লেবেল

রবিবার, ২৩ মে, ২০২১

প্রকাশিত হলো অঙ্কুরীশা পত্রিকায় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী স্মরণে— সেকালের অগ্নিবীণাঃ একালের কণ্ঠস্বর কবি কাজী নজরুল কবিতা সংখ্যা












সেকালের অগ্নিবীণাঃ একালের কণ্ঠস্বর 

কবি কাজী নজরুল কবিতা সংখ্যা 





সূচিপাতা 


১. দীর্ঘ কবিতা

আরণ্যক বসু 
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
শেলী সেনগুপ্তা
তপনজ্যোতি মাজি 
বিকাশ দাস 
আব্দুস সালাম
শুভঙ্কর ঘোষ
বহ্নি শিখা
দীপা কর্মকার
দেবব্রত ভট্টাচার্য্য 
অনিন্দিতা শাসমল 
গৌতম  মণ্ডল 
অশোককুমার লাটুয়া 
শুভ্রাশ্রী মাইতি



https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_23.html


২.ছোটো কবিতা 

জ্যোতির্ময় দাশ 
দীপ মুখোপাধ্যায় 
তৈমুর খান
সৌমিত বসু 
গৌতম হাজরা 
সুস্মেলী দত্ত
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়ের 
অভিজিৎ দত্ত
সুবীর ঘোষ
ফটিক চৌধুরী 
বৈদ্যনাথ ধাড়া
রামকিশোর ভট্টাচার্য 
দীপক বেরা 
বিশ্বজিৎ রায়
দীনেশ সরকার 
অশোক রায় 
অমিত কাশ্যপ 
শ্রাবণী বসু 
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
রঞ্জন ভট্টাচার্য 
শুভময় দাস
স্বরলিপি দাস
অসীম ভুঁইয়া
ভক্ত গোপাল  ভট্টাচার্য 
শেখ সিরাজ 
রাসমনি ব্যানার্জি 
জয়শ্রী সরকার 
তন্দ্রা ভট্টাচার্য 
দুর্গাদাস মিদ্যা
বিমল মণ্ডল 
সুব্রত চৌধুরী 
নন্দিনী মান্না 
প্রদীপ দাস
সামসুজ জামান

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_23.html








এক বিকল্প নাম
জ্যোতির্ময় দাশ

নজরুল মানে এক জৈষ্ঠ্য-ঝঞ্ঝা  আর
        অফুরন্ত যৌবন।

নজরুল মানে এক ধূমকেতু আর
            অনির্বান বিদ্রোহ।

নজরুল মানে এক অহংকার আর
             ঈশ্বরের প্রতিস্পর্ধী।

নজরুল মানে এক ধ্রুবতারা আর
          সম্প্রীতির কান্ডারী।

নজরুল মানে বাগিচায় বুলবুল আর
        শুকনো পাতার নিক্বণ।

নজরুল মানে এক অগ্নিবীণা আর
             নির্বাক ভিসুভিয়াস!




দুখু মিয়া
দীপ মুখোপাধ্যায়

জন্মেছিলেন চুরুলিয়ায় অন্ত্যজ ঘরবাড়ি 
আনমনা পথ খুঁজতে গিয়ে ছাড়েন হাবিলদারি
প্রগতিশীল প্রণোদনায় আমবাঙালির প্রিয়
তাঁর লেখনী প্রতিবাদী বিদ্রোহে তুঙ্গীয়।

সংস্কৃতির ধারক বাহক বিংশ শতাব্দীতে
দেখিয়েছিলেন কালোয়াতি নজরুল সংগীতে।
একাধারে কবি এবং সঙ্গীতজ্ঞ জানি
গানের ভেলায় সুরের খেলায় ভাসতো আকাশবাণী।

বাংলাদেশেও সম্মানিত এই "জাতীয় কবির "
তবুও যেন দুখু মিয়ার দুঃখ ছিল গভীর
শ্যামা মায়ের জন্য গানে ছড়িয়ে ছিলেন ফুল
একাধারে তিনিই ছিলেন ইসলামী বুলবুল।

গানের মানুষ প্রাণের মানুষ কাব্যে খরশান
সাম্যবাদে এক হয়ে যায় হিন্দু-মুসলমান।






এগারো জ্যৈষ্ঠের প্রার্থনা


        তৈমুর খান


 কত ঝড় বয়ে যায় জ্যৈষ্ঠের প্রান্তর জুড়ে

 আমরা বিপন্ন বারবার, ঘরবাড়ি ওড়ে।

 একটুকরো শান্ত চাঁদ জন্মদিনের পতাকা তুলে ধরে

 খুঁজে পাই তোমাকেই আমাদের বিমূঢ় অন্ধকারে।

 এখনো মানব আছে মানুষের ঘরে

 এখনো ফিরে আসো তুমি নিত্য জন্মান্তরে।

 এ মুখে ন্যায়ের বাণী, সত্যের অবিচল ধারা

 এ আত্মা বিদ্রোহ জানে, প্রেমে আত্মহারা।

 সহজ সুন্দর এই হৃদয়ের তাপে

 গোলাপ জন্মায়, তরবারি ছলকে ওঠে খাপে।

 ব্যথার অশ্রু ভেজায়, আগুনে ঝলসায়

 মুখর শ্রাবণ আসে, নীরব জলসায়।

 কাণ্ডারী পথ ভুলে গেলে বারবার

 তুমিই উচ্ছল তারে করো হুঁশিয়ার।

 এই দগ্ধ ভাঙা দেশে দিশেহারা জাতি

 তোমার উদ্দাম স্বপ্নে ফিরুক সদ্গতি।







সংসার তোমার-তাহার

সৌমিত বসু 


তোমায় ভালোবাসি
এটা কোনো বড় কথা নয়।

চোখ খুললেই আকাশে তোমার ছবি
এটাও কিন্তু কোনো বড় কথা নয়।

পৃথিবীতে অনেকে তোমাকে চায়
এটা স্বাভাবিক।এটাও তেমন কিছু নয়।

তুমি যাকে ভালোবাসো সে আমার প্রিয়
সে তোমায় এঁকে রাখে নতুন নতুন নামে।তুমি হাসো।

আমি জেনো যেভাবেই পারি তোমাদের মিলিয়ে দেবোই
এটা কিন্তু সত্যিই অনেক অনেক বড় কথা।






অগ্নিবীণা
গৌতম হাজরা

যখন সন্ধ্যা নামে, তখন বেজে ওঠে তোমার অগ্নিবীণা
যা শুনতে শুনতে মনের যত গ্লানি মুছে গিয়ে
জেগে ওঠে পুনর্বার পারিপার্শ্বিকতায়
রন্ধ্রে তখন স্পন্দন, চেতনায় অপরিসীম আলো
ছুঁতে ছুঁতে আবার ঘুরে দাঁড়াই... 

দেখি, তোমার দীপ্ত আকাশ, শব্দময় রোদ্দুর
আঙুলে জড়াতে জড়াতে যেন চারিদিক একাকার হয়ে যায়  ! 






স্মরণে বরণীয়

সুস্মেলী দত্ত


শুধু কবি নও বিদ্রোহী নও প্রেমিক স্বভাবে মজনু ও নও

তুমি সংগ্রাম তলোয়ার তুমি ইতিহাস জানে দাউদাউ রোখ

দেশ দশ মানে শব্দে বাক্যে তুমি প্রতিবাদ অন্যায় ভুল...

অবিচার যত... লেখনী সতেজ সত্যের খোঁজ সাম্যের খোঁজ


আকাশ বুঝেছে পৃথিবী দেখেছে রক্তঝরানো সেসব সেদিন

নজরুল তুমি রাজাদের রাজা স্মৃতিরা জ্যান্ত সতেজ রঙিন-


তাইতো বেঁধেছি আগুন বীণায় টুকটুকে গানশোনাবোএখনই 

জন্মদিবসে অবোধ কবির কাগজ কলমে তুচ্ছ লেখনী|



নজরুল! নজরুল! 
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 

অভাব এবং অনটনে  ভাবনা   কি হয় বন্দী  ? 
কিংবা যদি বিরুদ্ধতা আঁটে হাজার ফন্দি  ? 
থামতে তুমি  তাও জানো না ,  কোন বাধায় ভয় মানো না 
বরং বলো – এগিয়ে  চলো ,   স্বপ্ন দেখায় মন দিই ।   

সবার চেয়ে মানুষ বড় , তার কোন নেই ধর্ম
মানবতার পক্ষে তোমার তাইতো  সকল কর্ম 
অন্যায় আর অবিচারে  প্রাণ কেঁদেছে বারেবারে 
চিনিয়ে দিতে শয়তানদের ছিঁড়েছ  সব বর্ম । 

অগ্নিবীনায় ঝড় উঠেছে   বিষের বাঁশির সুরে 
প্রতিবাদের বহ্নিশিখা  নিখিল বিশ্ব জুড়ে 
ছড়িয়েছিলে সবার প্রাণে তোমার সকল কাব্যে গানে   
আলোর দিশায় কাটবে নিশা সামনে এবং দূরে ।




কবি নজরুল ইসলাম 
অভিজিৎ দত্ত 

প্রিয় কবি নজরুল 
যেখানে দেখতে অন্যায়, বঞ্চনা, শোষণ 
গরজে উঠতো তোমার কলম  
কুলি,/হিন্দু-মুসলমান/কানডারীর স‍্যসটা 
তুমি ছিলে অসহায় মানুষের দ‍্যসটা ।

তুমি ছিলে মানবতার প্রতীক 
তোমাকে হারিয়ে কস্ট হয়েছে ততোধিক ।
যখন দেখি ধমানধতা,জাতিভেদ 
দেশকে খাচ্ছে খুড়ে, খুড়ে  
মনে হয় কবি কে 
আবার আসা উচিত ফিরে । 



নজরুল এক অগ্নিফসল
সুবীর ঘোষ

আমাদের কৈশোরে আমাদের রাঢ়বাংলা আমাদের কয়লাকুঠি
স্বচ্ছ শ্বাস চাইত আমাদের কাছে । 
নজরুল আসতেন প্রবল বিদ্রোহে ।
রবীন্দ্রনাথের কাছে শিখেছি বিদ্রোহের উপযুক্ত বিশেষণ  ' প্রবল ' ।
প্রবল বিদ্রোহেই আসে প্রেম ।

বিদ্রোহীকে এগিয়ে দেওয়ার কেউ থাকে না ,
আটকে দেবার লোক অনেক ।
নজরুল অসমাপিকা ক্রিয়ার মতো থেকে গেলেন ।
তবু নজরুল এক কালান্তরের নাম ।
নজরুল এক ঝোড়ো যুগান্তের  অগ্নিফসল ।
নজরুল মানে একটা বেপরোয়া যাপন ।
রীতি জেনে রীতি না মানার সাহস রাখতে পারা এক প্রবল বিদ্রোহী ।




নজরুল
ফটিক চৌধুরী

বিদ্রোহে উজ্জ্বল দুটি চোখ, মাথায় ঝাঁকড়া চুল
দুখু মিয়াঁ থেকে আজ তুমি দুই বাংলার নজরুল।
গ্রাম থেকে শহর, পুরুলিয়া থেকে সেই চুরুলিয়া
পঁচিশে মে তুমি কখনো নজরুল কখনো দুখু মিয়াঁ।
গর্জে উঠেছ কখনো, কখনো ভুবন ভরিয়ে দিয়েছ গানে
রবীন্দ্রনাথের পর বেশি করে তোমাকেই সকলে জানে।
সাম্য অসাম্য নিয়ে তোমার ‌লড়াই রয়েছে জারি
"বল বীর উন্নত মম শির'' কখনো ভুলতে পারি !
ভুলতে পারি না এভাবে তোমার নির্বাক প্রয়াণ
বাংলার মাথা ক'রে উন্নত নজরুল তুমি মহিয়ান।






নজরুল স্মরণ

 বৈদ্যনাথ ধাড়া

                       

হে জীবন মহান,
তোমার চিন্তা চেতনা দিয়ে
আমাদের করো জোয়ান।

অসীম সাহসী তুমি,
দুঃখকে বুকে জড়ালে হেসে
জাগালে মাতৃভূমি।

কি দারুণ তোমার লেখা,
বিদ্রোহী মন কেঁপে কেঁপে ওঠে
হোলো না তোমাকে দেখা।

সাম্যের গান গেয়ে,
দুই বাংলা এক হয়ে গেল
কাব্য কবিতা পেয়ে।

বিদ্রোহী কবি তুমি,
করোনা কালে নাক, মুখ ঢেকে
তোমার চরন চুমি।





অসুখ সময়ে

রামকিশোর ভট্টাচার্য


এখনও যারা জেগে আছে, বাঁশি বাজার আগেই

ঘুমিয়ে পড়বে তারা ৷ মন্ত্র পুড়ছে আর এক অচেনা অণুকণা

বদলে দিচ্ছে জীবনের রঙ ৷ মন মরে পড়ে আছে-

কবিতার ভিতরেও ৷ এসময় তুমি আর সেই সন্ধ্যাতারাটি

হাত ধরাধরি জীবনের গন্ধ নিয়ে পাশে এসে দাঁড়ালে ৷

মৃত্যুগন্ডীর বাইরে বৃষ্টি নামবে এবার, শূণ্যতার ভিতরে

পুড়ে যাচ্ছে যারা তাদের কেউ সকালের গান শোনায়নি,

তবু দোলনচাঁপার গন্ধকে আলো ভেবে হাত বাড়াই ...

দেখি পাঠ্যতালিকায় কয়েককলি স্বপ্ন লেগে আছে ৷

গুনগুন করছে আলুথালু প্রেম ৷ এবার অসুখ তাড়াবো

ভেবে নীল আকাশকে বলি বিশ্বাস দাও ৷ সেই সব বিশ্বাস

যাদের পাশে বসিয়ে চুপ করে বসে থাকতেন নজরুল...




বিদ্রোহী চেতনা 
 দীপক বেরা 

তুমি তো নও শুধু কবি---
তুমি চির-সংগ্রামী, বিদ্রোহী চেতনা অবিনাশী
এক হাতে অগ্নিবীণা, অন্য হাতে বিষের বাঁশি
কলমের প্রতিটি অক্ষর সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা
ঝরেছে রক্ত-লেখা, জ্বলেছে দ্রোহের আগুন
গর্জে উঠেছে শিঙ্গা, উদ্যত খড়্গ-কৃপাণ
তুমি শোষণ, অপশাসন, পরাধীনতার বিরুদ্ধে
কারার লৌহ-কপাট ভাঙা এক প্রলয় বিষাণ
কন্ঠে তোমার অশান্ত হৃদয়ের বিদ্রোহী সুর-মূর্ছনা
সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতায় গেয়েছ সাম্যের গান
বেঁধেছ এক রক্ত বুকের তলে এক সে নাড়ির টানে 
প্রেম পড়েছে মনে নীপ-বালিকার ভীরু-শিহরণে। 

সাহিত্যের চিরকালীন নান্দনিকতার আঙিনায় 
ছক-ভাঙা স্বতন্ত্র উচ্চকিত বলিষ্ঠ উচ্চারণের 
এক ধূমকেতুর নাম, 'কাজী নজরুল ইসলাম'
আজ, ফুলের জলসায় নীরব কবি কে জানাই
অন্তরের গভীর শ্রদ্ধা ও শতকোটি বিনম্র প্রণাম! 


আপনার চোখদুটি 
 বিশ্বজিৎ রায়


আপনার মায়াবী চোখদুটি আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে---
প্রেমার্ত  চোখদুটির দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে গেয়ে উঠি ---
" তোমারেই আমি বাসিয়াছি ভালো শতরূপে শতবার" ---
পরক্ষনেই ভাবি এই প্রেমিক মানুষটিই কি লিখেছিলেন
" আমি চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস/
মহা প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন,  আমি ধ্বংস! "


সেযুগে স্বদেশীদের উদবুদ্ধ করতেন তিনি এই ভাবে ----
" কারার ওই লৌহকপাট  ভেঙে ফেল কর রে লোপাট রক্ত-জমাট  শিকল-পূজার পাষাণ-বেদী",
সেই তিনিই  আবার আপ্লুত হয়ে গাইতেন --- 
" খড়ের প্রতিমা পূজিস রে তোরা
মা-কে তো তোরা পূজিস নে"....


এই ঘুণধরা দিনে কেন জানিনা আজ আবার
কন্ঠে উঠে আসছেন তিনি --  " গাহী সাম্যের গান 
 যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান...



আমাদের নজরুল
দীনেশ সরকার

বর্ধমানের চুরুলিয়ায় গরীব চাষীর ঘরে
ফুটেছিলো এক ফুল
দুই বাংলারই ঘরে ঘরে তার ছড়ালো সুবাস
সেই আমাদের নজরুল ।

কলমে তাঁর ঝরতো আগুন, ইংরেজ ভারত ছাড়ো,
কন্ঠে শিকল ভাঙার গান,
কারাগারের লৌহকপাট কর্‌ রে ভেঙে চুরমার,
ছিল তাঁর আহ্বান ।

জাতের নামে বজ্জাতি সব করে তিনি খান্‌ খান্‌
গেয়েছেন সাম্যের গান,
বিদ্রোহী কবি, বিপ্লবী বীর মহান দেশপ্রেমিক,
গজল ছিল তাঁর প্রাণ ।



হে কবি মহান

অশোক রায়


দিব্য তোমার কলম-খানি  

শাণিত হাতিয়ার

ছন্দে কাব্যে কি রাগিনীতে

বাজে জীবনের যত কোলাহল

যত হাসি গান

মূর্ত প্রতীক সীমাহীন ভালবাসার

ছিন্ন করে ভীরুতার আবরণ

ঝলসে ওঠে চুরুলিয়া-বীর

দেশমাতৃকার রক্ষায় সম্মান    

না হিন্দু না মুসলিম তুমি সন্তান

মুক্তির আলো জ্বালিয়েছ ঘরে ঘরে

পিপাসিত হৃদয়ের অভ্যন্তরে, হে মহান।।

                            

বিদ্রোহী কবিকে প্রণাম
অমিত কাশ‍্যপ

আমাদের ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ করে 
রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তী পালিত হত
কবে হত জানা নেই, তবে কালবৈশাখী ঝড় উঠত
পরে জেনেছি, বৈশাখ ও জ‍্যৈষ্ঠ মাস ছিল তখন 

ছোটবেলায় ছোটদের একটা প্রিয় কবিতা ছিল 
'কাঠবেড়ালী কাঠবেড়ালী পেয়ারা তুমি খাও'
ভালো করে উচ্চারণও করতে পারত না তারা 
বড় হয়ে তারাই 'বিদ্রোহী' মুখস্ত করত

দুখু মিঞা থেকে হাবিলদার কবি 
হাবিলদার কবি থেকে কখন হয়ে উঠলেন কাজী নজরুল ইসলাম






'অঞ্জলি লহ মোর'
শ্রাবণী বসু

 তুমি অঞ্জলি দিয়েছিলে সংগীতে
 আমরা বুকে জড়িয়ে রেখেছি 
মখমলি পশমের মতো করে।

তুমি প্রেম,বিরহ, বিদ্রোহ, লিখেছিলে,
মারি রোগ মৃত্যুর অক্ষরে লিখছে
দুঃখ , অশ্রু ,দীর্ঘশ্বাস।

কবি নজরুল, জন্মদিনে তোমাকে
ফুলে  ফুলে  অঞ্জলি দেবো
 পাপড়িগুলি ভিজে অশ্রুর কাজলে
ব্যথার বাদলে। বিচ্ছেদের বেদনায়।

উজাড় করা ভালোবাসা তোমায় দিলাম
তুমি পেয়ালা ভরে পান কোরো ,কবি।





ধ্বংসের কিনারা গাঁথা জীবন ফুল নিয়ে দাঁড়া
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

একটা বড়ো আকাশ দিয়েছিলে
আমরা যা আমাদের মতো করে বুকে ভরেছি
রামধনুর রঙে ভিজিয়ে
সুখ দুঃখ হাসি কান্নারা খেলে বেড়ায় নিরুপদ্রব


একটা বহতা নদী দিয়েছিলে
আমাদের বুকের ভেতর সতত ছলাৎছল
রিষ্টিনাশা পুণ্যতোয়া এগিয়ে চলার সাথী
বাধা ভেঙ্গে চুরে শুধুই এগোনোর ডাক


একটা বিপিন দিয়েছিল তোমার কলম
ক্লোরোফিল সমুদ্রে সবুজ মলিদা বিথার
আমরা তাতে প্রাণের উৎসব করি
দুঃখ বিমোক্ষণ বিতত বিতনু

শীর্ণ দীর্ণ চেহারার বুকে বিদ্রোহ দিয়েছিলে
সন্নিবদ্ধ হয়ে মুষ্টিবদ্ধ মশাল
অধিকার প্রতিষ্ঠার জ্বলন্ত আলেখ্য
নব বিহানের আলোক আলপণা প্রিয়ার তারায়




স্মরণ 
রঞ্জন ভট্টাচার্য


"অগ্নিবীণা"য় শপথ করেও 
মর্যাদা তুমি পাওনি ,
সারা বাঙালির মনের কোনে 
কৈফিয়ৎ তুমি দাওনি।


"বিদ্রোহী" হয়ে বীরের সাজে 
সাহস দিয়েছে মনে ,
সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তুমি
ভাঙ্গনি অকারনে।

"পূজারিণী"তে মায়েরে পূজিলে 
পথহারা হয়ে তুমি, 
তোমাকেই পূজি শত শত বার 
তোমারই পদ চুমি।


 



সমর্পন 
শুভময় দাস 

জেগে ওঠার মতো তীব্র বিষাদ আর কিছু নেই
তা জেনেও জেগে উঠি -দুঃখু মিঞা l
এখন ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ছাড়া কেউ কোনো বিপ্লব করেনা -
কারাগারে কেউ কবিতা লেখে না -সকলে হাসপাতলে যায়l
বাড়িতে সেলুনে ক্যালেন্ডারে আর দুখু দোলেনা -
কিশোরীরা আর কাবেরী নদীজলে কোনো ফুল ভাসায় না l
জাতের নামে বজ্জাতিই এখন টিকে থাকার পাসওয়ার্ড l
সিলিং থেকে দেওয়াল থেকে ঝরে ঝরে পড়ছে সময়l
পলেস্তারা খসে খসে জন্মানো নজরুল উঁকি মারেন -
হাত-পা সিঁটিয়ে বীভৎস সেঁটে থাকা - নজরুল
আমারই মতো বিপন্ন l

আজ তোমার কাছে এ আমার স্বচ্ছ সমর্পন। 









বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
স্বরলিপি দাস

বিদ্রোহের সুরে বাঁধলে তুমি সাম্যবাদের গান, লহ প্রণাম 
তুমি আমাদের 'বিদ্রোহী কবি' কাজী নজরুল ইসলাম।
দুখু মিয়া তুমি পৃথিবীতে এলে  জন্ম চুরুলিয়ায়।
কবিতার ছন্দে শিহরণ জাগালে  শিরা-উপশিরায় তুমি ছিলে তেজস্বী ,ছিল তোমার অসীম স্পর্ধা 
তাইতো তুমি রুদ্রদেহী ,জানাই তোমায় বিনম্র শ্রদ্ধা
তোমার গান ও কবিতা দিয়েছিল বিপ্লবীদের অনুপ্রেরণা
 মানবজাতি তোমার অবদান কোনদিনই ভুলবে না 
ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে গেয়েছিলে তুমি মানবতার জয়গান 
তাই তো তুমি বলেছিলে "মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান" 
আজও আমরা স্মরি তোমায় নজরুল গীতি গেয়ে
 আগামীর হাত ধরে থাকবে তুমি আমাদের হৃদয়ে।
          



ধূমকেতু
অসীম ভুঁইয়া

একটি আশ্চর্য রোদ বহুকাল হল হারিয়ে গেছে
যার ভেতর প্রতিবাদ মানে আলো ও উত্তাপ।

তারপর থেকেই আমরা মুখ গুঁজে সুখ খোঁজা শিখে ফেলেছি
কী বিচিত্র এ মায়া দর্শন!

মাটির অনেক গভীর থেকে উঠে এসেছিল
সেই প্রাণ-কণাটি...
অদ্ভুত কাঠিন্য ভেঙ্গে এক দুর্মদ স্পৃহা
ধ্বংসের ভেতর রোপণ করেছিল পারিজাত বৃক্ষ

আজ নেই নেই কান্না মেশানো স্বর চারিদিকে।

তবুও প্রতীক্ষা! অন্ধকারের নাভি চিরে 
ফুটে উঠবে একটি অজানা ধূমকেতু !





শ্রদ্ধা 
ভক্ত   গোপাল   ভট্টাচার্য 

আকাশে   কিছুতেই   মেঘ  ভাসছে  না 
বজ্রের    গর্জনও    শোনা   যায়   না 
তালা  আঁটা  মুখ,  তুলো   ঠাসা  কান 
নিজের  কাছে  নিজেই  আজ  ভীষণ   দুর্বোধ্য  ।
বর্তমান   ভারতবর্ষ    তোমাকে    শতকোটি     প্রণাম
তোমার   ভারতে   রাস্তা   চলে    এঁকে   বেঁকে   
   চতুর্দিকে    অন্ধকার ।
বিষে    বিষে   ভাসছে   সব   দেহ  নদী  ও  সাগর  জলে 
শেষ   হয়নি  রাজায় রাজায় যুদ্ধ  রক্তের   হোলি 
আসলে,  ওরা   ভীষন   যাদু   যানে 
অজান্তে   ঘিরে  রাখে  তোমার  আমার   জীবন 
এতই   দুর্ভাগা    মুক্তি   নেই...
দুরন্ত   সাহস,   উদ্ধত   উলঙ্গ   দৃষ্টি... 
যেন   তেন   প্রকারণে  ক্ষমতা   দখল 
বিধবার  বুকে  ক্রন্দনশ্বাস হা-হুতাশ  হারিয়ে  বিজয়  কেতন।




নজরুল তোমাকে
শেখ সিরাজ

বাঙালির তুমি অহংকার
বাঙালির তুমি অলঙ্কার
বিপ্লবী কণ্ঠের ঝংকার
তুমি আমাদের বুলবুল
-হে বিদ্রোহী কবি নজরুল। 

তোমার কণ্ঠে যে বিপ্লবী সুর
লাগিয়েছো দোলা বঙ্গ- অন্তঃপুর 
ঘর থেকে নিয়ে গেল সুদূর
ফোটাতে মুক্তির ফুল
হে বিদ্রোহী কবি নজরুল। 

বাঙালির স্মরণে মননে তুমি চিরদিন
তোমার কাব্যের কাছে আমরা বড়ই হীন। 
আজও অমর তোমার বিদ্রোহী বীণ
বাঙালির চিন্তা চেতনার তুমি মূল
হে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল। 




 কাজী নজরুল ইসলাম
রাসমণি ব্যানার্জী

সৃষ্টির উল্লাসে তুমি! ছিলে চিরদিন
তুমি কবি নজরুল! কভু নয় দীন। 
সব্যসাচী বিজয়িনী! মানুষের গান
তোমার লেখায় মুগ্ধ! বাঙালির প্রাণ। 
তুমি ছিল সাইক্লোন! তুমি পথহারা
তোমার কাব্যের রসে! সব দিশেহারা। 
গেয়েছো সাম্যের গান! খেয়ে পোড়া রুটি 
তুমি বীর মুক্তিযোদ্ধা!নাও নি তো ছুটি। 
প্রেমের পূজারী তুমি! লিখেছো যে গানে
তোমার মধুর কণ্ঠ!আজো ভাসে প্রাণে। 
তুমি সেই দুখুমিঁয়া! কবি নজরুল
তুমি সখা প্রাণে বেঁচে! গীতে বুলবুল। 
তরুণ প্রেমিক মনে! আজও আছো তুমি
ভারত ভারতী তুমি! তাই পদে চুমি।



শ্রদ্ধাঞ্জলি
জয়শ্রী সরকার
               
রণক্লান্ত চির-অশান্ত বিদ্রোহী কবি নজরুল ,
এই দুর্দিনে তোমার স্মরণে করিনি তো কোনো ভুল।
কবিতায় তাই জ্বেলে যাই কাজী তোমার জীবনদীপ
তুমি আর নাই, সেলাম জানাই আমরা নেভা প্রদীপ !

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তুমি মেতেছ বারংবার 
সাম্যবাদের বেদীতে দাঁড়িয়ে মানোনি কখনো হার ।
বীরের মতোই যুদ্ধ ক'রেছো রক্ততিলক ভালে 
ভাঙতে চেয়েছো লৌহ কপাট কারার রুদ্ধ শালে!

বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেছো সাম্যের জয়গান
নয় তো ভিন্ন, চির অভিন্ন হিন্দু-মুসলমান । 
চির নির্ভীক , চির বিপ্লবী বীর , বিদ্রোহী কবি কাজী ,
তোমার এই শুভ জন্মদিনেতে মিলেছি সবাই আজি !




মলিন ছবি
দুর্গাদাস মিদ্যা

     মুক্তির তরঙ্গ বাজে তোমার কবিতায়
     তুমি যে বিষের বাঁশি বাজিয়েছ একদিন
     তার ঋণ এখনও হয়নি পরিশোধ। 
    ফাঁকি দিয়ে কাটিয়েছি দিন 
     তাই ফাঁকে পড়ে আছি আজ। 
 আজকের কান্ডারি যত সব
   ভেদাভেদ মত্ত। জাতের নামে বজ্জাতিতে
 বড় বিষময় এই সময়। ক্ষমা করো কবি
  তোমার ছবি আজ বড় মলিন 
          আমাদের চোখে। 






বিদ্রোহী  কবির স্মরণে
তন্দ্রা ভট্টাচার্য 


দুঃখ যার সঙ্গী জীবনে    
নামটি তার দুখু মিয়া                                              
 কাব‍্য গীতেই  মনটি সপে
  আনন্দে  তার পূর্ণ  হিয়া।।

     দমন শোষণ দুর্নীতিতে
     সোচ্চারিত প্রতিবাদে
 শানিত কলমে উঠেছে তার
  বিদ্রোহের কবিতা বার বার।।

আজ  এই শুভ জন্মদিনে
আলোর দিশা দাও গো মোদের
   হানাহানি  ও বিভেদ ভুলে
   কর্ম করি একে অপরের।।




মেঘের ওপরে দেবতা
বিমল মণ্ডল 

কয়েকটি যুগ পেরিয়ে সন্ধ্যায় নদীর পাশে এসে বসি
দেখে যাই নদী থেকে নদীর  মিশে যাওয়া  সঙ্গম
কখনো ধর্মের সাজে বেজে ওঠে ঢেউয়ের তান
যে তান এক'শ  বাইশ বছর আগের একদিন 
উন্মত্ত জনতার থেকে প্রথম জোয়ারে 
টেনে নিয়ে গিয়েছিল  অক্ষর সাগরে 
সেই সাহসী  মন্ত্র কুলুকুলু ধ্বনিতে
আজও বিদ্রোহী  দীর্ঘশ্বাস সারা নদী জুড়ে 
প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে যায় মেঘে

যেখানে প্রতিটি  দিন আর প্রতিটি রাতে নদীটার পাশে 
ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে 
মেঘের ওপরে এক দেবতা।







হৃদের মাঝে দুখু

সুব্রত চৌধুরী 



দুখু আমার স্বপ্ন  মাঝে  আমার ওা জুড়ে 

দুখু আমার  ছড়ার  ছন্দে দ্রোহে  গানের সুরে।

দুখু আমার আকাশ নীলে তুলির আঁচড় রেখায়

দুখু আমার মায়ের ডাকে খোকার গল্ লেখায়।

দুখু আমার দেশের মাটির পথের বাঁকে বাঁকে

দুখু আমার মেহনতির মুষ্টিবদ্ধ হাঁকে।

দুখু আমার মাথার ‘পরে দ্রোহী  বির তাজে

দুখু আমার সোনার বাংলা মুক্তি সেনার সাজে।

দুখু আমার মারনব্যাধি যাক করোনা দূরে

দুখু আমার সুখ পাপিয়া গাইবে নতু সুরে।






"বিদ্রোহী ধুমকেতু"

  নন্দিনী মান্না 


বিদ্রোহির সমাজ জীবনে ভরা  নানা ঘাত- প্রতিঘাত,

মানবাত্মার ভাষারূপে জন্ম নিলেন সাম্যবাদের দূত।

বুক পেতে সয়েছেন সমাজের অশেষ নির্যাতন,

নানা ঘটনা প্রবাহ প্রকাশে মিলে বাস্তব জীবন দর্শন।

দাসত্বের শৃংখলে, আবদ্ধ জাতির শোষণে, বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত,

উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল মুক্তিতেই হয়েছেন শান্ত।

ঔপনিবেশিক শাসনে, প্রতিবাদের সংগ্রামে, তিনিই ধুমকেতু,

শোষকের অত্যাচার ও শোষিতের মধ্যে গড়েছেন অগ্নি সেতু।

কামাল পাশার ধ্যান-ধারণার বিশ্বাসে প্রভাবিত হন,

গোঁড়ামি- কুসংস্কারের প্রতিবাদী শব্দেই লেখনীর নিদর্শন।

কম প্রচলিত ও বিলুপ্তপ্রায় রাগিণীর পরশে সুর রচনা,

বাউণ্ডুলের  আত্মকাহিনী দিয়ে শুরু, লেখনীর প্রকাশনা।







 মানবতার কবি

 প্রদীপ কুমার দাস


বিদ্রোহী কবি লিখে গেলে তুমি,

একই বৃন্তে আমরা দুইটি ফুল,

মানব ইতিহাস গড়ে চলে গেলে,

আজ আমরা করি যত ভুল।

মায়ের রক্তে  চরণ রাঙ্গায়,

আবদ্ধ তারা অবিশ্বাসের অন্ধ গুহায়।

কবে যে  ফিরিবে শুভ-বোধ, 

ওরে সব নির্বোধ---

ভাইয়ের রক্তের হোলি খেলা,

বন্ধ  কররে আজ,

ছিলাম যেমন কবির চোখে,

মিলেমিশে ভাই- ভাই মোরা।







বিদ্রোহী কবি
      সামসুজ জামান

বর্ধমানের চুরুলিয়ার বড়ই  রুক্ষ মাটি।
সেই মাটিতেই জন্মেছিলেন, নামটি দুখু মিয়া।
পরের জন্য কাঁদত সে প্রাণ, উথলে উঠতো হিয়া।
মুখে ছিল দরাজ হাসি, মনটা বড়ই খাঁটি।

"জাতের নামে বজ্জাতি" তাঁর ছিল ঘৃণার বিষয়।
''একই বৃন্তে দুটি কুসুম"-  ছিল  নয়ন মনি।
শিশুর মতো হৃদয় হলেও ' বিদ্রোহী ' তা জানি।
নির্ভীকতাই ছিল যে তার জীবনের আশ্রয়।

মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই এই পৃথিবী জুড়ে
এই ছিল মত। নর-নারীকে দিলেন সমান মান।
লিখে গেলেন অতুলনীয় কবিতা আর গান।
রসিক জনের হৃদয় ভরে সেই গানের সুরে সুরে।

সাহিত্যের এই আকাশ তাকে পায়নি বেশিদিন।
' উন্মাদ ' বলে ভালো তাঁকে বেসেছিলেন রবি।
জলসা ছিল ফুলের তবু নীরব হলেন কবি।

তাঁর কাছে হায়,  রয়ে গেল যে অফুরন্ত ঋণ।







দীর্ঘ কবিতা-র সূচিপাতা ক্লিক করুন 

https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/05/blog-post_23.html



২টি মন্তব্য: