঠে আসিতেছে অবিশ্বাস
নিষিদ্ধ প্রান্তর ছুঁয়ে ছুঁয়ে নামিতেছি পাতালে

ধর্মের অন্ধকারে আসিয়াছে আমফান
তছনছ হয়ে গিয়েছে সব ধর্ম কুটির
চিমটে আর ত্রিশূল হাতে ধর্ম ঘাতক দন্ডায়মান
রক্তাক্ত হইতেছে ধর্ম বেদী
দেখো নজরুল আমরা ধার্মিকের বেশ ধরিলাম শুধু
মানুষ হইলাম না

এরই মাঝে যখন শুনি তোমার প্রেমের গান
বিশ্বাস আবার মাথা চাড়া দেয়
মানুষ কে মানুষ বলে চিনিতে পারি তখন
তোমার বাবরী চুলের ঝলকানিতে লুকিয়ে আছে প্রেম
পারিলে একবার দেখে যাও তোমার ভারতবর্ষ কেমন করিয়া   বাজাইতেছে বিষের বাঁশী








কবিতার নাম - বিদ্রোহী
শুভঙ্কর ঘোষ

তোমার জ্যোতিতে ভারত আজিকে
 মেলি আছে তার ডানা -
 তবুও তুমি ছেড়ে চলে গেছো
 শোনোনি মোদের মানা।

 তোমার লেখার জাদুতে তুমি
         পেয়েছো হৃদয়ে স্থান,
 তবুও তোমার বুকের ভিতর
 ছিল বহু অভিমান।

 রবির আলোক জ্যোতিতে তুমি
       হওনি কিছু ম্লান,
 তবুও তুমি পেয়েছো আঘাত
        বহুদিন, বহুকাল।

 অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনে
 লেখায় হেনেছ আঘাত;
 বিদ্রোহীতায় করেছ তুমি
       প্রতিবাদ, প্রতিঘাত।

 একদিকে তুমি লেখক,
    আবার অন্যদিকে কবি;
 গীত রচনায় শ্রেষ্ঠ তুমি -
         এখন শুধুই ছবি।

 জীবনে তুমি পেয়েছ দুঃখ,
      পাও নি কখনো সুখ;
 তোমার লেখার জাদুতে মোদের, 
      ভরিয়াছ তুলে বুক।

 তাইতো তুমি মোদের হৃদয়ে,
    থাকবে যে চিরকাল -
 ভারতবাসীর মনে রবে তুমি,
     স্মরণীয় বহুকাল।।




প্রিয় কবি

বহ্নি শিখা



জৈষ্ঠ্যমাসে জন্মে ছিলেন

আমার প্রিয় কবি 

নামটি যে তাঁর দুখুমিয়া 

আজ কেবলি ছবি 


কথায় কথায় বাঁধতো যে গান সোনার টুকরো ছেলে 

সাম্য ন্যায়ের প্রতিবাদে 

জীবন কাটে জেলে। 


পেটটি ভরে পায়নি খেতে 

অভাব চির সঙ্গী, 

সাচ্চা মানুষ পেয়ে খোদা 

করলেন যতেক  ভঙ্গি।  


শোকে দুঃখে ভরে জীবন 

ক্ষান্ত হননি তবুও 

মুখের কথা  নিলেন কেড়ে 

শরীর মনের জোরও।


গানের কথায়  কাব্যজুড়ে 

ভরা আকাশ মেঘে, 

ফুল পাখিদের  হৃদয় আজও

তাঁরই জন্য জাগে।





নজরুল শক্তি

দীপা কর্মকার 


তোমার প্রলয়-বিষাণে তরুণ

ভেঙেছে কারার লৌহ কপাট

রুধিতে পারেনি শিকল বেড়ি

বিদ্রোহী রক্ত হয়েছে জমাট।


বুঝেছে তারা দধীচির হাঁড়

নয়তো ঠুনকো ভঙ্গুর কাঁচ

ক্ষমতায় তার সৌর শক্তি

মজ্জায় আছে আগুনের আঁচ।


পাথার সিঞ্চনে এনেছে মুক্তা

দুর্গম গিরির শৃঙ্গ জয়

তোমার মন্ত্রে দীক্ষিত তারা

অসমসাহসী অকুতোভয়।


জাতবিভেদের দ্বন্দ্ব ভুলেছে

দৃঢ় অবিচল একটাই পথ

বেঁধেছে তাদের বজ্রমুষ্ঠি

আনবেই তারা জয়ের রথ।


তোমার সুরের প্রতিধ্বনি

এনেছে সাহস,এনেছে বল

সুর শক্তিতে বলিয়ান ওই

দুর্দমনীয় তরুণ দল।






কবি আপনি কিন্তু কিছুই দেখেন নি 

 দেবব্রত ভট্টাচার্য্য 

সমাজের নখওয়ালা জান্তব হাত গুলো 
ছুটে আসে জন্মদাত্রী জননী কুলের দিকে 
নখের টানে ছিঁড়ে বে আব্রু করে দিতে চায় 
ভরা রাজসভায় দাঁড়ানো দ্রৌপদীর মত। 
আমার চোখের সামনে তর্জনী তুলে 
ফিসফিস করে বলতে শুনলাম --না, 
কবি -আপনি কিন্তু কিছুই দেখেন নি। 

অসম্ভব লোভী হাতগুলো নিরন্ন মানুষদের 
এক সারিতে বন্দী করে রেখে লুট করে নিল 
পেটের ভাত, দেহের কাপড় আর ঘরের সুখ 
সব শেষে কেড়ে নিলো স্বাধীন ব্যক্তিত্ব। 
কোর্ট টাই পরা ভীষণ সভ্য সমাজ 
লোভী চোখ তুলে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো 
কবি, সত্যিই কিছু দেখেন নি আপনি। 

সকালে ওর দরজায় হাত জড়ো করে দাঁড়ায় 
দুপুরে রঙিন পতাকা নিয়ে মিছিল করে 
বিকেলে চাঁদার রসিদ ছাড়াই রসদ নিয়ে যায় 
আর রাত্রি হলো রক্ত নেশায় জেগে ওঠার সময়।
ওরা লম্বা সুঁড় দিয়ে শোষন করে 
তোমার আমার উষ্ণ জীবন স্রোত 
আঙ্গুল শুধু একটি কথাই বলে -
কবি, আপনি  কিছুই দেখেন নি কিন্তু। 





বিদ্রোহী যখন শতবর্ষে 
অনিন্দিতা শাসমল




করাচির সেনাশিবিরে দাঁড়িয়ে 
একটি আগুনের শিখা।
স্বপ্ন মাখা দুচোখে তার -- 
বিপ্লবের আগুন,বিদ্রোহের আগুন ।

সেই আগুন ধিকিধিকি জ্বলতে জ্বলতে,একসময় দাবানল হয়ে ওঠে ;
রক্তে জাগে উত্তাল তরঙ্গ।
যন্ত্রণাবিদ্ধ কবির ঘুম ভেঙে যায় মাঝরাতে ; ভোররাতে প্রিয় খাতার পাতায়  পেনসিল দিয়ে লেখা 
কবিতাটা শেষ হয়।

সার্থক হয় , হার না মানা নজরুলের মাঝরাতে জেগে ওঠা..
দেশপ্রেমের তুফান ওঠে হাজার হাজার তরুণের মনে ; কারাবন্দী কবির চোখে 
তখন নতুন আলো --
পরাধীন ভারতের মুক্তি।

একশো বছর পরেও সেই 'বিদ্রোহী' কবিতা পড়তে গিয়ে ,আজও বহুদূর থেকে যেন শুনতে পাই ;
আপোষহীন সুভাষের গর্জে ওঠা কন্ঠস্বর--
             বল বীর---
চির       উন্নত মম শির !










কাজী   নজরুল   ইসলাম 
গৌতম   মণ্ডল

লক্ষ    কবিতা   হাজার   গানে
    সম্প্রীতির   এক   বার্তা   আনে
" মোরা  একই   বৃন্তে   দুইটি   কুসুম
     হিন্দু - মুসলমান৷"
সেই   কবিতো   বিদ্রোহী   বীর
     কাজী   নজরুল   ইসলাম৷

সব    ভেদাভেদ   দ্বন্দ্ব    ভুলে
     দৃপ্ত   কণ্ঠে   উচ্চারিলে -
যে   আল্লা   সেই   যীশু    আর
     সেই   ভগবান   রাম ৷
সেই   কবিতো   বিদ্রোহী   বীর
     কাজী   নজরুল    ইসলাম  ৷

স্বদেশ  ভূমির   মুক্তি   তরে
     দুখের   সঙ্গে   পাঞ্জা   লড়ে
ভুলবেনা   কেউ   'ধূমকেতু'   তার
     কালজয়ী   সংগ্রাম ৷
সেই   কবিতো    বিদ্রোহী   বীর
     কাজী   নজরুল   ইসলাম ৷

'বিষের   বাঁশি'    'অগ্নিবীণা'
     ঝংকৃত    হয়   কী   যন্ত্রণা!
প্রতিটি   ছত্রে   অক্ষরে   যার
     অশ্রু - রক্ত - ঘাম!
সেই   কবিতো    বিদ্রোহী   বীর
     কাজী   নজরুল   ইসলাম৷







কলমের কামানকে কুর্ণিশ 
অশোককুমার লাটুয়া 

কিশোর কবিয়াল, যৌবনে সৈনিক
নিজেকে ছাড়া কাউকে করেনি কুর্ণিশ। 
আজন্ম বোহেমিয়ান ' অগ্নিবীণা '।
' বিষের বাঁশি 'তে বিদ্রোহের জ্বলেছে আগুন।
প্রেমে ও যুদ্ধে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর রণতুর্য।
মানুষই অমর
চিতায় ও কবরে পুড়ে যায়, শুয়ে থাকে ঈশ্বর।
ঝাঁকড়া-চুলো দোলাচ্ছে মাথা জাতের নামে বজ্জাতির  বিরুদ্ধে  ক্রমাগত অস্থির।
ঘোমটাখোলা কলমের  কামানে অজস্র শব্দের ফুলকি 
উড়ে গেছে পারাবত হয়ে ভারসাম্যের দুুরন্ত ডানায়
শ্যামাগান, টপ্পা-ঠুংরী-গজলে।

যখন আজ অবসাদ
বুক ঠুকে ঘুরে বেড়ায় অন্যায় অপরাধ
যখন শ্মশানে শকুনবধূটির কুটিল ভ্রূকুটির উল্লাস
অস্ত গেছে চাঁদ
তখন কি ক'রে থাকি ভুলে
মহাপৃথিবীর উপকূলে
রণক্লান্ত নজরুলে।





আমার বন্ধু...দুখু মিঞা
শুভ্রাশ্রী মাইতি

‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু, দুস্তর পারাবার হে'...
গানটা চালিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন আমার দাদু চোখ বন্ধ করে
সন্ধ্যার শিশির চিকচিক করে গড়িয়ে নামত নরম অশ্রু হয়ে...
কাছে গেলেই বলতেন, দুখু মিঞার মতো দেশকে ভালোবাসতে হবে, বুঝলি?

সবটা ভালো করে না বুঝলেও ঘাড় নাড়তাম গভীর বিশ্বাসে।
গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠত এক আশ্চর্য আলোর ব্যথা গানের সুরে
মার জন্য কি ! নাকি দেশের জন্য ! কে জানে ! 
মা আর দেশ কেমন করে যেন এক হয়ে যেত দুখু মিঞার কথায় আর গানে...

সেদিন থেকে কেমন করে যেন দুখু মিঞা, 
নজরুল নয়, বন্ধু হয়েই থেকে গেল প্রাণের কাছে...
আজও কোথাও তার কবিতা বা গান বাজলে বুকের ভেতর বেজে ওঠে ধুলোমাখা লংপ্লেয়িং রেকর্ড
সুরের শাম্পানে হৃদয় আলো করে ফিরে আসে পুরানো বন্ধু দুখু মিঞা 
তার বাঁশিতে ছায়ানট রাগে বাজতে থাকে, বাজতেই থাকে আমার ফেলে আসা ছেলেবেলা...









ছোটো কবিতা - র সূচিপাতা ক্লিক করুন 

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_12.html











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন